সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত বছরের অগাস্টে ৩৭০ ধারা রদ করে কাশ্মীর উপত্যকাকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে দিয়েছিল দ্বিতীয় মোদি সরকার – জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ। এই বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়া পর থেকে লাদাখের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলেন অনেকে। বহির্জগতের অবাধ বিচরণে নষ্ট হবে না তো লাদাখের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য? এই সংশয় উঁকি দিচ্ছিল। তবে তা নিরসন করে দিল কেন্দ্র। শুধু কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলই নয়, লাদাখকে ভারতীয় সংবিধানের ২৪৪ ধারা মেনে ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
৩৭০ ধারার বর্ম গায়ে থাকায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর যে লাদাখকে এতদিন স্পর্শ করা যায়নি, তা তো এখন উন্মুক্ত। ফলে পাহাড়ের কোলে বড় বড় শিল্প গড়তে কোনও সমস্যা নেই আর। লাদাখবাসী ভালই বুঝতে পারছিলেন যে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর থেকে লাদাখের পাহাড় ও জমির নিচে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে থাকা খনিজ সম্পদের দিকে নজর পড়েছে বড় বড় শিল্পপতিদের।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বীকৃতি পেয়ে জম্মু-কাশ্মীর থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দ যেমন ছিল লাদাখবাসীর মধ্যে, তেমনই ছিল ৩৭০ ধারা উঠে যাওয়ায় স্থানীয় জমির, বলা ভাল, স্থানীয় সম্পদের বিক্রি হয়ে যাওয়ার ভয়। তবে সেই ভয় কাটল অবশেষে। যাঁর পোস্ট করা ভিডিও-এর প্রভাবে হাতেনাতে ফল মিলল, তিনি সোনম ওয়াংচুক, লাদাখের সাংসদ। লাদাখ অঞ্চলে ‘শিক্ষা বিপ্লব’ এনে প্রচারে আসেন সোনম।
এই সৌন্দর্য রক্ষার জন্য গত ২৪ জানুয়ারি উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রক লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব পাঠিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। লাদাখকে রক্ষা করার চিন্তা থেকেই গত বছরের শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে একটি ফেসবুক লাইভ করেন সোনম। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বোঝান, কীভাবে বড় শিল্পের থেকেও স্বচ্ছ পরিবেশ বেশি পছন্দ লাদাখের মানুষের এবং তা রক্ষা করার আরজি জানান। এই কারণে লাদাখকে বাঁচাতে ভারতীয় সংবিধানের ২৪৪ ধারার ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্তি করার আবেদন করেন সোনম।
এই ভিডিও দেখে সোনমকে পালটা চিঠি লেখেন উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা। জানান, লাদাখকে ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব ইতিমধ্যেই চলে গিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। জবাবে ধন্যবাদ-সহ সোনম জানিয়েছেন, “লাদাখের জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অশেষ ধন্যবাদ। আমরা জানতাম যে ওঁরা দেশের মুকুট, লাদাখের ক্ষতি হতে দেবেন না। দেশের পাঁচটি যুদ্ধই (১৯৪৮, ১৯৬২, ১৯৬৫, ১৯৭২ ও ১৯৯৯)লাদাখের মাটিতে হয়েছিল। সেই সময় স্থানীয়রা যেভাবে সেনাকে সাহায্য করেছিল, তা ইতিহাস। আমরা এভাবেই দেশকে ভালবাসি। আপনাদের সাহায্যে তা আরও দৃঢ় হবে।”
এর আগে উত্তরপূর্বের ৭ টি রাজ্য ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। লাদাখও তা অন্তর্ভুক্তি হলে, বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে লাদাখের তৈরি বোর্ডের হাতেই। সেক্ষেত্রে লাদাখের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কমবে। তাতে যতটা খুশি হবেন লাদাখবাসী, তার থেকে কোনও অংশেই কম হবেন না ভ্রমণপিপাসুর দল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.