বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য , শিলিগুড়ি: বর্ষার শুরুতে ভূমিধসে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে সিকিমের লাচুংয়ে অন্তত দেড় হাজার পর্যটক আটকে। একাধিক জায়গায় রাস্তা ভেঙে চুরমার হওয়ায় শনিবার থেকে চুংথাং-লাচুং সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখেছে সিকিম প্রশাসন। কবে রাস্তা খুলবে স্পষ্ট নয়। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ফের নোটিস জারি না করা পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ থাকবে। কারণ, আজ, রবিবার সিকিমে অতিভারী বর্ষণের ‘কমলা’ সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় সেদিকে তাকিয়ে প্রশাসনের কর্তারা। তেমন হলে বাতিল হতে পারে পকিয়ং থেকে উড়ান পরিষেবাও। জানা গিয়েছে, লাচুংয়ে আটকে যাওয়া পর্যটকরা ভালো আছেন। তাদের সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে সেখানকার হোটেলে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে লাচুং ভ্রমণের পারমিট দেওয়া বন্ধ রেখেছে সিকিম প্রশাসন।
এদিকে উত্তরেও সমানে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে মৌসুমী বায়ু। রবিবার সিকিম এবং উত্তরের পাহাড়-সমতলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত (Heavy Rain)ও ঝড়ের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। সিকিমে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে উদ্বেগ বাড়ছে তিস্তার জলস্ফীতি ঘিরে। শনিবার বিকেল থেকে পাহাড়ি কন্যার জলস্তর বেড়েছে গজলডোবার পরে দোমহনি এলাকায়। সিকিমের মাঝিতার গ্রামে খানিখোলা ঝোরা ঝাপিয়ে পড়ে বাইক, স্কুটার ভাসিয়ে নিয়েছে। সেতু দিয়ে যাতায়াত অসম্ভব হয়েছে। নির্মীয়মাণ রেল প্রকল্পের ক্যানেল নদীর চেহারা নিয়েছে।এছাড়াও তো রয়েছে দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ে ধসের (Landslide) ভ্রুকুটি।
এবার গ্রীষ্মের মতোই কি বর্ষা মারকাটারি ব্যাটিংয়ের অপেক্ষায়? শুক্রবার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু উত্তরবঙ্গ ও সিকিমে (Sikkim) পৌঁছতে তেমনই আভাস মিলতে শুরু করেছে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে ধসে বিধ্বস্ত হয়েছে উত্তর সিকিমের গ্যাংটক-মংগন এবং চুংথাং-লাচুং সড়ক। ঝুঁকি না নিয়ে ওই রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করেছে সেখানকার রাজ্য প্রশাসন। উত্তর সিকিমের আরও অনেক সড়ক ভেঙে চুরমার হয়েছে। এদিকে উত্তরেও সমানে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে মৌসুমী বায়ু। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিম কেন্দ্রের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, “সিকিম সহ উত্তরবঙ্গের পাহাড়-সমতলে ঝড়বৃষ্টি চলবে। ভারী বর্ষণের জন্য পাহাড়ে ধসের সতর্কতা রয়েছে। তাই যান চলাচলের ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে।”
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে উত্তর সিকিমে মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গনে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৫৪ মিলিমিটার। খুব বেশি না হলেও সেখানে ভোগান্তি বেড়েছে। একের পর এক ভূমিধসের কারণে উত্তর সিকিম (North Sikkim)মহাসড়কে স্বাভাবিক যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। তাশি ভিউপয়েন্ট হয়ে গ্যাংটক-মঙ্গন সড়ক ধসের কাদা, বালি-পাথরে তলিয়েছে। সেখানে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে চুংথাং থেকে লাচুং সড়কের মাল্টিন ও বিওপি এলাকা একাধিক জায়গায় ধসে অবরুদ্ধ হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ঝর্ণার মতো পাহাড় থেকে জলের স্রোত ঝাপিয়ে পাড়ে রাস্তা ভেঙে চুরমার করেছে। ওই রাস্তাতেও যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সিকিম প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হয়েছে। এখানেই আটকেছে পর্যটক বোঝাই ২২০টি গাড়ি। সেখানে পর্যটক রয়েছে প্রায় দেড় হাজার।
সিকিম পর্যটন দপ্তরের উপদেষ্টা রাজ বসু বলেন, “আটকে পড়া পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। প্রত্যেকে সুরক্ষিত রয়েছে। তাদের লাচুংয়ের হোটেলে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।” শনিবার পর্যটকদের নতুন করে লাচুং ভ্রমণের পারমিট দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিন দিনভর সেখানকার আকাশ ছিল মেঘলা। ছিলো কুয়াশা। খারাপ আবহাওয়ার জন্য পাকিয়ং-কলকাতা, কলকাতা-পাকিয়ং এবং পাকিয়ং-দিল্লি বিমান চালু রাখা নিয়েও অনিশ্চয়তা বাড়ছে। ওই কারণে যাত্রীদের বিমান যাবে কিনা জানতে ওয়েবসাইটে নজর রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ, রবিবার সিকিমে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের ‘কমলা’ সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। আবহাওয়ার অবনতি হলে উড়ান পরিষেবা বিঘ্নিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে পর্যটকদের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.