সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কর্ণাটকে হইহই করে জিতল কংগ্রেস। গোটা দল সমস্বরে শুরু করে দিল রাহুল গান্ধীর জয়জয়কার। কেউ কেউ বললেন প্রিয়াঙ্কার কথা। আরও কম লোক বললেন খাড়গের কথা। স্থানীয় নেতৃত্বের কথাও উঠে এল কারও কারও মুখে। কিন্তু এই জয়ের আসল ‘কুশলী’, পর্দার আড়ালে থেকে মেঘনাদের মতো যিনি স্ট্র্যাটেজি সাজিয়ে গিয়েছেন, সেই সুনীল কানুগোলুর নাম কেউ করল না। সুনীল কানুগোলু পেশাদার ভোটকুশলী। কর্ণাটকের নির্বাচনে তিনিই কংগ্রেসের স্ট্র্যাটেজি তৈরির দায়িত্বে ছিলেন।
একটা সময় প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে কংগ্রেসের আলোচনা বহুদূর এগিয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত কোনও কারণে সেই চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি। দীর্ঘদিন আলোচনার পরও পিকে কংগ্রেসে (Congress) যোগদান করেননি। আবার কংগ্রেসের পরামর্শদাতা হিসাবেও কাজ করেননি। অগত্যা বিকল্প হিসাবে সুনীলকে ২০২৪ লোকসভা এবং তাঁর আগের বেশ কয়েকটি বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব দেয় সোনিয়ার দল। সুনীলের বয়স চল্লিশের কোঠায়। প্রচারে থাকতে পছন্দ করেন না। এমনকী সোশ্যাল মিডিয়াতেও তাঁর দেখা মেলে না। তবে প্রচারবিমুখ এই তরুণ ভোটকুশলীর অতীত রেকর্ড বেশ ঈর্ষনীয়।
২০১৪-তে বিজেপির (BJP) রণকৌশল তৈরির টিমে ছিলেন সুনীল। ২০১৭ সালের উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনেও তাঁর রণকৌশলেই উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath) ক্ষমতায় আসেন। সুনীল দীর্ঘদিন প্রশান্ত কিশোরের সহযোগী হিসাবে কাজ করেছেন। ২০১৪ সালে বিজেপির রণকৌশল তৈরির সময় পিকের সহযোগী হিসাবে কাজ করেছেন তিনি। যদিও, পিকের সঙ্গে চুক্তি করার আগেই সুনীলের (Sunil Kanugolu) সঙ্গে চুক্তি করেছিল বিজেপি নেতৃত্ব। তাছাড়া পিকের আগেই নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল সুনীলের। মোদি (Narendra Modi) যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখনই সুনীলের প্রাক্তন সংস্থা ম্যাকিনেজির হয়ে মোদিকে একবার প্রেজেন্টেশন দেন এই ভোটকুশলী।
ম্যাকিনেজি ছেড়ে বিজেপির (BJP) স্ট্র্যাটেজি টিম ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্রিলিয়ান্ট মাইন্ডসে’র শীর্ষপদে কাজ করেছেন সুনীল। আপাতত তিনি মাইন্ডশেয়ার অ্যানালিটিক্স নামের সংস্থা চালান। দীর্ঘদিন পিকের সঙ্গে কাজ করলেও পিকে আর সুনীলের কার্যপদ্ধতিতে বিস্তর ফারাক। পিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়। সংবাদমাধ্যমেও মাঝেমাঝেই সাক্ষাৎকার দেন। পিকের এই সাক্ষাৎকারগুলিও অনেক সময় ভোটের ফলাফলকে প্রভাবিত করে। কিন্তু সুনীল সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের। তিনি আড়ালে থেকে মেঘনাদের মতো শুধু রণকৌশল তৈরি করেন। একেবারেই প্রচারে আসেন না। সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি নেই। এমনকী, ইন্টারনেটে তাঁর ছবি জোগাড় পাওয়াও দুষ্কর। তবে এত কিছু সত্ত্বেও তাঁর সাফল্যের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। ১৪ এবং ১৭-তে বিজেপির হয়ে সাফল্য পাওয়ার পর এআইএডিএমকে (AIADMK), ডিএমকে, অকালি দলের হয়েও কাজ করেছেন তিনি। অন্তত গোটা ১২ নির্বাচনে রণকৌশল গড়েছেন সুনীল। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁর স্ট্র্যাটেজি সফল।
কর্ণাটকেও কংগ্রেসের ওয়্যাররুমে দিনরাত পড়ে থাকতেন সুনীল। দিনে ২০ ঘণ্টা করেও পড়ে থেকেছেন ওয়্যার রুমে। তাঁর নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের একটি টিম তৈরি করে কংগ্রেস। রাহুল এবং প্রিয়াঙ্কার আস্থাভাজন সুনীল বিশ্বাসও করেন কংগ্রেসের নীতিতে। সম্ভবত সেকারণেই তাঁর দলকে জেতানোর ইচ্ছাটা প্রবল ছিল। ডিকে শিবকুমার এবং সিদ্ধারামাইয়ার দুই শিবিরকে এক জায়গায় আনা থেকে শুরু করে পে-সিএম (PayCM), ‘৪০ শতাংশের সরকার’, ‘কমিশনের সরকারে’র মতো জনপ্রিয় স্লোগানও তিনিই দেন। এমনকী রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রার রুটও তিনিই ঠিক করেছিলেন। যারা কংগ্রেসের প্রচার সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন, তাঁরা ক্রেডিট দিচ্ছেন সুনীলকে। যদিও কানুগোলু নিজে বলছেন, “আমার কাজের ধরন অত্যন্ত সাধারণ। আমি এভাবেই কাজ করতে পছন্দ করি। আমি কোনও পাবলিসিটি চাইনি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.