সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পুলওয়ামা হামলা এবং তার পরবর্তী সময়ে সন্ত্রাসবাদ দমনে কড়া পদক্ষেপ হিসেবে জম্মু-কাশ্মীরের জামাত-ই-ইসলামিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সুর চড়িয়েছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি। তাঁর হুঁশিয়ারি ছিল, উপত্যকায় জামাতের মতো সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার ফল ভুগতে হবে কেন্দ্রকে। মুফতিকে যথাযথ জবাব দিতে এবার কেন্দ্রের তরফে পেশ করা হল এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, জামাত-ই-ইসলামি (জম্মু-কাশ্মীর)-এর সঙ্গে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। জামাত নেতারাও নিয়মিত আইএসআই কর্তাব্যক্তিদের কথোপকথন চলে।
[সন্ত্রাস নয়, এই ইস্যুকেই লোকসভার আগে গুরুত্বপূর্ণ বলছে সাধারণ মানুষ]
উপত্যকায় জামাতকে নিষিদ্ধ করার বিরোধিতায় মেহবুবা মুফতি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, জামাত সদস্যরা বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত। তাতে রাজ্যবাসীর উপকার হয়। এই পরিস্থিতিতে নিষিদ্ধ করা হলে, দরিদ্র কাশ্মীরিরা বহু ছোটখাটো উপকার থেকে বঞ্চিত হবে। কিন্তু সম্প্রতি গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে অন্য কথা। দিল্লির এক উচ্চপদস্থ কর্তাকে উদ্ধৃত করে পিটিআই জানাচ্ছে, সামাজিক উপকার দূরে থাক, পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের জোগানো অস্ত্র দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় কিশোর, যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। উদ্বুদ্ধ করা হয় জেহাদে। জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের মগজধোলাইয়ের জন্য কাজে লাগানো হয় তাদের যুব সংগঠন জামিয়াত-উল-তুলবাকেও। আর এই সমস্ত কিছুর নেপথ্যে নাম উঠে আসছে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হুরিয়ত কনফারেন্সের নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানির। যিনি প্রথম জামাতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উপত্যকার বিভিন্ন অংশে ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে উসকানি দিয়েছিলেন। কারগিল যুদ্ধের সময়ে তিনি ভারতে থাকা সত্ত্বেও টানা পাকিস্তানকে সমর্থন দিয়েছেন। ফলে জামাত-আইএসআই যোগে গিলানির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। পুলওয়ামা হামলার পর গিলানি, মিরওয়াইজ ফারুক-সহ একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে কড়া বার্তা দিয়েছে কেন্দ্র।
জম্মু-কাশ্মীরের জামাতকে নিয়ে এই গোয়েন্দা রিপোর্টে মোটেই বিস্মিত নন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, কাশ্মীর উপত্যকা জামাতের কাজের জন্য সবচেয়ে নরম মাটি। প্রাকৃতিক পরিবেশের সুযোগ নিয়ে একাধিক শিবির তৈরি, গোপনে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া, তলেতলে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা– এসব কাজের জন্য দেশের উত্তরতম প্রান্তের রাজ্যটি ছাড়া আর কোনটাই বা আদর্শ হতে পারে? এমনকী পিটিআইকে কেন্দ্রের ওই আধিকারিক এও জানিয়েছেন, কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কম চেষ্টা করেনি জামাত। সেই লক্ষ্যেই আইএসআই এবং পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে তারা যোগাযোগ রেখে চলেছে। সংগঠন চালানোর অর্থ জোগাড় করতে তারা পাকিস্তান, পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং বাংলাদেশের জামাত সংগঠনকেও সঙ্গে নিয়েছিল বলে খবর। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, জামাতকে নিষিদ্ধ সংগঠন ঘোষণা করে দেশের মাটিতে সন্ত্রাসবাদ দমনে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ নিল কেন্দ্র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.