সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সব আশা শেষ। কোনও ব্যাংক টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আপাতত ডানা গুটিয়ে নিল জেট এয়ারওয়েজ। বুধবার রাত সাড়ে দশটা থেকে বন্ধ জেটের উড়ান পরিষেবা-সহ সব কাজকর্ম। সংস্থা বাঁচাতে আপৎকালীন তহবিলের জন্য ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছিল ওই বিমান সংস্থা। এখনই ৪০০ কোটি টাকা সাহায্য দেওয়ার আরজি জানিয়েছিল। কিন্তু সেই আরজি খারিজ করে দিয়েছে স্টেট ব্যাংকের নেতৃত্বাধীন ব্যাংকগুলির কনসর্টিয়াম। গোটা বিষয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন কর্মীরা।
জেট একসময় ভারতের প্রথম সারির বিমান সংস্থাগুলির অন্যতম ছিল। সেই সংস্থাই গত কয়েকমাস ধরে ধুঁকছে। কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না ওই সংস্থা। ফলে ক্রমশ কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। বুধবারই কলকাতা বিমানবন্দরে জেটের কর্মীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। অর্থাভাবে ডিসেম্বর থেকে জেটের পরিষেবা ক্রমশ কমতে শুরু করেছিল। হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র বিমান চলাচল করেছে। ১৮ এপ্রিল থেকে জেটের আন্তর্জাতিক পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আপাতত ব্যবসা গোটাল জেট। জেটকে বাঁচাতে ঋণদাতা ব্যাংকগুলির তরফে ওই সংস্থাকে ১৫০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। তাই জেটের তরফে ৪০০ কোটি টাকা আপৎকালীন তহবিল হিসেবে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা না মেলায় ঝাঁপ বন্ধ হয় জেটের। ২০১৪ সালের মে মাস থেকে জেট এয়ারওয়েজ ভারতের ১৩ তম সংস্থা যারা উড়ান বন্ধ করে দিল।
সমস্যা সমাধানের জন্য বৃহস্পতিবার জরুরি বৈঠক বসেন জেটের পাইলট, ইঞ্জিনিয়াররা। গত ৩ মাস ধরে বেতন বকেয়া থাকায় বৈঠকে বসেন ১১০০ পাইলট এবং ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু সেখানেও কোনও সমাধান সূত্র বেরোয়নি। কর্মীরা গ্র্য়াচুইটি পাবেন কিনা, সে বিষয়েও আশ্বস্ত করা সম্ভব হয়নি।
দেউলিয়ার জেরে গত সপ্তাহেই কার্যত সমস্ত আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ রাখে জেট এয়ারওয়েজ। করণ চোপরা বলেন, কর্মীদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অনেকদিন ধরেই সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে জেট। কিন্তু সব প্রচেষ্টা বিফলে গিয়েছে। এই মুহূর্তে ১১৯টি উড়ানের মধ্যে ১১টি উড়ান চালু ছিল। কিন্তু বুধবার রাত থেকে পুরোপুরি বন্ধ সংস্থার সব উড়ান। সংকট কাটাতে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছে ন্যাশনাল অ্যাভিয়েটরস গিল্ড কর্তৃপক্ষ।
জেট আগেই জানিয়েছিল, সংস্থার পুনর্গঠনের জন্য দরকার ৯,৫৩৫ কোটি টাকা। পরিষেবা চালু রাখতে স্টেট ব্যাংকের নেতৃত্বাধীন ঋণদাতা গোষ্ঠীর (এসবিআই, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক, কানাড়া ব্যাংক, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাংক, ইলাহাবাদ ব্যাংক) কাছে ৪০০ কোটি টাকার আপৎকালীন তহবিলের আরজিও জানানো হয়েছিল। কর্মীদের পাঠানো মেল-এ জেট সিইও বিনয় দুবের আশ্বাস দিয়েছিলেন, সংস্থাকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে পুঁজি চাওয়া হয়েছে। অতএব কর্মবিরতিতে না গিয়ে পাইলট ও ইঞ্জিনিয়াররা যেন ধৈর্য রাখেন।
এই মুহূর্তে বাজারে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার দেনা রয়েছে জেটের। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক জানিয়েছে, ঋণদাতারা জেটের পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা আনতে দায়বদ্ধ। তবে কোনও কিছুই চূড়ান্ত না হওয়ায় সবই আলোচনার স্তরে রয়েছে। মঙ্গলবারই মুম্বইয়ে জেট এয়ারওয়েজের বোর্ড মিটিং হয়। জানা গিয়েছিল, দ্রুত সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের সচিবকে। এদিকে মঙ্গলবারই বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে ১৮.৫৬% পড়ে যায় জেটের শেয়ার দর। বিএসই দাঁড়ায় ২৪১.৮৫ টাকায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.