সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আজ ‘কারগিল যুদ্ধ’-য় ভারতের সাফল্যের ২০ বছর পূর্তি। দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে কারগিল বিজয় দিবস। ১৯৯৯ সালের ‘কারগিল যুদ্ধ’ বলা হয় প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিশ্বাসঘাতকতার চরম নিদর্শন। কারণ, সংঘর্ষের মাত্র দু’মাস আগেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী লাহোর সফর করেছিলেন। শীতে কাশ্মীর সীমান্তের কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি নেমে যায়। ছাউনি ছেড়ে সেনারা সরে আসে।
ওই অঞ্চলে দু’দেশের মধ্যেই ছিল একটি অলিখিত চুক্তি: শীতের সময়কোনওরকম সামরিক কার্যকলাপ চলবে না। অথচ শুকনো শীতের ওই নিষ্ক্রিয় সময়েই শুরু হয়েছিল পাকিস্তানি অনুপ্রবেশ। পরে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ বলেছিলেন, তিনি নাকি কিছুই জানতেন না, এবং সব পরিকল্পনার রচয়িতা ছিলেন সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফ! এই দোষারোপ অবশ্য পারভেজ মুশারফ তুড়িতে উড়িয়ে বলেন, পাক প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছিল এই পরিকল্পনার কথা! রহস্যের জমিন এক বাঁও মেলে না, দু’বাঁও মেলে না।
আসুন জেনে নিই এই যুদ্ধের খুঁটিনাটি:
এই যুদ্ধে কারগিলকে তাক করার নেপথ্যে পাকিস্তানের মূল উদ্দেশ্য ছিল লাদাখ এবং কাশ্মীরের মধ্যে সংযোগ ছিন্ন করা। এবং এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ‘কাশ্মীর সমস্যা’ নিয়ে আসা, যাতে বিভিন্ন অজুহাতে তারা তাদের দখল সফল করতে অন্যান্য দেশের সাহায্য পায়। কিন্তু এমন কিছুই হয়নি। এমনকী, চিনও সাড়া দেয়নি এই যুদ্ধে।
কারগিল যুদ্ধ যখন হচ্ছে, তখন ভারত-পাক দু’টি দেশই পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ। ১৯৭১-এর ‘মুক্তিযুদ্ধ’-র পর থেকে দীর্ঘকালীন শান্তি বজায় থাকলেও ১৯৯৮-এর মে মাসে ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশেরই পারমাণবিক বোমা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের পটভূমিকা রচিত হতে থাকে। যদিও, ১৯৭৪ সালে ভারত প্রথম পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা করে।
ভারতের ইতিহাসে কারগিল একমাত্র যুদ্ধ যা ভারতীয় বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে ‘লাইভ’ দেখানো হয়েছিল। ‘কারগিল ওয়ার’ নামে পরিচিত হলেও, আসলে ‘কারগিল কনফ্লিক্ট’ নামেই এর সূত্রপাত ঘটে।
বলিদান ও অপার সাহসীর জন্য সম্মানিত বীর যোদ্ধারা:
সম্মান জীবৎকালীন: গ্রেনেডিয়ার যোগেন্দ্র সিং যাদব (পরমবীর চক্র), রাইফেলম্যান সঞ্জয় কুমার (পরমবীর চক্র), কর্নেল ম্যাগড বাসাপ্পা রবীন্দ্রনাথ (বীর চক্র), নায়েক দীগেন্দ্র কুমার (মহাবীর চক্র)।
মরণোত্তর সম্মান: লেফটেন্যান্ট মনোজ কুমার পাণ্ডে, ক্যাপ্টেন বিক্রম বাত্রা, ক্যাপ্টেন অনুজ নায়ার (মহাবীর চক্র), মেজর রাজেশ সিং অধিকারী, মেজর মরিয়াপ্পন সারাভনন (বীর চক্র), স্কোয়াড্রন লিডার অজয় আহুজা (বীর চক্র), হাবিলদার চুনিলাল (বীর চক্র ও অশোক চক্র)।
কারগিল যুদ্ধ শুরু হয় ৩ মে ’৯৯। শেষ ২৬ জুলাই ’৯৯। লড়াই চলে মোট ২ মাস তিন সপ্তাহ ২ দিন। যদিও ১৪ জুলাই অটলবিহারী বাজপেয়ী ‘অপারেশন বিজয়’-এর সাফল্য ঘোষণা করেছিলেন।
মিগ ২৭ যুদ্ধবিমানে বিমান লেফটেন্যান্ট এ. বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ফ্যাব-২৫০-২৭০ জিপি’ বোমার গায়ে লিখে রেখেছিলেন একটি বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন: ‘জোর কা ঝটকা ধীরে সে লগে’। প্রায় আড়াই লাখ কামানের গোলা ব্যবহৃত হয়েছিল।
যুদ্ধে মোট ৪৫৩ জন পাকিস্তানি সেনার মৃত্যু হয়। যুদ্ধবন্দির সংখ্যা ৮ জন। এই যুদ্ধে পাকিস্তান প্রায় ৫ হাজার সেনা পাঠায়। যুদ্ধ চলাকালীন দু’টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান গুলি করে নামিয়েছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। আরও একটি ভেঙে পড়েছিল মাটিতে।
পাকিস্তান প্রাথমিকভাবে এই যুদ্ধে তাদের সেনাবাহিনীর কোনওরকম অংশগ্রহণের কথা নাকচ করেছিল। এমনকী, ‘কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এই যুদ্ধ চালাচ্ছে’ বলে মুজাহিদিন-এর নামে ধুয়োও তুলেছিল। তবে, পরে যখন দু’জন সেনাকে এই যুদ্ধের জন্য পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘নিশান-এ-হায়দার’ প্রদান করা হয়, তখন পাকিস্তানের অংশগ্রহণ জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যায়।
ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের ‘অপারেশন তলোয়ার’-এর মাধ্যমে করাচি পোর্টের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে পাকিস্তানের অস্ত্রের ভাঁড়ারে টান পড়ে। পরে, তৎকালীন পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ স্বীকার করেছিলেন, তাঁদের কাছে আর ছ’দিনের মতো জ্বালানি তেল ছিল যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো।
‘বোফর্স’। কারগিল যুদ্ধের অবিসংবাদী নায়ক। বোফর্স বিতর্কের জেরেই রাজীব গান্ধীর সরকার ক্ষমতা হারিয়েছিল। বলা হয়েছিল, ‘বোফর্স’ নাকি মোটেই উন্নত মানের নয়! অথচ পরে সামরিক নেতৃত্ব স্বীকার করে নেন, এই বোফর্সের জন্যই তাঁরা কারগিল যুদ্ধে জিততে পেরেছিলেন!
কারগিলের ভারতের ব্যবহিত অস্ত্রগুলির মধ্যে ছিল, ৫৭ এমএম রকেট, আর ৭৭ মিসাইল, পিনাকা রকেট, বিএম ২১ গ্র্যাড রকেট লঞ্চার, জি-৩ ব্যাটল রাইফেল ইত্যাদি। ভারতীয় বায়ুসেনা ব্যবহার করেছিল, মিগ ২৭, মিগ ২৯, মিগ ২১, মিরাজ ২০০০, বোফর্স এফ এইচ ৭৭ বি, এমআই ১৭ হেলিকপ্টার, চিতা হেলিকপ্টার ইত্যাদি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.