ছবি:প্রতীকী
সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: জানুয়ারি ১৯, ১৯৯০। কুয়াশার চাদর জড়িয়ে ঘুমের কোলে ঢুলে পড়েছিল কাশ্মীর উপত্যকা। আচমকাই মাঝ রাতের নৈশব্দ খানখান করে হাজার হাজার মসজিদের লাউডস্পিকার গর্জন করে ওঠে– ‘হামে চাহিয়ে আজাদি। কফিরো কাশ্মীর ছোড়’। রাস্তায় নেমে পড়ে ধর্মোন্মাদ জনতা। JKLF-এর বন্দুকেরগুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যায় শত শত কাশ্মীরি পণ্ডিতের শরীর। বাকিটা ইতিহাস। তবে ১৯৯০ আর ২০২০ এক নয়। ইয়াসিন মালিকদের ইসলামের ভিতে কাশ্মীরীয়তের দাবি এখন বদলে দাঁড়িয়েছে পাক জঙ্গিদের খিলাফতের চাহিদায়। যেখানে মুসলিম হলেও জায়গা নেই শিয়া, হাজারা বা আহমদিয়াদের। ফলে দেশি ও বিদেশি জেহাদিদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে সংঘাত।
সদ্য কাশ্মীরে এক পঞ্চায়েত প্রধানের হত্যা চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কাশ্মীরে সন্ত্রাসের ধরণ পালটেছে। গত সোমবার অনন্তনাগ জেলার লারকিপোরা (Larkipora) এলাকার লুকবাওয়ান গ্রামে কংগ্রেসের প্রধানকে বাড়ির সামনে খুন করে জঙ্গিরা। এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন ‘দ্য রেসিস্ট্যানস ফ্রন্ট’ (TRF)। লস্কর-ই-তইবার শাখা সংগঠন বলে পরিচিত এটি। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরে স্থায়ীভাবে বসবাসের চেষ্টা করলে ফল ভুগতে হবে ‘ভারতীয়’দের বলেও হুমকি দিয়েছে TRF। অর্থাৎ হিজবুল মুজাহিদিনের মতো কাশ্মীরের ভূমিপুত্রদের নিয় গঠিত সংগঠনগুলিকে টেক্কা দিয়ে শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছে সংগঠনটি। কয়েকদিন আগেই এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে হিজবুল প্রধান সৈয়দ সালাউদ্দিনের উপর হামলা চালায় অজ্ঞাত পরিচয়ের কিছু দুষ্কৃতী। এর ফলে হিজবুল প্রধান গুরুতর জখম হয়।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, উপত্যকায় ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে কাশ্মীরি উগ্রপন্থীরা। তাদের জায়গা নিচ্ছে পাকিস্তান সমর্থিত ও বিদেশি উগ্রপন্থীদের জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি। যাদের কাছে ‘কাশ্মীরীয়ত’ বা ‘জমুরিয়ত’ বা ‘ইনসানিয়ত’ কোনওটারই বেশি দাম নেই। ‘স্বাধীন কাশ্মীর’-এর স্বপ্ন দেখা অনেক ভূমিপুত্র জঙ্গিরা বুঝতে পারছে তারা আইএসআইয়ের আজ্ঞাবহ দাশ বই কিছু নয়। দিল্লির ‘শিকল’ ভাঙলেও তাদের গলায় ইসলমাবাদের বেড়ি পড়তে যে দেরি হবে না তা সালাউদ্দিনের মতো পোড় খাওয়া কাশ্মীরি জঙ্গিদের বুঝতে বাকি নেই। ইসলামাবাদে সালাউদ্দিনের উপর হামলা আইএসআইয়ের নির্দেশেই হয়েছে। ভারতীয় সেনার কাছে হিজবুল কমান্ডার রিয়াজ নাইকোর গোপন তথ্য ফাঁস করেছিল TRF। ফলে সেনার গুলিতে খতম হয় নাইকো। সব মিলিয়ে কাশ্মীরে এই মুহূর্তে অন্তর্কলহ চলছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির মধ্যে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.