সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিপদের আশঙ্কা ছিল৷ সঙ্গে ছিল প্রাণহানির ঝুঁকিও। কিন্তু কোনও ভয়ই তাঁদের আটকাতে পারেনি৷ চোখরাঙানি সহ্য না করে বরং শতাব্দী প্রাচীন সবরীমালা মন্দিরের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে চুরমার করে দিলেন তাঁরা৷ কীসের জোরে সে দিন মন্দিরে ঢুকেছিলেন দু’জনে? মুখ খুললেন বিন্দু ও কনকদুর্গা।
সুপ্রিম কোর্ট গত বছরের সেপ্টেম্বরে জানিয়ে দিয়েছিল এবার থেকে সবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন ঋতুমতী মহিলারাও৷ কার্যত সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রতিবাদে গর্জে ওঠে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি৷ আন্দোলনের তীব্রতায় বারবার মন্দিরের দরজার কাছে গিয়েও ফিরে যেতে হয়েছে আয়াপ্পার মহিলা ভক্তদের৷ কিন্তু বুধবারের ভোরটা যেন ছিল নিয়মভাঙার৷ কারণ সূর্য ওঠার বেশ খানিকটা আগেই পুলিশের ঘেরাটোপে সবার নজর এড়িয়ে সবরীমালা মন্দিরের পাশের একটি দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকেন কনকদুর্গা এবং বিন্দু। যতক্ষণে ব্যাপারটা বাকিদের নজরে এসেছে, ততক্ষণে বছর ৪০-এর দুই মহিলার প্রার্থনা করা হয়ে গিয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে নজির গড়লেন দু’জনে৷
যদিও তাঁদের বেরিয়ে যাওয়ার পরেই মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ ‘অশুচি’-রা প্রবেশের পর পবিত্র করা হয় মন্দির। তারপর ফের খোলে সবরীমালার দরজা। তবে এখানেই শেষ নয়। বিন্দু ও কনকদুর্গার পর শুক্রবার ৪৬ বছরের আরেক শ্রীলঙ্কান মহিলা সবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেছেন। একের পর এক মহিলা মন্দিরে প্রবেশের পর হিন্দু সংগঠনগুলি প্রতিবাদে গর্জে ওঠে৷ দক্ষিণপন্থী বিভিন্ন সংগঠন তাঁদের মন্দিরে প্রবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। আন্দোলনের বিরোধিতা করে বামপন্থী কিছু সংগঠন। বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে সিপিএম এবং আরএসএস৷ মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিভিন্ন নেতামন্ত্রীদের বাড়ির সামনে শুরু হয় বিক্ষোভ।
এই বিক্ষোভের প্রসঙ্গে মুখ খুললেন অকুতোভয় বিন্দু এবং কনকদুর্গা৷ বিন্দু বলেন, “মন্দিরে প্রবেশ করা নিয়ে যাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ও অশান্তি করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের সংখ্যা অনেক কম। মন্দিরে প্রবেশ করায় অনেক বেশি মানুষ প্রশংসা করেছেন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।” মন্দিরে প্রবেশ করতে সক্ষম হলেও এখনও ভয় দেখানো হচ্ছে তাঁদের। যাতে বিক্ষোভকারীরা তাঁদের কোনও ক্ষতি করতে না পারে, তাই পুলিশি সুরক্ষায় গোপন ডেরায় রয়েছেন দু’জনে। এ প্রসঙ্গে বিন্দু বলেন, “আমি জানতাম আমার প্রাণের ভয় আছে। কিন্তু তারপরেও আমি মন্দিরে যেতে চেয়েছিলাম। কারণ এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।” এই প্রসঙ্গে কনকদুর্গা বলেন, “আমরা যা করেছি তার জন্য গর্বিত। আমাদের দেখে আরও অনেক ঋতুমতী মহিলা মন্দিরে যাওয়ার কথা ভাববেন। আমরা কিন্তু ওখানে প্রার্থনা করতেই গিয়েছিলাম। যদিও এর মধ্যে লিঙ্গবৈষম্যের ব্যাপারও জড়িয়ে ছিল।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.