বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: দু’দশক পার হয়ে গিয়েছে। সেই দিনগুলোর কথা মনে পরলে এখনও আতঙ্কে গা ছমছম করে নুর মহম্মদ, আজনাবি মনসুরি, রাজেন্দ্রভাই পান্ডিয়া ও নুরু ভাইদের। নৃশংস সেই দিনগুলোর (Godhra Riots) পর দু’দশকে অনেক ‘শিক্ষা’ নিয়েছেন। তাই সেই দিন আর ফিরুক চায় না উভয় সম্প্রদায়। রাজনীতি ও ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে শান্তিতে থাকাটাই একমাত্র লক্ষ্য। হিংসা ভুলতে চান নিজেরা। ভুলিয়ে দিতে চান পরবর্তী প্রজন্মকে। হাতে হাত রেখে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবনযুদ্ধের সাক্ষী থাকছেন সকলে। তাই দোরগোড়ায় ভোট এলেও মন ছুঁতে পারেনি তাঁদের। কারণ রাজনৈতিক স্বার্থেই গোধরা (Godhra) পরবর্তী নেতাদের চক্রান্ত জীবন দুর্বিসহ করেছিল বলেই মনে করে নারোড়া পাটিয়ার বাসিন্দারা।
২০০২ সালের মার্চের মাস পয়লা। মিল থেকে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে দু’দন্ড জিরিয়ে নেওয়ার তাগিদে বাড়ির দিকে পা বাড়িয়েছিলেন নুর মহম্মদ। কিন্তু মহল্লায় ঢোকা হয়নি। দূর থেকেই চোখে পড়ে বিভৎসতা। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে উন্মত্ত হাজার হাজার যুবকের আস্ফালন দেখেছিলেন দূর থেকেই। কিন্তু স্ত্রী ও সন্তানদের কথা মনে করতেই প্রাণ হাতে মহল্লার দিকে ছুটে যান। কোনওক্রমে বাড়ি পৌঁছে দেখেন দাউদাউ করে ঘর জ্বলছে। পরনের জামা কাপড়ও আগুনের গ্রাসে। ফের প্রাণ হাতে ছুট। আবার আজনবি মনসুরি নিজে বাঁচলেও রক্ষা করতে পারেননি ভাইয়ের স্ত্রীকে। বাকিদের নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন ভিনরাজ্যে আত্মীয়র বাড়িতে। হোমগার্ডের কাজ ছেড়ে এখন নুরানি মসজিদের সামনে চায়ের দোকান খুলে বসেছেন। আর নাতি নাতনিদের পাঠিয়েছেন লক্ষ্ণৌতে। সেখানেই বড় হয়েছে। আসলে সেদিনগুলোর ঘটনা ভুলিয়ে দিতেই নাতি নাতনিদের আর নারোড়া পাটিয়ায় ফিরিয়ে আনেননি।
তাই এখন সূর্যের আলো ফুটলেই একসঙ্গে কাজে যান, নুর মহম্মদ ও রাজেন্দ্ররা। উৎসব ও পরব পালন করেন একান্নবর্তী পরিবারের মতো। রাজনীতিকরা এলে মুখ ঘুরিয়ে বার্তাও দেন। তাই ভোট এলেও হেলদোল নেই নাড়োরা পাটিয়ায়। কোনও দলের প্রচার নেই। নেই ভোট প্রত্যাশীদের আনাগোনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.