সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “বিয়ে অপেক্ষা করতে পারে, কিন্তু আমার রোগিরা যাঁরা আইসোলেশন ওয়ার্ডে মারণ ভাইরাস শরীরে নিয়ে প্রত্যেক মুহূর্তে যুঝে চলেছেন, তাঁদের আমি অপেক্ষা করিয়ে রাখতে পারি না!”, মন্তব্য বছর তেইশের এক চিকিৎসকের। বিয়ে পিছনোর কারণ হিসেবে ঠিক এই কথাগুলোই গুরুজনদের মুখের ওপর বলেছিলেন ডাক্তার শিফা এফ মহম্মদ। প্রত্যুত্তরে গুরুজনরা কটূক্তি করেননি, বরং বুকে টেনে নিয়েছিলেন তাঁদের সাহসী মেয়েকে। পাত্রীর সিদ্ধান্তে সমর্থন জানাতে অমত করেননি পাত্রপক্ষেরও কেউই। কেরলের এক হাসপাতালে প্রতি মুহূর্তে যেভাবে তিনি করোনা আক্রান্তদের সেবা করে চলেছেন, তা আবার প্রমাণ করে দিল যে সমাজে কিছু মানুষের মধ্যে এখনও বেঁচে রয়েছে মনুষ্যত্ব।
বিশ্বজুড়ে এমন হাহাকার পরিস্থিতির মাঝে আমাদের দেশও প্রতিনিয়ত যুঝে চলেছে মারণ ভাইরাস COVID-19-এর সঙ্গে। সত্যিই তো দেশ সংকটে। এসময়ে কি লাজবন্তী কনে সাজে বিয়ের পিঁড়িতে বসা মানায় একজন চিকিৎসকের! অতঃপর স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঠিক রাখতে হলে প্রয়োজন আরও বেশি সংখ্যক অভিজ্ঞ ডাক্তার-নার্সদের। সেকথা স্মরণ করেই দুর্দিনে মানুষের সেবা করতে বিয়ে পিছলেন শিফা। এমন ভাবনাই তাঁকে বিয়ের সিদ্ধান্ত পিছনোর শক্তি জুগিয়েছিল। গত ২৯ মার্চ দুবাইয়ে প্রতিষ্ঠিত এক সুপাত্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ের কথা ছিল। এরইমধ্যে করোনার বিরুদ্ধে শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে কিনা তিনি বিয়ের পিঁড়িতে বসবেন! সেটা কল্পনাও করেত পারেননি বছর তেইশের হাউস সার্জেন শিফা। অতঃপর মা-বাবা, হবু শ্বশুরবাড়িতে নিজের সিদ্ধান্ত জানান। শিফার সিদ্ধান্তের সমর্থনও করেন তাঁরা। ব্যস, তারপর পিছিয়ে দেওয়া হয় বিয়ে!
২৯ মার্চ কনের সাজের বদলে পরে নেন নিজের বর্ম- পার্সোনাল প্রোটেকশন ইক্যুপমেন্ট (পিপিই) অর্থাৎ সুরক্ষাবরণী। বিয়ের আসরের পরিবর্তে কান্নুরের পারিয়ারাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্তদের শুশ্রূষায় নিজেকে নিয়োজিত করেন শিফা মহম্মদ। এখন তাঁর এক মুহুর্ত দম ফেলার সময় নেই।
মেয়ের সিদ্ধান্তে গর্বিত বাবাও। মুক্কাম মহম্মদ যিনি কংগ্রেসের সদস্য তথা এক সামাজিক কর্মীও, তিনি বলেন, “প্রত্যেক মেয়ের জীবনেই বিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষ্ঠান। কিন্তু আমার মেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থের আগে সামাজিক দায়িত্ব ও পেশাদারি দায়বদ্ধতা পালন করেছে। আমি একজন সমাজকর্মী। স্ত্রী শিক্ষক। আমার দুই মেয়ের মধ্যে সেই আদর্শ সঞ্চারিত করেছে আমাদের সামাজিক কাজ। বাবা হিসেবে আমি গর্বিত”
ডাক্তার শিফার, “আমি তো অসাধারণ কিছু করিনি। আমি শুধু নিজের দায়িত্বটুকু পালন করছি। আমার মতো অনেকেই বিয়ে পিছিয়ে দিয়েছেন। আমি একা নই।’ তবে তা নিয়ে তাঁর বন্ধুরা কিন্তু বেশ ঠাট্টা-মজা করেছেন বলেও জানান শিফা। তাঁর কথায়, ‘আমার কয়েকজন বন্ধু তো মজা করে বলে, বিয়ের দিন আমি নিজের সেরা পোশাকটাই (পিপিই) পরেছিলাম। আর আমি নিজের রোগীদের সেবা করতে সবসময়েই পছন্দ করি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.