Advertisement
Advertisement
Atiq Ahmed

গরিব টাঙাওয়ালার ছেলেই গ্যাংস্টার, রাজনীতির ছত্রছায়ায় উত্থান ও পতন আতিকের

'এই মাফিয়াকে মাটিতে মিশিয়ে দেব', বিধানসভায় দাঁড়িয়ে হুঙ্কার দিয়েছিলেন যোগী।

Life Story of 5 time MLA and Gangster Atiq Ahmed | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:April 16, 2023 5:53 pm
  • Updated:April 16, 2023 7:47 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একেই হয়তো বলে সমাপতন! যে প্রয়াগরাজের (এলাহাবাদ) ‘বেতাজ বাদশা’ ছিলেন তিনি, শাসন করতেন রাজনীতি থেকে অন্ধকার জগত। সেখানেই আততায়ীর প্রকাশ্যে গুলিতে প্রাণ গেল গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা আতিক আহমেদের (Atiq Ahmed)। ‘অবিশ্বাস্য’ খুনের পর হত্যাকারীরা স্লোগান দেয়, ‘জয় শ্রীরাম’! আতিকের হত্যার ঘটন-সহ উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh) একের পর এক এনকাউন্টারে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে যোগী আদিত্যনাথের (Yogi Adityanath) রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে। তাঁদের বক্তব্য- ‘রামরাজ্যে’ গুলি-বন্দুকের শাসন চলছে যোগীর নেতৃত্বে। তবে আতিক যে বড় অপরাধী ছিলেন, তা নিয়ে বিন্দুমাত্র শংসয় নেই, যতই তাঁর জীবনের দ্বিতীয় পর্বে থাক রকেট রাজনৈতিক উত্থান।

সেটা নতুন ভারত। তার মধ্যেই চিন যুদ্ধের গন্ধ আকাশে বাতাসে। ১৯৬২ সাল। সেই বছরের ১০ আগস্ট জন্ম আতিক আহমেদের। বাবা গরিব টাঙাওয়ালা হাজি ফিরোজ আহমেদ। এলাহাবাদের (বর্তমানে প্রয়াগরাজ) কাছের কাসারি মাসারি গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ। পেটের টানে পরিবর্তীকালে পরিবার নিয়ে চলে আসেন এলাহাবাদের চাকিয়া এলাকায়। প্রবল দারিদ্রের মধ্যে বেড়ে ওঠা আতিকের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল অর্থ উপার্জন। যেভাবে হোক অর্থবান এবং ক্ষমতাশালী হতে হবে তাঁকে। সমাজের লাথি-ঝাঁটা-জুতোর পালটা দিতে চেয়েছিলেন যুবক আতিক।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘আদানি মানেই দুর্নীতি’, বিতর্কের কেন্দ্রভূমি কোলরে দাঁড়িয়েই বিজেপিকে তোপ রাহুলের]

ভাগ্যবদলে ১৭ বছর বয়সে চরম অপরাধে হাতেখড়ি। তৎকালীন এলাহাবাদের খুলদাবাদ থানায় আতিকের নামে প্রথমবার খুনের মামলা রুজু হয়। এরপর অভিযোগের বন্যা। অপহরণ, খুন, ডাকাতি…। অপরাধের দুনিয়ায় নাম কামাতেই চাঁদবাবার নজরে পড়েন আতিক। তৎকালীন এলাহাবাদের ‘বেতাজ বাদশা’ ছিলেন এই চাঁদবাবা। আতিক ও চাঁদ একজোট হতেই এলাহাবাদে মাফিয়ারাজের রমরমা শুরু হয়। কিছুদিন পর চাঁদ খুন হতে প্রয়াগরাজের একচ্ছত্র অধিপতি হন আতিক।

ততদিনে ক্ষমতা এবং অর্থ দুই মিললেও অতিক অনুভব করেছিলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে রাজনীতিতে নামতে হবে। ২৭ বছর বয়সে ১৯৮৯ সালে প্রথমবার এলাহাবাদ পশ্চিম কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ান এবং জেতেন আতিক। পরে ১৯৯১ এবং ১৯৯৩ সালেও নির্দল হিসাবে জেতেন। ১৯৯৬ সালে মুলায়ম সিং যাদবের দল এসপিতে যোগ দেন। এবারও এলাহাবাদ পশ্চিম কেন্দ্রে জয়লাভ করেন। ২০০২ সালে এনডিএ শরিক আপনা দলের হয়ে একই কেন্দ্রে ভোটে জেতেন গ্যাংস্টার নেতা।

২০০৩ সালে আতিকের ‘ঘর বাপসি’। এসপি-র টিকিটে ফুলপুর কেন্দ্রে লোকসভা ভোটে জেতেন। বাধ্য হয়ে এলাহাবাদ পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দেন। তবে উপনির্বাচনে এসপির প্রতীকে নিজের ভাই আশরাফকে দাঁড় করান। এখানেই গোলমাল হয়। আশরাফকে হারিয়ে দেন মায়াবতীর বিএসপির রাজু পাল। এই রাজুকে হত্যার অভিযোগ ওঠে আতিকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সেই খুনের সাক্ষী উমেশ পাল খুন হন। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় গোটা দেশে। যদিও উত্তরপ্রদেশের বর্তমান বিরোধীদের অনেকরই বক্তব্য, রাজু বা উমেশ হত্যা নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘চ্যালেঞ্জ’ করে বড় ভুল করেছিলেন গ্যাংস্টার রাজনীতিবিদ।

[আরও পড়ুন: আতিক হত্যাকাণ্ডের জের, সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য বিশেষ নির্দেশিকা জারির পথে কেন্দ্র]

২০১৯ সালে বারাণসী কেন্দ্র বিজেপির প্রার্থী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিপক্ষে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ান আতিক। জিততে না পারলেও প্রচারের আলো পড়েছিল তাঁর উপরে। সেই আলোই কি অন্ধকার আনল আতিকের জীবনে? উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “এই মাফিয়াকে মাটিতে মিশিয়ে দেব।” সম্প্রতি পুলিশি এনকাউন্টারে ছেলের মৃত্যুর পর করুণ গলায় আতিক বলেন, “সত্যিই মাটিতে মিশে গিয়েছি।” এরপর শনিবার রাত। অজ্ঞাত অততায়ীর গুলিতে ঝাঁঝরা হন আতিক ও তাঁর ভাই আশরফ। প্রকাশ্যে, সাংবাদিকদের সামনে। শেষতক গ্রামে ফিরলেন আতিক, বাস্তবিক মিশে গেলেন মাটিতেও। প্রয়াগরাজের পার্শ্ববর্তী কসারি মসারি গ্রামের কবরখানায় স্থান হল তাঁর নিথর দেহের। এইসঙ্গে শেষ হল উত্তরপ্রদেশের অপরাধ-রাজনীতির একটি অধ্যায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement