সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে কাশ্মীর সংক্রান্ত সম্প্রচারিত খবর ও বিশ্লেষণমূলক আলোচনায় অখুশি উপত্যকার বাসিন্দারা। কাশ্মীরি নেতা, বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সুশীল সমাজের একাংশের দাবি, বিভিন্ন চ্যানেলের প্যানেল ডিসকাশনে কাশ্মীরের বাসিন্দাদের নিয়ে যে সমস্ত বক্তব্য পেশ করা হয়, অধিকাংশ সময়ই সেই সব আলোচনার ভাষা হয়ে ওঠে যথেষ্ট আপত্তিজনক ও অসংবেদনশীল।
সম্প্রতি এক প্রাক্তন সেনা আধিকারিক একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সান্ধ্য আলোচনায় বসে মন্তব্য করেন, “বছরের অর্ধেক সময়ই কাশ্মীরে বনধ পালিত হয়। কিন্তু স্থানীয় কৃষকরা আত্মহত্যা করেন না। কেউ না খেতে পেয়ে মরেন না। তাঁদের গাল লাল লাল গোলাপের মতো।” এখানেই না থেমে তিনি যোগ করেন, “আমরা জানতে চাই তাঁদের জন্য টাকা কোথা থেকে আসছে?” তাঁর এই মন্তব্যে বেজায় চটেছেন কাশ্মীরের বাসিন্দারা। তাঁদের ক্ষোভ, এরকম ‘অশিক্ষিত’, ‘মূর্খ’ প্যানেলিস্টদের খবরের চ্যানেলে বসতে দেওয়াই উচিত নয়।
কাশ্মীরিদের ক্ষোভের আঁচ টের পেয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও। জাতীয় টিভি চ্যানেলগুলির কাছে তাঁর আবেদন, “এমন কোনও শো টিভিতে দেখাবেন না, যার মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরে হাঙ্গামা ছড়াতে পারে।” রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও পিডিপি-র বর্ষীয়ান নেতা আলতাফ বুখারি আরও এক ধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেছেন, “ওই সব টিভি চ্যানেলের আলোচনায় কাশ্মীরের বাস্তব চিত্রটা দেখানো হচ্ছে না।” আর এক মন্ত্রীর মন্তব্য, “লাগামহীন উপস্থাপক ও অশিক্ষিত প্যানেলিস্টরাই কাশ্মীরে হিংসা ছড়াচ্ছেন। তাঁদের জন্যই ভারতের প্রতি বিশ্বস্ত কাশ্মীরিরাও নিজেদের বিচ্ছিন্ন বলে মনে করছেন।”
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা NIA সম্প্রতি আর্থিক তছরুপের অভিযোগে কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের একাংশের বাড়িতে হানা দিয়েছে। ওই খবর প্রকাশ্যে আসার পরই কাশ্মীরি নেতাদের কার্যত তুলোধোনা শুরু করে দিয়েছে জাতীয় টিভি চ্যানেলগুলি, অভিযোগ বিক্ষোভকারীদের। তাঁদের দাবি, যাঁরা কোনওরকম আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত নয়, তাঁদেরও অভিযুক্তদের সঙ্গে একাসনে বসিয়ে দিচ্ছে টিভি চ্যানেলগুলি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে বসে দুই কাশ্মীরি প্যানেলিস্টকে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হিন্দুস্তান টাইমস-এ প্রকাশিত খবরে প্রকাশ, বাবুল সুপ্রিয় ওই শোয়ে বলেন, “অভিযুক্ত কাশ্মীরিদের টুঁটি চেপে ধরে বলাতে হবে, যে তাঁরা ভারতীয়। আমি সাফ জানিয়ে দিতে চাই, প্রত্যেক বেয়াদপ কাশ্মীরির জন্য রয়েছে একজন করে মেজর গগৈ। জিপের সামনে বেঁধে ঘোরানো হবে…।”
সম্প্রতি এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিক একটি জাতীয় টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলেছেন। অভিযুক্ত সাংবাদিকের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, ওই নেতা তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়েছেন। টিভি চ্যানেলগুলি কাশ্মীরে কেন্দ্র-পুলিশের দমনপীড়নে উৎসাহ দিচ্ছে বলে সৈয়দ আলি গিলানি, উমর ফারুক ও ইয়াসিন মালিকরা কাশ্মীরে বনধের ডাক দিয়েছেন। সবমিলিয়ে কাশ্মীরে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলির বিরুদ্ধে ক্ষোভ এখনই শান্ত হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.