সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঝাড়খণ্ডের মসনদে ফিরতে চলেছেন হেমন্ত সোরেনই। শনিবার গণনা শুরু হতেই স্পষ্ট হতে থাকে এই ট্রেন্ড। যদিও একদম শুরুতে টক্কর চলছিল কাঁটায় কাটায়। পরে ক্রমেই পিছিয়ে পড়তে থাকে বিজেপি। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জেএমএম জোট তথা ইন্ডিয়া ৫৭টি আসনে এগিয়ে। সেখানে বিজেপি জোট তথা এনডিএ এগিয়ে ২৩টি আসনে। অন্যান্য ১। কিন্তু কেন এমন পরিস্থিতি হল? বিজেপি প্রচারে কোনও খামতি রাখেনি। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ, দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্রের মতো ইস্যুতে সরব হয়েছে বারে বারে। তবু হল না শেষরক্ষা। আরবসাগরের পাড়ে দুরন্ত পারফরম্যান্স সত্ত্বেও এখানে দেখা গেল অন্য ছবি। কিন্তু কেন? এর পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। যার মধ্যে অন্যতম শরিকি বোঝা।
এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, বিজেপি যেখানে ২১টি আসনে এগিয়ে, সেখানে তাদের দুই জোটসঙ্গী লোক জনশক্তি পার্টি (রামবিলাস), জেডিইউ এগিয়ে একটি করে আসনে। আর এখানেই সমস্যা। শরিকি দলগুলিকে আসন ছাড়াই বিজেপির বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হতে চলেছে বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের। অথচ বিজেপি হেমন্ত সোরেনের পুত্রবধূ সীতা সোরেন থেকে তাঁর ছায়াসঙ্গী চম্পাই সোরেন সকলকেই জেএমএম শিবির থেকে সরিয়ে এনেছিল। মনে করা হচ্ছে, এই ‘দলবদলু’দের পক্ষে ভোট দিতে চাননি ভোটারদের একটি বড় অংশ। আর তারই খেসারত দিতে হল বিজেপিকে। বরং তারা আরও বেশি আসনে লড়লে এর চেয়ে ভালো ফল হতেও পারত। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আর একটি বড় ফ্যাক্টর ‘সহানুভূতি’। এবছরের ৩১ জানুয়ারি ইডি গ্রেপ্তার করেছিল ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে। তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতিতে জড়ানোর অভিযোগ ছিল। আর এটাকেই বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল বিজেপি। আর এখানেই দুরন্ত ‘মাস্টারস্ট্রোক’ খেলে দিয়েছেন হেমন্ত। তাঁর স্ত্রী কল্পনা সোরেন লাগাতার স্বামীর গ্রেপ্তারি নিয়ে বিজেপিকে তোপ দেগেছেন। পাশাপাশি অন্য জেএমএম নেতানেত্রীরাও একই ভাবে আক্রমণ চালিয়ে গিয়েছেন। মনে করা হচ্ছে এই ‘ভিক্টিম কার্ড’ই ‘ট্রাম্প কার্ড’ হয়ে দেখা দিল। শাসক জোট প্রচারে দাবি করেছে, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে বিজেপি ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করতে চাইছে।
আর একটি ফ্যাক্টর গেরুয়া দলের কোনও মুখ্যমন্ত্রীর মুখ ছিল না। ফলে সেটাও বিভ্রান্ত করেছে ভোটারদের। রাজ্যে এনডিএর নেতৃত্বে কে থাকবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর না মেলাটা বিজেপির বিরুদ্ধে গিয়েছে। কেননা অন্যদিকে শাসক জোট বরাবরই পরিষ্কার করে দিয়েছে তাদের মুখ হেমন্ত সোরেনই। এরই পাশাপাশি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গ তুললেও সেটা দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারেনি বিজেপি। ঝাড়খণ্ডের কিছু অংশ, বিশেষ করে সাঁওতাল পরগনা ‘মিনি বাংলাদেশ’ হয়ে গিয়েছে- বিজেপির এমন দাবিকে নস্যাৎ করে শাসক জোট প্রচারে বুঝিয়ে এসেছে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। আর সেটাই শেষপর্যন্ত বোধহয় বিশ্বাস করেছেন ভোটাররা। কেননা ব্যালট বাক্সের ফল সেদিকেই ইঙ্গিত করছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.