সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তির প্লাজমা (Plasma) দিয়ে অসুস্থ ব্যক্তিকে সারিয়ে তোলার প্রাচীন কৌশল প্রয়োগ করোনা চিকিৎসায় দিশা দেখাতে পারে। এমনই আশার কথা শুনিয়েছে বিশ্বের তাবড় চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের একাংশ। করোনা চিকিৎসায় এবার সেই পথে হাঁটার অনুমোদন দিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চও (ICMR)। আর তারপরই পরীক্ষামূলকভাবে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগে করোনা রোগীকে সুস্থ করে তোলার কাজে নামছে কেরল। শ্রী চিত্র তিরুনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে দেশের প্রথম এই থেরাপিতে চিকিৎসা শুরু হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও রাজ্যের আরও ৫টি হাসপাতাল ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে একই পদ্ধতি প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে পিনারাই বিজয়ন সরকার।
এর আগেও একাধিক রোগ মোকাবিলায় নিজেদের কাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যটি। করোনার থাবা এখানে প্রথম পড়তেই অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে তা মোকাবিলায় আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে রাজ্য প্রশাসন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে সমস্ত খুঁটিনাটি খবর রাখছেন। আবারও নতুন চিকিৎসা পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সবার আগে এগিয়ে এসে কেরল বোঝাল, যে কোনও কাজ দ্রুততার সঙ্গে করে ফেলাই তাদের অভ্যাস। তাতে এতটুকুও সময় নষ্ট করতে নারাজ প্রশাসন। আলাপ্পুঝা, ত্রিশূর, কান্নুর, কোঝিকোড়, এর্নাকুলাম – এই পাঁচ জায়গার মেডিক্যাল কলেজে কাজ হবে। নেতৃত্বে থাকবেন কোঝিকোড়ের COVID ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞরা।
প্লাজমা থেরাপি কীভাবে কাজ করবে? তা বুঝিয়ে বলার আগে বিশিষ্ট চিকিৎসক আশা কিশোর জানালেন, এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগের জন্য ICMR-এর অনুমোদন মিলেছে। এরপর তাঁর ব্যাখ্যা, “COVID-19 থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা কোনও ব্যক্তির প্লাজমা অর্থাৎ রক্তরস গুরুতর অসুস্থদের উপর শরীরে প্রয়োগ করা হবে। কারণ, তা শক্তিশালী অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ বলে মনে করা হচ্ছে। তাই সেই প্লাজমা নিয়ে অসুস্থরা দ্রুত সেরে উঠতে পারেন। কারণ, জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁদের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।” যদিও আরেকাংশের মতে, “আমরা জানি না যে এই থেরাপি অসুস্থদের শরীরে আদৌ কতটা কার্যকরী হবে, অথবা আদৌ হবে কি না। তাই পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করা হচ্ছে। সাফল্যের হার দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” এর জন্য আপাতত ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
পদ্ধতি সেই একই। ডক্টর আশা কিশোর জানালেন, “প্রথমে সুস্থ রোগীর রক্ত নিয়ে সেখান থেকে প্লাজমা অংশটি পৃথক করা হয়। তারপর তা ট্রান্সফিউশন পদ্ধতিতে অসুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করানো হবে। কতটা কাজ করছে, তার জন্য সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখার প্রয়োজন আছে।” এই পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য সকলের কাছে তাঁরা স্বেচ্ছায় রক্তদানের আবেদন রেখেছেন। রক্ত নেওয়ার আগে অবশ্য দাতার অন্তত ৩ বার সোয়াব টেস্ট হবে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে তিনি একেবারে সুস্থ। চিকিৎসকের আশা, সমস্ত প্রস্তুতি শেষ হয়ে গেলে আগামী সপ্তাহেই প্লাজমা থেরাপি চালু করা যাবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.