সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পুলওয়ামার হামলা পরবর্তী সময়টা রীতিমতো উত্তাল। কাশ্মীর উপত্যকা, জম্মু-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়াচ্ছে অশান্তি। এর রেশ নেমে আসছে দেশের অন্যান্য রাজ্যে পাঠরত কাশ্মীরি পড়ুয়াদের ওপর। পুলওয়ামার পালটা প্রতিক্রিয়ায় হেনস্তা, আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে তাঁদের মধ্যে। ইতিমধ্যেই দেরাদুনের কাশ্মীরি পড়ুয়াদের ওপর হামলার হুঁশিয়ারি, তাঁদের একঘরে করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। অনেকেই হস্টেল ছেড়ে নিজেদের বাড়ি ফিরছেন।
ভারতীয় সেনার বড়সড় সাফল্য, পুলওয়ামায় নিকেশ দুই জইশ জঙ্গি
জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ সূত্রে খবর, গত দু দিনে ভিন রাজ্যে পড়াশোনা করতে যাওয়া অন্তত ৫০ জন কাশ্মীরি যুবক, যুবতীর ফোন পেয়েছেন তাঁরা। প্রত্যেকেই নিজেদের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং বাড়ি ফিরতে চাওয়ার কথা জানিয়েছেন। বাড়ি ফিরলে, এত অশান্তির মাঝেও জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ যাতে তাঁদের যথাযথ নিরাপত্তা দেয়, তার আবেদনও জানানো হয়েছে। পুলিশের দাবি, বেশিরভাগ ফোন তাঁরা পেয়েছেন মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং উত্তরাখণ্ড থেকে। বিশেষত উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের থাকা মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে তাঁরা পুলিশের কাছে জানিয়েছেন। আম্বালা থেকেও বেশ কয়েকজন ফোন করে নিরাপত্তাহীনতার কথা প্রকাশ করেছেন। একই কথা জানিয়েছেন জম্মু-কাশ্মীর ছাত্র সংগঠনের মুখপাত্র নাসির খুহামি। তাঁর কথায়, “বেশিরভাগ পড়ুয়ারা ফোন করে জানাচ্ছেন, তাঁরা কতটা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো কট্টরপন্থী সংগঠনের সদস্যরা তাঁদের হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাচ্ছি। আমি নিজে ৪ বছর পড়াশোনার জন্য দেরাদুনে ছিলাম। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কখনও পড়তে হয়নি। আমরা বলছি, তাঁদের বাড়ি ফিরে আসতে। পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে চণ্ডীগড়ে আমাদের সংগঠন একটি অস্থায়ী শিবির খুলেছে। প্রয়োজনে সেখানে পাঠরতা আমাদের রাজ্যের পড়ুয়ারা গিয়ে থাকতে পারে।”
পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কথায়, “গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা অন্তত ২২ টা ফোন কল পেয়েছি। বেশিরভাগটাই রাজ্যের বাইরে থাকা কাশ্মীরিদের। তাঁরা অত্যাচারিত হওয়ার আশঙ্কায় নিরাপত্তা চাইছেন। খুব কম ফোন পেয়েছি স্থানীয় পরিবারগুলির কাছ থেকে। যেহেতু উপত্যকায় কারফিউ চলছে, তাই তাঁরা বাইরে বেরিয়ে দৈনন্দিন কাজকর্ম করতে পারছেন না। রোজকার খাবারদাবার সংগ্রহের জন্য আমাদের সাহায্য চাইছেন। ওইসব জায়গায় সিআরপিএফ-এর একটি দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, বাড়ি বাড়ি খাবার এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার।” পুলিশের আরও দাবি, পড়ুয়াদের নিরাপত্তা দিতে একটি টোল ফ্রি নম্বরও চালু করেছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। পুলওয়ামা হামলা পরবর্তী সময়ে কোথাও তাঁদের ওপর কোনওরকম নিগ্রহের ঘটনা ঘটলে, ওই টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে নিরাপত্তা চাইতে পারেন কাশ্মীরি পড়ুয়ারা। তাঁদের উদ্বেগের কথা পুলিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে জানিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে প্রতিটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কাশ্মীরি পড়ুয়া এবং পরিবারগুলিকে অযথা হেনস্তার মতো কোনও ঘটনা ঘটলে, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে বাড়তি নিরাপত্তা দিতে হবে তাঁদের।
পুলওয়ামায় রাতভর সেনা-জঙ্গি গুলির লড়াই, মেজর-সহ শহিদ ৪ জওয়ান
এদিকে, দেরাদুনে কাশ্মীরি পড়ুয়াদের নিরাপত্তাহীনতার বোধ নিয়ে উত্তরাখণ্ড পুলিশের বয়ান ঠিক উলটো। উত্তরাখণ্ড পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জানাচ্ছেন, “পুলওয়ামার ঘটনার পর থেকে রাজ্যের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা বাড়তি নজর দিয়েছি, যাতে কোথাও কোনও কাশ্মীরি পড়ুয়াকে অযথা হেনস্তা না হতে হয়। সেইসঙ্গে ভারত-বিরোধী কোনও কাজও যাতে না হয়, কড়া নজর রেখেছি। এমনকী কেউ কোনও মিছিল করতে চাইলেও তা শান্তিপূর্ণ রাখার চেষ্টা চলছে। এটা আমাদের কর্তব্য।” দিল্লি পুলিশ কমিশনের তরফেও বিবৃতি দিয়ে পরিস্থিতির উপর যথাযথ নজর রাখতে বলা হয়েছে। তবে সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন, তাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা কাশ্মীরিদের আশঙ্কা হয়ত অমূলক নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.