বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: দিল্লির পর দেবভূমি হিমাচল। ভরাডুবি হয়েছে গেরুয়া শিবিরের। ভোট বিপর্যয়ের আগুনে জ্বলছে রাজধানীর দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গ। গুজরাট খানিক স্বস্তি দিলেও দুই রাজ্যের ফলাফলে অসন্তুষ্ট নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ। কাঠগড়ায় দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ও সাধারণ সম্পাদক বি এল সন্তোষ। বছর ঘুরলেই দফায় দফায় আট রাজ্যে ভোট। তার ফলের ওপর নির্ভর করছে গেরুয়া সংগঠনের শীর্ষনেতার ভবিষ্যত।
জানুয়ারি মাসেই শেষ হচ্ছে নাড্ডার (JP Nadda) সভাপতি থাকার প্রথম মেয়াদ। ফল খারাপ হলে দ্বিতীয় দফা মেয়াদের মাঝপথেই নাড্ডা বিদায় হয়ে যেতে পারে বলে সূত্রের খবর। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha) নাড্ডাকে সংগঠনের শীর্ষে রেখে ভোটে যাওয়ার ঝুঁকি নেবেন কিনা তার ওপর।
গুজরাটে জয় নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। বরং আশাতীত ফল হয়েছে বলে মনে করছে গেরুয়া শিবির। হিমাচলে (Himachal Pradesh) চাপে থাকলেও সরকার হাতছাড়া হবে কল্পনাতীত ছিল মোদি-শাহদের। পাঁচবছর সরকার বদলের রীতি ভেঙে এবার জয় পাবে বলে ধরেই নিয়েছিল বিজেপি (BJP) শীর্ষনেতৃত্ব। ভোটের আগে দলের আভ্যন্তরীণ রিপোর্টেও সরকার থাকছে বলে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্টমন্ত্রীকে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। কিন্তু ফল বেরোতেই দেবভূমি হাতছাড়া হওয়ায় সংগঠনের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কীভাবে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ও প্রভাবশালী মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের (Anurag Thakur) রাজ্যে কংগ্রেসের কাছে হারতে হলো শুরু হয়েছে চর্চা। আবার রাজধানীর পুরনিগমের (MCD) ভোটেও আম আদমি পার্টির (AAP) কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে। পুরনিগমের ভোট তদারকির দায়িত্বে ছিলেন নাড্ডা ও রাজ্য সভাপতি আদেশ কুমার গুপ্ত। পরাজয়ের পরেই আদেশ কুমার গুপ্তকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়। তাঁর পদত্যাগ নাড্ডার কাছে কড়া বার্তা বলে জানিয়েছেন দলের শীর্ষনেতা।
এদিকে, আগামী বছর কর্ণাটক, রাজস্তান, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরা ও মেঘালয়-সহ আট রাজ্যের বিধানসভা ভোট। অনেক রাজ্যেই আগেরবার জয়ের মুখ দেখেনি পদ্মপক্ষ। কর্ণাটক দখল করতে ‘অপারেশন লোটাস’ চালাতে হয়। তার পুরো কৃতিত্ব অমিত শাহর (Amit Shah)। তেলেঙ্গানা গঠনের পর থেকেই ক্ষমতায় চন্দ্রশেখর রাও। তিনি বিজেপি বিরোধী বলেই পরিচিত। রাজস্থানে ক্ষমতায় কংগ্রেস। সেখানে ক্ষমতা বদলের পরিস্থিতি থাকলেও শেষ মুহূর্তে কি হয় এখনই নিশ্চিত নন মোদি-শাহরা। ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে জয় পাওয়া গেলেও লোকসভার আসন নামমাত্র একটি দু’টি। কেন্দ্রে সরকার গঠনে কোনও প্রভাব ফেলে না। এই আট রাজ্যের ফলাফল বিপক্ষে গেলে লোকসভা ভোটের আগে গোটা দেশে নেতিবাচক বার্তা যাবে বলে মনে করছে বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব। কিন্তু ২৪ সালে কেন্দ্রের সরকার দখলে রাখতে প্রধানমন্ত্রী কোনও ঝুঁকি নেবেন না বলে জানান দলের এক শীর্ষনেতা। সেক্ষেত্রে সংগঠনের শীর্ষে থাকা নেতৃত্ব মোদি-শাহদের রোষের মুখে পড়তে হবে বলে জানান তিনি।
সেক্ষেত্রে জেপির দ্বিতীয়বার সভাপতি থাকার মেয়াদে এখনই কোনও বাধা না এলেও আট রাজ্যে ভোটের পর কী হবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি। সেক্ষেত্রে সর্বভারতীয় সভাপতির ওপর শাস্তির খাঁড়া নেমে আসাটাই স্বাভাবিক বলে জানাচ্ছে সূত্র। সব বুঝেই সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের মাঝেই কর্ণাটকে দৌড়তে হয়েছে তাঁকে। অধিবেশন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। তারপরেই ভোটমুখী রাজ্যের সংগঠন গোছাতেই ব্যস্ত থাকবেন বলে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.