সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে হবে জম্মু-কাশ্মীরকে (Jammu and Kashmir)। আয়োজন করতে হবে বিধানসভা নির্বাচন। সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) এই কড়া নির্দেশের পর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় প্রায় এক দশক বাদে অবশেষে নিজেদের বিধায়ক, মুখ্যমন্ত্রী, সরকার বেছে নেওয়ার ক্ষমতা পেতে চলেছেন দেশের উত্তরতম প্রান্তের নাগরিকরা। ৩৭০ রদের পর ‘ক্ষুব্ধ’ ভূস্বর্গের মন পেতে তাই একের পর এক উপহারের ডালি সাজাতে চাইছে বিজেপি (BJP)। যার অন্যতম বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল ব্রিজ- চিনার ব্রিজ। রেলমন্ত্রক সুত্রের খবর অনুযায়ী দু’ দশকের অপেক্ষা কাটিয়ে জুলাই-আগস্টেই উদ্বোধন হয়ে যাবে আইফেল টাওয়ারের চেয়েও উঁচু এই ব্রিজের। যার ফলে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে রেল যোগাযোগ। শুধু তাই নয়, অবন্তীপোরার এইমসের উদ্বোধনও হয়ে যাওয়ার কথা জুন-জুলাইয়ে।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পর থেকেই একটু একটু করে আশায় বুক বাঁধছে জম্মু-কাশ্মীর। ২০১৪ সালে শেষবার বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল রাজ্যে। নির্বাচনে ত্রিশঙ্কু ফল আসার পর দীর্ঘ আলাপ আলোচনা করে ২০১৫ সালের ১ মার্চ বিজেপির সঙ্গে জোট করে সেবার মসনদে বসেছিলেন পিডিপির মুফতি মহম্মদ সইদ। তাঁর মৃত্যুর পর মাস তিনেক রাষ্ট্রপতি শাসন কাটিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হন সইদ কন্যা মেহবুবা মুফতি। ৩৭০ ধারা মেনে এতদিন কাশ্মীরে সরকারের মেয়াদ ছিল ছ’ বছরের। সেই হিসাব অনুযায়ী ২০২১ সালের শেষদিকে হওয়ার কথা ছিল বিধানসভা নির্বাচন।
যদিও ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন পাস হয়ে যাওয়ার পর স্বাধীন রাজ্যের তকমা হারিয়ে এখন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হয়ে রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর। তাদের অংশ থেকে বাদ গিয়েছে লাদাখ। এতদিন বিভিন্ন জটিলতায় বিধানসভা নির্বাচন না হওয়ায় গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন অনেকে। সেই মামলাতেই জাতীয় নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্র সরকারকে সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের আয়োজন করতে। এখন সেদিকে তাকিয়েই দিন গুনছেন স্থানীয় মানুষ। রাজনৈতিক দলগুলিও।
চিরাচরিত প্রথা ভেঙে এবার উপত্যকায় ভোটের হার অনেক বেশি। শ্রীনগর, বারামুল্লা এবং অনন্তনাগ-রাজৌরি কেন্দ্রে যথাক্রমে ৩৮.৪৯%, ৫৯.১০% এবং ৫৫.৪০% ভোটার নিজেদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন। লোকসভা নির্বাচনেই এত মানুষ ভোট দিলে, বিধানসভায় তা আরও বাড়বে বলেই মনে করছে কাশ্মীরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। বিজেপি ও তাদের সমমনস্ক দলগুলির বক্তব্য, ৩৭০ ধারার অভিশাপ কাটানোয়, এলাকায় শান্তি ফেরায়, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভোট বয়কট দেওয়ার হিম্মত না থাকাতেই এত বেশি ভোটদান। পালটা এনসি, পিডিপি, সিপিএম, কংগ্রেসের বক্তব্য, ৩৭০ ছিনিয়ে নেওয়ার জবাব দিতেই ইভিএম-এ জবাব দিয়েছেন কাশ্মীরিরা। সঠিক কারণের খোঁজ মিলবে ৪ জুন, তবে তার আগে নিজেদের আরও গুছিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। কাশ্মীরে বিজেপির প্রধান মুখপাত্র আলতাফ ঠাকুরের বক্তব্য, “মোদিজির জমানায় যেভাবে উন্নয়ন হয়েছে কাশ্মীরের, তা সবাই দেখতে পাচ্ছে।
আগে কাশ্মীর থেকে জম্মু যেতে ১২ ঘণ্টা লাগত, এখন চার ঘণ্টাতেই পৌঁছিয়ে যাওয়া যায়। এমন নজির প্রচুর তৈরি হয়েছে। চিনার রেল ব্রিজ, এইমস উদ্বোধন হয়ে গেলে তার সুফলও পাবেন স্থানীয়রা। বিধানসভা নির্বাচনে দু’ হাত ভরে আশীর্বাদ দেবেন বিজেপিকে। এবার আর কারও সঙ্গে জোট বেঁধে নয়। ইতিহাস তৈরি করে ক্ষমতায় আবে বিজেপি।” ন্যাশনাল কনফারেন্স মুখপাত্র ইমরান নবি জানালেন, “নির্বাচনের আগে এরকম আরও চমক দিতে চাইবে বিজেপি। কিন্তু লাভ হবে না। মানুষ নিজেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।”
পিডিপি প্রধান মুখপাত্র সোহেল বুখারির মতে, “৩৭০ ধারার অবসান ঘটিয়ে কাশ্মীরিয়তকে অপমান করেছে বিজেপি। উপত্যকায় ওদের কোনও স্থান নেই।” দীর্ঘদিনের সিপিএম বিধায়ক ইউসুফ তারিগামি বললেন, “চিনার রেল ব্রিজের সরকারি অনুমোদন দেয় বাজপেয়ি সরকার। বাজেট ঠিক করে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় ড. মনমোহন সিংয়ের প্রথম সরকারের সময়। যেখানে আমরাও ছিলাম গুরুত্বপূর্ণ শরিক। বরং মোদির আমলে, তার সদিচ্ছার অভাবে বারেবারে পিছিয়ে গিয়েছে ডেডলাইন। কাজেই এই ব্রিজ উদ্বোধন করে ওরা নিজেদের পালে হাওয়া টানতে পারবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.