সোমনাথ রায়: ৮ অক্টোবর বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর আদৌ কি জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের মুখে হাসি ফুটবে? নাকি আরও একবার ফিরে যেতে হবে সেই রাষ্ট্রপতি শাসনে? এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে জম্মুর অমর প্যালেস থেকে শ্রীনগরের ডাল লেক পর্যন্ত। প্রশ্ন হল, কেন ফের রাষ্ট্রপতি শাসনের দুশ্চিন্তা করছে জম্মু-কাশ্মীর? আসলে ভূস্বর্গের রাজনৈতিক যে পরিস্থিতি, তাতে আদৌ কোনও দল বা জোট সরকার গঠনের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে পারবে কিনা, সেটাই বড় প্রশ্ন।
জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় মোট আসন ১১৪টি। যার মধ্যে ২৪টি পাক অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরে। এই ২৪টি আসন সংরক্ষিত থাকায় লড়াই হবে ৯০টি আসনে। যার ৪৩টি জম্মুতে। কাশ্মীরে ৪৭টি। অর্থাৎ সরকার গড়ার ম্যাজিক ফিগার ৪৬।সাম্প্রতিক সময়ে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ, জল, খানাখন্দে ভরা রাস্তা, কাশ্মীরকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার মতো বিষয়ে যতই ক্ষুব্ধ থাক জম্মু, তবু সেই অঞ্চল থেকে বিজেপি ২০-র কম আসন পাবে, এমন স্বপ্ন দেখছেন না কংগ্রেস নেতারাও। ফলাফল একটু ভাল হলেই ১০ বছর আগে জেতা ২৫-এর হার্ডল টপকাতে বিজেপির খুব বেশি সমস্যা হওয়া তো উচিত নয়ই, কপাল ভাল থাকলে ৩০ বা তার বেশি আসনও জম্মু অঞ্চল থেকে পেয়ে যেতে পারে বিজেপি। তবু তাদের পক্ষে ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছনো সম্ভব নয়। অনুরাগ ঠাকুররা যতই বলুন, কারও সাহায্য ছাড়া একাই সরকার গড়বে বিজেপি, তা বাস্তবের মাটিতে সফল হওয়া কার্যত অসম্ভব। উপত্যকায় এখনও পর্যন্ত মাত্র ১৯টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে বিজেপি। তার মধ্যে কপাল খুব ভাল হলে ১ বা সর্বোচ্চ দু’টি আসনে জিততে পারে বিজেপি।
এবার দেখা যাক উলটো দিক, অর্থাৎ কংগ্রেস-ন্যাশনাল কনফারেন্স জোটের দিকে। খুব ভালো ফল হলেও জম্মু থেকে ‘ইন্ডিয়া’-র ঝুলিতে আসতে পারে সর্বোচ্চ ২০টি আসন। সেক্ষেত্রে মসনদে বসতে হলে কাশ্মীর অঞ্চল থেকে জোটকে পেতে হবে প্রায় ২৬টি আসন। আদতে যা বাড়াতে হবে আরও, কারণ জম্মু থেকে কংগ্রেস-এনসির এতগুলি আসন জেতা খুবই কঠিন।
কাশ্মীরের বর্তমান যা পরিস্থিতি, তাতে মেহবুবা মুফতির পিডিপি হাতে গোনা ২-৪টি আসন পেতে পারে। আসলে ২০১৪ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের সরকার গঠন করাকে ভাল চোখে নেয়নি কাশ্মীর। ফলে উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীর মতোই কাশ্মীরে হাল মুফতিদের। তবে এবার জম্মু-কাশ্মীরে তৃতীয় শক্তি হিসেবে উঠে আসছে শেখ আবদুল রশিদ ওরফে ইঞ্জিনিয়ার রশিদের আওয়ামি ইত্তিহাদ পার্টি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ১০ থেকে ১৫ জন বিধায়ক যদি রশিদের প্রতিনিধি হিসেবে বিধানসভায় যান, সেক্ষেত্রে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এমনিতেই উত্তর কাশ্মীরে যে এলাকা থেকে সংসদে গিয়েছেন রশিদ, সেই বারামুল্লা লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ১৮টির মধ্যে ১৫টিতেই এগিয়ে ছিল এআইপি। আবার দক্ষিণ কাশ্মীরের যে এলাকা একসময় সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘর বলে পরিচিত ছিল, সেখানে এআইপি ও জামাতের অঘোষিত জোটের ঝুলিতেও আসতে পারে কয়েকটি আসন। এই সমীকরণ মানলে জম্মু থেকে যদি ২০টি আসনও পায় ‘ইন্ডিয়া’ এবং রশিদের দল ও জামাত মিলে কাশ্মীর থেকে গোটা ১৫ আসনে জেতে, তবে কংগ্রেস-এনসিকে ৩০-৩২ আসনের মধ্যে জিততে হবে ২৬টিতে। যে কাজটি আর যাই হোক, কখনওই মাখনের উপর ছুরি চালানোর মত সহজ একেবারেই নয়।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি হোক বা ‘ইন্ডিয়া’ – সরকার গঠন করতে হলে কিংমেকার হতে পারেন ৮ অক্টোবর তিহার জেলে বসে থাকা ইঞ্জিনিয়ার রশিদ। জম্মু-কাশ্মীর সরকারের ইঞ্জিনিয়ারিং কীভাবে হবে, তা ঠিক হতে পারে তিহার থেকেই। এবার দেখার কোনদিকে ঝোঁকেন তিনি। ইতিমধ্যেই ‘ইন্ডিয়া’-কে সমর্থনের শর্ত জানিয়ে দিয়েছেন বারামুল্লা কেন্দ্রের সাংসদ। বলেছেন, কংগ্রেস-এনসি যদি কথা দেয় তারা ৩৭০ ধারা পুনর্বহাল করবে, তবে তিনি সমর্থন জানাবেন জোটকে। আবার তাঁর ও বিজেপির যা রাজনৈতিক মতাদর্শ, তাতে দুই দলের কাছাকাছি আসা উচিত নয়। যদিও এক দশক আগে এভাবেই পিডিপি-ও এসেছিল। তবে তাদের রাজনৈতিক পরিণতি কী হয়েছে, সেদিকেও নিশ্চয়ই নজর থাকবে রশিদের। এত ধরনের সমীকরণ ভেবেই চিন্তা মুক্ত হতে পারছেন না জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.