সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯। কেঁদেছিলেন ইসরোর তৎকালীন চেয়ারম্যান কে শিবন (K Shivan)। কেঁদেছিল গোটা ভারত। সেদিন মহাশূন্যের অতলে হারিয়ে গিয়েছিল ১৪০ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন। তার পর পেরিয়েছে চার বছর। চন্দ্রযান ২-র সেই ব্যর্থতার অধ্যায় দ্রুত মুছে ফেলেছে ইসরো (ISRO)। ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র। যে মুহূর্ত চন্দ্রযান-২ মিশন ‘ব্যর্থ’ হল, ঠিক তার পরমুহূর্তেই নতুন উদ্যোমে ঝাঁপিয়ে পড়লেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। তারপর গত প্রায় চারবছর শুধু চাঁদের মাটি ছোঁয়ার স্বপ্ন, আর অক্লান্ত পরিশ্রম। যার ফলাফল, ২৩ আগস্ট ২০২৩-এ দাঁড়িয়ে ইসরোর বর্তমান চেয়ারম্যান এস সোমনাথের মুখের অমলিন হাসি।
প্রায় চার বছরের প্রচেষ্টায় এল কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। যদিও এই সাফল্যের প্রতিটা বাঁক ছিল কঠিন পরীক্ষার। প্রতিটি মুহূর্ত ছিল উদ্বেগের, লড়াইয়ের। সেই লড়াইয়ের পথটাও ছিল কঠিন। ২০১৯ সালেই অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ইসরো। চন্দ্রযান-৩-এর বাজেট ছিল মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা। চলতি বছর ১৪ জুলাই সেই লড়াইয়ের মূল পর্ব শুরু হয়। সেদিন ঠিক দুপুর ২টো ৩৫ মিনিট ইতিহাস গড়ার পথে প্রথম পা বাড়িয়েছিল চন্দ্রযান-৩। শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে চাঁদের উদ্দেশে উড়ে গিয়েছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর এই মহাকাশযান।
ইসরোর এই চন্দ্রযানের কেন্দ্রে ছিল এলভিএম-৩ (LVM-3) রকেট। এই রকেটই চন্দ্রযানটিকে পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে ঠেলে দেয়। সফল উৎক্ষেপণের পর ১৫ জুলাই পৃথিবীর প্রথম কক্ষপথ পেরিয়েছিল চন্দ্রযান ৩ (Chandrayan 3)। উৎক্ষেপণের পর চাঁদের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দ্বিতীয় বার যানটি কক্ষপথ পরিবর্তন করে ১৭ জুলাই। এর পর ১৮ জুলাই, ২০ জুলাই এবং ২৫ জুলাই তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম কক্ষপথ অতিক্রম করে চন্দ্রযান ৩। উৎক্ষেপণের ১৭ দিনের মাথায় অর্থাৎ ৩১ জুলাই পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাটিয়ে বেরিয়ে যায় মহাকাশযানটি।
চন্দ্রযান-৩ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে ৫ আগস্ট। তারপর ধীরে ধীরে চাঁদের কক্ষপথে ঘুরতে থাকে চন্দ্রযান ৩। ৬ আগস্ট বাইরের দিক থেকে চাঁদের দ্বিতীয় কক্ষপথে প্রবেশ করে গন্তব্যের ছবি তুলে ফেলেছিল চন্দ্রযান। ১৭ অগস্ট আরও গন্তব্য চাঁদের দিকে আরও এক ধাপ এগোয় চন্দ্রযান-৩। মূল মহাকাশযান থেকে বিচ্ছিন্ন হয় ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। সেদিক থেকে দেখতে গেলে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায় ১৭ অগস্টেই। ২৩ আগস্ট রোভার প্রজ্ঞানকে পেটের ভিতরে নিয়ে সেখানেই সফট ল্যান্ডিং শুরু করে সেটি। এদিন সন্ধে ৬টা ৪ মিনিটে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছায় বিক্রম। অর্থাৎ চাঁদের মাটিতে পা দেয় ভারত। বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসাবে চাঁদের মাটি ছোঁয়ার স্বপ্নপূরণ করে ইসরো।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.