সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তড়িঘড়ি জোটের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাম ও কংগ্রেস৷ যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বামেদের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের ইতিহাস, তাদেরই হাত ধরাধরি করে চলার সিদ্ধান্তে তাজ্জব হয়েছিল রাজ্যের রাজনৈতিক মহল৷ প্রশ্ন উঠেছিল জোটের স্থায়িত্ব নিয়েও৷ ভোটে ভরাডুবির পর এবার বামেদের কেন্দ্রীয় কমিটি এই জোটকে একরকম অনৈতিকই আখ্যা দিল৷
‘শত্রুর শত্রু মিত্র’-চিরায়ত এই নীতিকে কাজে লাগিয়েই রাজ্যে ভোট বৈতরণী পার হতে চেয়েছিল বাম৷ তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে জোট নিয়ে ক্ষোভ জন্মেছিল বহু খাঁটি বামপন্থী ও কংগ্রেসিদের মনেই৷ এমনকী বিভিন্ন রাজ্যে যখন বামেদের প্রধান লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে, তখন পশ্চিমবঙ্গের এই জোট কতটা নৈতিক, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিলেন দুই দলের বহু নেতাই৷ ভোটের আগে তাই জোট হলেও, সেই অর্থে দেখা মেলেনি কোনও আহ্বায়কের৷ সূর্যকান্ত মিশ্র প্রায় একা হাতে জোটকে প্রজেক্ট করার চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও রাহুল গান্ধীকে যতই এক মালায় দেখা যাক, বাংলার মানুষের রায় এই তথাকথিত জোটের পক্ষে যায়নি৷ ফলে ভোটে ভরাডুবি হয়েছে বামেদের৷ এমনকী রাজ্যে প্রধান বিরোধী দলের আসনও হারিয়েছে বামেরা৷ উল্টে লাভবান হয়েছে কংগ্রেস৷ দীর্ঘদিন পর রাজ্যে প্রধান বিরোধী দলের পদে এসেছে তারা৷ এমত পরিস্থিতিতে রাজ্যের নীতির সঙ্গে তীব্র মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির৷ পলিটব্যুরোর মিটিংয়ে এ নিয়ে একদফা সমালোচনার মুখে পড়েছিল বামেদের বঙ্গ-ব্রিগেড৷ তা সত্ত্বেও রাজ্যে জোট রাখারই পক্ষপাতী ছিলেন বাংলার বাম নেতারা৷ কিন্তু এবার কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হল, বাংলার বাম নেতাদের এই নীতি পার্টিলাইন বিরুদ্ধ৷ কেন্দ্রীয় কমিটি কোনওভাবেই তা সমর্থন করে না৷ রাজ্যের নেতাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে একমত হওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হল৷
কিন্তু রাজ্যে তৃণমূলের বিরোধী শক্তি হিসেবে বৃহত্তর ঐক্য গঠনেরও প্রস্তাব রাখা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে৷ সে জোটে কংগ্রেস থাকবে কি না, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি৷ এই জায়গাতেই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে৷ একদিকে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত ছাড়ার বার্তা, অন্যদিকে রাজ্যে বৃহত্তর বিরোধী শক্তির পক্ষে সওয়াল- পরস্পরবিরোধী বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা৷ রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই ক্ষেত্রে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতিই নিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি৷ অন্যান্য রাজ্যে বামেদের লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে৷ পশ্চিমবঙ্গের এই জোট যাতে বিভিন্ন রাজ্যে ভুল বার্তা না দেয়, তার জন্যই এরকম দ্বিমুখী নীতি নেওয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যেই এই জোটের বিরোধিতা করে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জগমতী সাঙ্গহওয়াল৷ হরিয়ানা রাজ্য সম্পাদকের স্ত্রীর এই পদক্ষেপকে অশনিসঙ্কেত হিসেবেই নিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি৷ পার্টির অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যাতে মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে, তা নিশ্চিত করতেই রাজ্য বাম নেতাদের কড়া বার্তা দেওয়া হল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷
প্রশ্ন উঠছে, জোট কি তাহলে ভাঙনের মুখে? ভোট পরবর্তী পর্যায়ে এখনও জোটের কার্যকরিতা তেমন চোখে পড়েনি৷ যদিও মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে কংগ্রেসের অবস্থান বিক্ষোভ সূর্যকান্ত মিশ্রকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী৷ কিন্তু তা কি আদৌ সম্ভব হবে? রাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে কংগ্রেস তার কর্মসূচিতে আরও গতি এনেছে৷ এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কমিটির মতের সঙ্গে সাযুজ্য রাখতে হলে অন্তত সাময়িক খানিকটা পিছু হটতে হবে বামেদের৷ রাজ্যে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, এই জোটের ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বামেরাই৷ বামেদের ভবিতব্যে আখেরে সে কথাই যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলতে শুরু করল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.