সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিচারবিভাগ থেকে রাজনীতিতে আসার নজির রয়েছে অনেক। আবার বিচারপতিদের অবসরের পর সরকারি পদ পাইয়ে দেওয়া নিয়ে বিতর্কও দানা বেঁধেছে অনেকবার। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে যেভাবে বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Abhijit Gangopadhyay) সরাসরি বিজেপিতে (BJP) যোগ দিয়ে প্রার্থী হয়েছেন, তেমন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তার পরই বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক আরও জোরালো হয়েছিল। এই আবহেই লোকসভা ভোটের আগে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করলেন দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় (DY Chandrachud)।
তঁার সাফ মন্তব্য, প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ বা দলের প্রতি আকর্ষণ থাকতেই পারে। কিন্তু বিচারপতি ও আইনজীবীদের দায়বদ্ধতা-আনুগত্য থাকা উচিত সংবিধানের প্রতি। লোকসভা ভোটের কয়েক দিন আগে এই মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি বিচারকদের নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ হওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। ওয়াকিবহাল মহলের মত, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ নিয়ে নাম না করে এই বার্তা দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
নাগপুর হাই কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেছেন, “আমাদের মতো একটি প্রাণবন্ত এবং যুক্তিপূর্ণ গণতন্ত্রে অধিকাংশ ব্যক্তির একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ বা প্রবণতা আছে। অ্যারিস্টটল বলেছেন, মানুষ রাজনৈতিক প্রাণী। আইনজীবীরাও এর ব্যতিক্রম নন। কিন্তু বারের সদস্যদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আনুগত্য দলীয় স্বার্থে নয়, বরং আদালত এবং সংবিধানের প্রতি থাকা উচিত।”
তঁার ব্যাখ্যা, বিচারবিভাগ ধারাবাহিকভাবে স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও রাজনৈতিক স্বার্থ থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে। এবং বারের নিরপেক্ষতা ও বিচারবিভাগের স্বাধীনতা অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। প্রধান বিচারপতি বলেন, “স্বাধীন বার আইন এবং সাংবিধানিক শাসন রক্ষার জন্য একটি ‘নৈতিক ভিত্তি’ হিসাবে কাজ করে।” তঁার কথায়, রায় দেওয়া হয়ে গেলে তা জনগণের সম্পত্তি। তা নিয়ে প্রশংসা-সমালোচনা উভয়ই হতে পারে। সেটা সাংবাদিকের কলমে, রাজনৈতিক ভাষ্য বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও হতে পারে। সে জন্য বিচারবিভাগকে তৈরি থাকতে হবে। কিন্তু বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসাবে আইনজীবীদের আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়া দেওয়ার সময় সতর্ক থাকা উচিত।
আইন সম্পর্কে অজ্ঞ সাধারণ মানুষের মতো কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করা ঠিক নয়। বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, “বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের বিচারাধীন মামলা এবং রায়ের বিষয়ে মন্তব্য করার প্রবণতা দেখে আমি খুব বিরক্ত। আপনারা প্রাথমিকভাবে আদালতের কর্মকর্তা এবং আমাদের আইনি প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা এবং মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আপনার হাতেই রয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.