শংকর ভট্টাচার্য: কেরলের বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্টে এবার চার নতুন দল। তিনটি দলকে নিয়ে বিতর্ক নেই। কিন্তু চার নম্বর দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লিগের অন্তর্ভুক্তি নিয়েই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। একটি ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক দলকে কেন বাম জোটে নেওয়া হবে? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ওই রাজ্যের বামপন্থীরাই।
[ইঁদুরে খেয়েছে হাজার লিটার মদ, আজব সাফাই পুলিশের]
ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ থেকে ১৯৮৪-তে বেরিয়ে এসেছিলেন ইব্রাহিম সুলেইমান সাইট। তৈরি করেছিলেন ইন্ডিয়ান লিগ। সবুজ পতাকায় বাঁকা চাঁদ অঙ্কিত এই দলের সঙ্গে কাস্তে-হাতুড়ি-তারা শোভিত লাল পতাকার মেলবন্ধন নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। বুধবার রাজ্য বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে এম পি বীরেন্দ্রকুমারের লোকতান্ত্রিক জনতা দল, ফ্রান্সিস জর্জের নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক কেরল কংগ্রেস বা আর বালকৃষ্ণ পিল্লাইয়ের নেতৃত্বাধীন কেরল কংগ্রেস (বি) কে নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। এই দলগুলি আগে কখনও না কখনও বামেদের সঙ্গে থেকেছে। কখনও আবার ফিরে গিয়েছে বিরোধী কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ জোটে। রাজ্য বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা তথা দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ভি এস অচ্যুতানন্দন। আট্টিঙ্গালে এক অনুষ্ঠানে তিনি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লিগ আর কেরল কংগ্রেস (বি) এর অন্তর্ভুক্তির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “মহিলা বিরোধী, কুসংস্কারে বিশ্বাসী, সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতা সম্পন্ন দুটি দল বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের পক্ষ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।” এর মধ্যে কেরল কংগ্রেস (বি) সবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশের বিরোধিতা করেছে। তাই ওই দলকে কুংসস্কারপন্থী আখ্যা দিয়েছেন ভিএস। আর ন্যাশনাল লিগকে সাম্প্রদায়িক দল হিসাবে চিহ্নিত করেছেন তিনি। তবে দুটি দলের নাম উল্লেখ করেননি ভি এস।
কিন্তু দীর্ঘদিন পর একটি মুসলিম মৌলবাদী দলকে জোটে নেওয়ার পিছনে যুক্তি কী বামেদের? রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, সবরীমালা বিতর্কের পর হিন্দু ভোট অনেকটাই বিজেপির দিকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় সংখ্যালঘু ভোট বাড়ানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বামেদের। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন খ্রিস্টান গির্জার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছে সিপিএম নেতৃত্ব। ফ্রান্সিস জর্জের ডেমোক্র্যাটিক কেরল কংগ্রেসও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের দল হিসাবে পরিচিত। কোট্টায়াম, আলাপুড়া বা এর্নাকুলাম জেলায় বেশ কিছুটা সুবিধা পাওয়ার আশা করছে সিপিএম। কিন্তু কোনওভাবেই উত্তর কেরল বা মালাবারের মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলিতে সুবিধা করতে পাচ্ছিল না বামেরা। এবার ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লিগের সঙ্গে হাত মেলানোর পর কোঝিকোড়, মালাপ্পুরম বা কাসারগোড় জেলার সংখ্যালঘু ভোটে থাবা বসানো সম্ভব হতে পারে। ওই এলাকায় ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগের আধিপত্য। তারা রয়েছে কংগ্রেসের সঙ্গে। ফলে ভোট ভাগ করাই মূল লক্ষ্য বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
[পড়ুয়াদের খুন করার পরামর্শ দিয়ে বিতর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য]
তবে এই আইএনএলকে মুসলিম সাম্প্রদায়িক দল হিসাবে দেখতে নারাজ সিপিএম। রাজ্য বাম ও গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রাক্তন আহ্বায়ক তথা সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ভাইকম বিশ্বন বৃহস্পতিবার তিরুবনন্তপুরম থেকে ফোনে জানালেন, “ওরা এক সময়ে মুসলিম লিগে ছিল। কিন্তু তারপর ওই দল ছেড়ে পৃথক পার্টি তৈরি করেছে। ওরা সাম্প্রদায়িক দল নয়, বরং অনেক বেশি গণতান্ত্রিক। তাই আমাদের ফ্রন্টে নিতে কোনও অসুবিধা হয়নি।” কিন্তু দলের পতাকায় তো ইসলামিক সংগঠনের মতোই? ভাইকম বলেন, “ওদের পার্টির সংবিধানে তো ইসলামিক বিষয় নেই। বরং পুরোটাই দেশের ধর্ম নিরপেক্ষতা রক্ষা করার অঙ্গীকার। কোনও বিশেষ ধর্মের কথা বলা নেই।” কিন্তু সব অন্য কোনও ধর্মের নেতা তো সংগঠনে নেই। কোনও কর্মীও নেই অন্য ধর্মের। জাতীয় সভাপতি সুলেমান উত্তরপ্রদেশের। কেরলের রাজ্য সভাপতি আবদুল ওয়াহাব। তাঁর নেতৃত্বেও অন্য কোনও ধর্মের সদস্য সংগঠনে এসেছেন বলে জানা যায়নি। যদিও তাঁরা বলছেন, কেবল সংখ্যালঘু নয়, হিন্দু দলিতরাও তাঁদের টার্গেট। তাঁদের পাশে দাঁড়াতে চান।
এই বিষয়ে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক, অধ্যাপক আবদুর রজ্জাক কোঝিকোড় থেকে ফোনে বলেন, “এবার মালাবার অঞ্চলে একচেটিয়া মুসলিম লিগ ভোট করাতে পারবে না। বাম এবং ন্যাশনাল লিগের মেলবন্ধনের ফলে সমীকরণ বদলে যেতে পারে।” সেই সমীকরণের বদলই এখন লক্ষ্য মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের। পাঁচ বছর পর পালাবদলের ইতিহাস বদলে দিতে চাইছেন তিনি। তাই বামফ্রন্টের রাজনৈতিক বিন্যাসেও পরিবর্তন। যদিও বামপন্থীদের মধ্যে অনেকেই ক্ষমতার জন্য এই ভোল বদল মেনে নিতে পারছেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.