Advertisement
Advertisement

Breaking News

কর্ণাটকে মোদি-রাহুলের মহাযুদ্ধ, কড়া নিরাপত্তায় শুরু ভোটগ্রহণ

ট্র্যাডিশন থাকবে? না কি স্থায়িত্বে মত দেবে কন্নড়ভূমি?

Karnataka Assembly election 2018: Voting begins in 222 constituencies
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 12, 2018 9:26 am
  • Updated:May 12, 2018 9:26 am  

নন্দিতা রায়, বেঙ্গালুরু: শুরু হল কর্ণাটক বিধানসভার ভোটগ্রহণ৷ কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে ২২২টি আসনে চলছে ভোট গ্রহণের কাজ৷ একটি আসনে আপাতত ভোট স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন৷ আজ, মোট ২২২টি আসনের আজ দু’হাজার ৫৬৩ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবেন অন্তত চার কোটি ৯৬ হাজার ভোটার৷ ভোট শুরুতেই কোনও অশান্তি খবর না পাওয়া গেলেও ইভিএম বিভ্রাট সংক্রান্ত বিক্ষিপ্ত খবর পাওয়া গিয়েছে৷

এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিকমহলের চোখ রয়েছে কর্ণাটক নির্বাচনের উপর। নির্বাচনের ফলাফল কী হবে সেদিকেই নজর সবার। আজই ফয়সালা হয়ে যাবে কন্নড়ভাষী মানুষেরা কী চাইছেন। তারা গত প্রায় তিন দশকের ‘ট্র্যাডিশন’ ভেঙে নতুন কোনও দৃষ্টান্ত তৈরি করেন কি না, দেখার সেটাই। এযাবৎকালে কর্ণাটকে প্রতি ভোটেই ক্ষমতা বদল হয়েছে। চরিত্রটা বিপরীতধর্মী। দেখা যাচ্ছে, ২৫ বছরে কোনও দলই দুই দফায় ক্ষমতায় থাকেনি। অবশ্য এমনও দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা কোনও দল রাজ্যে ক্ষমতায় আসেনি। কন্নড়রা গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে হঠিয়ে কংগ্রেসকে ক্ষমতায় এনেছিল। সেই বদলের ধারা বজায় রেখে এবারেও কংগ্রেসকে সরিয়ে বিজেপিকে ফিরিয়ে আনবে কি না সেই জল্পনা রয়েছে। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপিকেই তারা রাজ্য শাসনের সুযোগ দেবে কি না, প্রশ্ন সেটাও। কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলকে রাজ্য শাসনের সুযোগ যে কন্নড়ভাষীরা কখনও দেয়নি তা কিন্তু নয়, তা হলেও খুবই কম সময়ের জন্যই হয়েছে। তাই এবার ভোটের ফলাফল যাই হোক না কেন যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তাতে যে এক নতুন দৃষ্টান্ত হবে, তা নিশ্চিতই।

Advertisement

[চলতি মাসের শেষে দেশজুড়ে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট, সমস্যায় আমজনতা]

জাতীয় রাজনীতির মঞ্চে দুই প্রধান রাজনৈতিক দল কংগ্রেস ও বিজেপি, উভয়ের পক্ষেই কর্ণাটক ভোট অতি গুরুত্বপূর্ণ। আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনকে তার প্রথম সেমিফাইনাল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এবছরের শেষে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের নির্বাচন রয়েছে। সেগুলিকে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল হিসাবে ধরা হচ্ছে। কংগ্রেসের জন্য কর্ণাটকে ক্ষমতা ধরে রাখা খুবই জরুরি। কারণ, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে নিজেদের দখলে থাকা কোনও রাজ্যেই কংগ্রেস ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি। অন্যদিকে, বিজেপির কাছেও কিন্তু কর্ণাটক জয় ততটাই জরুরি। দক্ষিণের রাজনীতিতে প্রবেশের প্রধানদ্বার হিসেবে কর্ণাটককে দেখছে তারা। দক্ষিণের একমাত্র এই রাজ্যেই তারা আগেও ক্ষমতায় ছিল এবং এবার ক্ষমতায় ফেরার আশা করছে।

অর্থাৎ মূল কংগ্রেস-বিজেপি দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা। মূল লড়াই এই দুই জাতীয় দলের মধ্যেই। তবে তৃতীয় পক্ষ জেডিএস-বিএসপি জোট রয়েছে। সরাসরি ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে না থাকলেও তবে তেমন পরিস্থিতি হলেই তারাই ‘কালো ঘোড়া’ হতে পারে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আন্দাজ করছেন, এবার ত্রিশঙ্কু বিধানসভা। রাজ্যের তাবড় সাংবাদিকের কথায়, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই রয়েছে। রাজ্যের ২২৪টি আসনের মধ্যে মাত্র ৬০টি আসনে কী হতে পারে তার আভাস রয়েছে। বাকি সব আসনই অনিশ্চিত। নির্বাচনের প্রথমের দিকে কংগ্রেসের হাওয়া থাকলেও শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রচারের রাশ নিজের হাতে নেওয়ার পর থেকে হাওয়া তুঙ্গে বিজেপিরও। দক্ষিণ কর্ণাটক ও দক্ষিণ পশ্চিম কর্ণাটকের নির্দিষ্ট এলাকা ছাড়া জেডিএস রাজ্যের অন্যান্য অংশে খুব একটা প্রাসঙ্গিক নয়। ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে ময়দানে মূলত কংগ্রেস ও বিজেপিই রয়েছে।

[অভিশপ্ত! এই গ্রামে গত ৪০০ বছরে কোনও শিশুর জন্ম হয়নি]

রাজ্যে ক্ষমতা দখল করতে বিজেপি লোকসভা নির্বাচনের জেতার কৌশল, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাতেই নির্বাচনের সব ক্ষমতা–এই নীতি অনুসরণ করেছে। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ দীর্ঘদিন ধরে এসে পড়ে থেকেছেন দক্ষিণের এই রাজ্যে। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ইয়েদুরাপ্পার নাম ঘোষণা করা হলেও ক্ষমতার রাশ তার হাতে একেবারেই দেওয়া হয়নি। তার জ্বলন্ত প্রমাণ, ইয়েদুরাপ্পা পুত্রর নির্বাচনে টিকিট না পাওয়া। অন্যদিকে, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী রাজ্যে ঘাঁটি গাড়লেও তিনি ভরসা রেখেছেন রাজ্য নেতাদের উপরই।

ঘটনাচক্রে এবার লড়াইয়ের ময়দানে থাকা তিন রাজনৈতিক দলের মধ্যেই চরম অন্তর্দ্বন্দ্ব রয়েছে। একদিকে, বিজেপি ইয়েদিকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করলেও রাজ্যে দলের আরও ‘পাওয়ার সেন্টার’ রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া, ঈশ্বরীরাপ্পারা ইয়েদি বিরোধী শিবির বলেই পরিচিত। এর বাইরে রয়েছে রেড্ডি ভাইয়েরা ও তাদের বন্ধু শ্রীরামালুও৷ ইয়েদির উপর দল ভরসা করেনি। প্রচার থেকে প্রার্থী নির্বাচন সবই হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অঙ্গুলি হেলনে। অন্যদিকে কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিদ্দারামাইয়ার উপরে ভরসা করলেও কর্ণাটকে কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গে, কে রহমান খানের মতো পুরানো নেতারা সিদ্দারামাইয়ার বাড়বাড়ন্তে মোটেই খুশি নন বলেই শোনা গিয়েছে। অন্য দল (জেডিএস) থেকে এসে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে যাওয়া এবং আবার মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়াকে কেন্দ্র করে পুরনো নেতাদের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে বলেও স্থানীয় সাংবাদিকদের দাবি। আবার জেডিএসের অন্দরেও মতভেদ রয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়া ও তাঁর মেজ পুত্র রেভান্নার সুর কংগ্রেসের প্রতি নরম হলেও, সেজ ছেলে কুমারস্বামী বিজেপির দিকেই ঝুঁকে।

অবশ্য সবকিছু সামলে ভোটের ময়দানে সকলের সামনে তিন রাজনৈতিক দলই নিজেদের ‘ঐক্য’ দেখানোর চেষ্টা করেছে। তবে, মতভেদের চোরা স্রোত ব্যালটে প্রভাব ফেলবে কি না, সেদিকেই নজর রয়েছে সকলের৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement