অর্ণব আইচ: সাতসকালে দিল্লির রাস্তায় দুষ্কৃতীকে ধরতে কলকাতা পুলিশের তাড়া। অবিকল যেন কোনও সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্য। অটোয় নিয়ে দুরন্ত গতিতে পালাচ্ছে দুষ্কৃতী আর পিছনে আরেকটি অটোয় পুলিশ। নির্দিষ্ট দূরত্বে পৌঁছে অটো থেকে নেমে দুষ্কৃতী গা ঢাকা দিলেও, পুলিশ খুঁজে খুঁজে ঠিক জালে আনল তাকে। এভাবেই কলকাতা পুলিশের নাগালে এল এটিএম জালিয়াতি কাণ্ডের মূল পাণ্ডা রোমানিয়ান নাগরিক।
ধৃতের নাম সিলভিউ ফ্লোরিন স্পিরিদন, বয়স ২৮ বছর। আদতে রোমানিয়ার নাগরিক। এদেশে এসে জাঁকিয়ে বসে এটিএম জালিয়াতির কারবার শুরু করেছিল। স্কিমার-সহ একাধিক প্রযুক্তির সাহায্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এটিএম থেকে টাকা সাফ করার পর সে কলকাতাতেও ঘাঁটি গাড়ে। সম্প্রতি যাদবপুর-সহ একাধিক এলাকায় এটিএম থেকে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিদেশিদের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। তার ভিত্তিতেই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্তে নামে। শহরজুড়ে নজরদারির পাশপাশি ভিনরাজ্যের পুলিশের সঙ্গেও সমন্বয় করে কাজ শুরু হয়।
সেই কাজের অংশ হিসেবে দিল্লির রাস্তায় নজরদারি শুরু করেন গোয়েন্দারা। সোমবার সকালে তখন প্রায় ৭ টা। সফদরজং এলাকা তখনও কুয়াশায় ঢাকা। হঠাৎই গোয়েন্দাদের নজরে পড়ে, এক বিদেশি একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের এটিএম কাউন্টারের ভিতরে ঢুকে টাকা তোলার চেষ্টা করছেন। ওই ব্যক্তিকে তাঁদের সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাঁর ছবি তুলতে থাকেন। তখন দুষ্কৃতীও বুঝতে পারে যে তার উপর পুলিশের নজরদারি চলছে। তখনই এটিএম কাউন্টার থেকে বেরিয়ে সে একটি অটোয় উঠে পালায়।
সফদরজং এলাকায় ঘটনাস্থলের একটু দূরেই ছিল পুলিশের গাড়ি। কিন্তু সেই গাড়িতে না উঠে দুষ্কৃতীকে ধরতে সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি অটোয় উঠে আগের অটোটিকে তাড়া করা শুরু করেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা। আগের অটো যেদিকে যাচ্ছে, ঠিক দিকনির্ণয় করে গোয়েন্দাদের গাড়ি সেটিকে তাড়া করতে থাকে। রাজধানীর রাস্তায় তখন একেবারে যাকে বলে চোর-পুলিশ খেলা। যেন কোনও সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্যের শুটিং। এভাবে তাঁরা গ্রেটার কৈলাশ এলাকায় পৌঁছে যান।
সেখানে অটো থেকে নেমে গা ঢাকা দেয় ওই বিদেশি। গোয়েন্দারাও হাল ছাড়ার পাত্র নন। গ্রেটার কৈলাসের ঘিঞ্জি এলাকায় এবার বাড়ি বাড়ি ঢুকে তল্লাশি শুরু করেন তাঁরা। খোঁজ নেন কোথায় রোমানিয়ান নাগরিকরা থাকেন। শেষপর্যন্ত একটি ফ্ল্যাট থেকে ধরা হয় সিলভিউ ফ্লোরিন স্পিরিদনকে। সে-ই এটিএম জালিয়াতি চক্রের মূল পাণ্ডা। ওই ফ্ল্যাটে তার সঙ্গে আরও দুই সঙ্গী ছিল। তবে পুলিশ তাদের নাগাল পাওয়ার আগেই চম্পট দিয়েছে। ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে স্কিমিংয়ের সরঞ্জাম, কিছু চিপ, ব্যাটারি, পিন হোল ক্যামেরা। পুলিশ সূত্রে খবর, হাতেনাতে ধরা পড়ে অপরাধের কথা স্বীকার করেছে বছর আঠাশের রোমানিয়ার যুবক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.