সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নজিরবিহীন মহাকাশ কূটনীতির দোরগোড়ায় ভারত৷ নয়াদিল্লি ৪৫০ কোটি টাকার একটি বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে ‘সমান্তরাল কূটনীতি’র পরিকল্পনা নিয়েছে৷ আগামী ৫ মে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-র জিও-সিংক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্যালস (জিএসএলভি)-৯-এ চেপে মহাকাশে পাড়ি দেবে সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট৷ প্রতিবেশী দেশগুলি আগামী ১২ বছর বিনা খরচে এই উপগ্রহ থেকে যোগাযোগ পরিষেবা পাবে৷
রবিবার বেতারে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে ৩১তম পর্বে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই পরিকল্পনার উল্লেখ করে বলেছেন, ভারতের ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ প্রকল্পের অঙ্গ হিসাবে প্রতিবেশী দেশগুলির জন্য এটি হবে এক ‘অমূল্য উপহার৷’ সার্ক গোষ্ঠীভুক্ত আটটি সদস্য দেশের মধ্যে সাতটিই এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত৷ একমাত্র পাকিস্তান ভারতের ‘উপহার’ অস্বীকার করে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে৷
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বাড়াতে ভারতের এই ধরনের কূটনীতি এটাই প্রথম৷ শুধু তাই নয়, এর আগে দক্ষিণ এশিয়ার কোনও দেশই মহাকাশ গবেষণা ও দক্ষতাকে কূটনীতিতে ব্যবহার করেনি৷ একটি দেশ নিজের উপগ্রহ অন্য দেশকে ব্যবহার করতে দেওয়ার মধ্যে কোনও অভিনবত্ব নেই৷ কিন্তু একটি দেশ নিজের খরচে পাঠানো উপগ্রহ অন্য কোনও দেশকে একেবারে নিখরচায় ব্যবহার করতে দেওয়ার মধ্যে নতুনত্ব রয়েছে৷ এর আগে একসঙ্গে ১০৪টি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠিয়ে ‘রেকর্ড’ গড়েছে ভারত৷ ৫ মে ‘সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট’ মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি ইতিহাস রচিত হবে৷ ২০১৪ সালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সার্ক সম্মেলনে ঘোষণা করেছিলেন, “ভারতের প্রতিবেশীদের একটি উপহার দেওয়া হবে৷” প্রথমে উপগ্রহটির নামও ঠিক হয়েছিল ‘সার্ক স্যাটেলাইট’৷ কিন্তু পরে পাকিস্তান এর অংশ হতে না চাওয়ায় উপগ্রহের নাম করা হয় ‘সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট’৷
PM Sh @narendramodi speaks about South Asian satellite & how science brings us closer. #MannKiBaat @isro @PMOIndia https://t.co/IW5RD7PDqj
— Dr Jitendra Singh (@DrJitendraSingh) April 30, 2017
পাঠানকোট ও উরিতে জঙ্গি হামলার পর ভারত-পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে তিক্ততা সৃষ্টি হয়েছে৷ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদতের অভিযোগ তুলে ভারত গতবছর ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত সার্ক সম্মেলন বয়কট করে৷ সেক্ষেত্রে নয়াদিল্লিকে সমর্থন জানিয়ে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ-সহ সার্ক-এর অন্য সদস্য দেশও ওই সম্মেলন বয়কট করে৷ এর ফলে সার্কেও কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তান৷ এবার সার্ক স্যাটেলাইট বা সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে আরও একবার একঘরে হয়ে পড়ল পাকিস্তান৷
বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র গোপাল বাগলে বলেছেন, “ভারত সবসময়েই প্রতিবেশী দেশেগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়৷ নিজের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলিরও বিকাশের অংশ হতে চায়৷ এই প্রকল্প তেমনই একটি পদক্ষেপ৷” কূটনৈতিক মহলের মতে, ভারতের দেওয়া উপগ্রহের সুযোগ না নিয়ে পাকিস্তান নিজেরই ক্ষতি করল৷ বিনা খরচে ভারতের এই অত্যাধুনিক উপগ্রহের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সাতটি দেশ যখন এগিয়ে যাবে, তখন পিছনে পড়ে থাকবে তারা৷
Also talked about the South Asia satellite & how it is a manifestation of ‘Sabka Saath, Sabka Vikas.’ https://t.co/DsC41zX9s4 #MannKiBaat
— Narendra Modi (@narendramodi) April 30, 2017
কাঠমাণ্ডু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদি ওই উপগ্রহের প্রস্তাব দেওয়ার পর সব সার্ক-সদস্য দেশই তা মেনে নিয়েছিল৷ কিন্ত্ত ২০১৫ সালে পাকিস্তান জানিয়ে দেয়, তারা এই প্রকল্পে যোগ দেবে না৷ কারণ, তাদের আলাদা মহাকাশ কর্মসূচি রয়েছে৷ আসলে, অভিজ্ঞমহল বলছে, ওই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভারত ‘চরবৃত্তি’ করতে পারে আশঙ্কা থেকেই পাকিস্তান তা থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করেছে৷
প্রথমে ইসরোর বিজ্ঞানীরা এই উপগ্রহটি ২০১৬ সালেই মহাকাশে পাঠাতে চেয়েছিলেন৷ ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এই উপগ্রহটি ব্যবহার করতে পারবে, তেমন ভাবেই এটি তৈরি করা করেছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা৷ কিন্তু মাঝপথে পাকিস্তান প্রকল্পে থাকতে অস্বীকার করায় কাজে দেরি হয়ে যায়৷ কারণ নতুন করে ফ্রিকোয়েন্সি কো-অর্ডিনেশন করতে হয়৷ ইসরোর চেয়ারম্যান এ এস কিরণকুমার জানিয়েছেন, ২,১৯৫ কেজি ওজনের উপগ্রহটি ১২ কেইউ ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার৷ এই উপগ্রহ মূলত টেলি যোগাযোগ এবং দুর্যোগ পূর্বাভাস-সংক্রান্ত৷ সার্ক-দেশগুলির ইন্টারনেট পরিষেবা ও ডিটিএইচ পরিষেবাতেও এই স্যাটেলাইট স্বাধীনভাবে ব্যবহার করা যাবে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.