সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পেট্রল-ডিজেলের পথে এবার কেরোসিনও (kerosene oil )। ভরতুকি উঠিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবার কেরোসিনের উপর থেকেও। রাতারাতি নয়। অল্প অল্প করে দাম বাড়িয়ে এবার পুরোপুরি ভরতুকি উঠে যাচ্ছে আমআদমির নিত্যদিনের এই জ্বালানির উপর থেকেও।
ধাপে ধাপে দাম বাড়িয়ে পেট্রল-ডিজেলের উপর থেকে যেভাবে কয়েক বছর আগে পুরোপুরি ভরতুকি তুলে নেওয়া হয়েছে সেই একইভাবে কেরোসিন থেকে ভরতুকি তুলে নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারের খোলা দামেই পেট্রল, ডিজেল কিনতে হয় দেশের মানুষকে। বর্তমানে গণবণ্টন ব্যবস্থায় দেশের সাধারণ মানুষকে কেরোসিনের জোগান দেওয়া হয়। রান্নার জ্বালানি এবং আলোর জন্য প্রান্তিক অঞ্চলেই যার প্রধানত ব্যবহার। এবার দরিদ্রের সেই জ্বালানির উপর থেকেও পুরোপুরি ভরতুকি প্রত্যাহার করা হল। অল্প হারে দাম বৃদ্ধি করে ১ এপ্রিল তা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে। সোমবার বাজেট প্রস্তাব পেশ করার সময় এপ্রিল থেকে শুরু হতে চলা আগামী অর্থবর্ষে কেরোসিনে ভরতুকির জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ রাখেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
মার্চে শেষ হতে চলা চলতি অর্থবর্ষে কেরোসিন বাবদ সরকারের তরফে ২৬৭৭.৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। আগের বছর এই খাতে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ছিল ৪০৫৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ইতিমধ্যেই কেরোসিনের উপর ভরতুকির পরিমাণ বেশ কিছুটা কমেছে প্রতি অর্থবর্ষে। এবার তা শূন্য হতে চলেছে।
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লাইসেন্সপ্রাপ্ত কেরোসিন ডিলাররা কমবেশি ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা লিটার দরে কেরোসিন বিক্রি করে থাকেন। সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে খবর, ২০১৬ সালেই রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন খুচরো জ্বালানি বিক্রেতাদের প্রতি পনেরো দিনে ২৫ পয়সা হারে কেরোসিনের দাম বৃদ্ধি করে ভরতুকির পরিমাণ ক্রমেই কমিয়ে আনার জন্য সবুজ সংকেত দেয়। ফলে গত চার বছরে লিটার প্রতি ১৫.০২ টাকা দাম থেকে ২৩.৮০ টাকা বেড়ে বর্তমানে কেরোসিনের দাম ৩৬ টাকার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল রেখে গণবণ্টন ব্যবস্থা প্রতি মাসে কেরোসিনের দাম নির্ধারণ করে। সেই হিসাবে গত মে মাসে কেরোসিনের দাম ১৩.৯৬ টাকায় চলে যায়। কিন্তু তার পর থেকে তা ফের দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মাসেও কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ৩.৮৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পেট্রোল ডিজেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিরোধীরা সংসদে সরব হলেও কেরোসিনের দাম নিয়ে কেউই কথা বলেনি। ফলে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের প্রয়োজনের এই জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি চোখের আড়ালেই রয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা প্রকল্পের অধীনে আট কোটি দরিদ্রকে রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার পর কেরোসিনের প্রয়োজনীয়তা ও চাহিদা দরিদ্রদের মধ্যেও কিছুটা হলেও কমেছে। গত এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর এই সময়ের মধ্যে পেট্রলিয়াম মন্ত্রকের দেওয়া তথ্যের হিসাবে সারা দেশে কেরোসিনের চাহিদা কমেছে ২৮.৪ শতাংশ। অন্ধ্রপ্রদেশ, দিল্লি, হরিয়ানা এবং পাঞ্জাব রাজ্যের বাসিন্দাদের জন্য কেরোসিন বিনামূল্যে জোগান দেয়।
উল্টোদিকে, গুজরাত, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্র গ্রাহকদের ঐচ্ছিকভাবে বরাদ্দ কেরোসিন ছেড়ে দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে রাজ্যের মানুষের কাছে। ২০১০ সালে পেট্রল ও ২০১৪ সালে ডিজেলের উপর থেকে ভরতুকি প্রত্যাহার করা হয়। এতদিন রান্নার গ্যাস ও কেরোসিনে ভরতুকি বজায় ছিল। আগামী অর্থবর্ষে রান্নার গ্যাসের জন্য ১২ হাজার ৪৮০ কোটির ভরতুকি রাখা হয়েছে, যা গত তিন অর্থবর্ষে কমেছে বেশ কিছুটা। সম্ভবত তালিকার শেষ নামটিও কিছুদিনের মধ্যেই যুক্ত হবে ভরতুকিবিহীনের দলে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.