সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইস্তানবুল হতে হল না হায়দরাবাদকে৷ বুধবার জঙ্গিদের গোপন ঘাঁটিতে অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে ১১ জন দায়েশ জঙ্গিকে পাকড়াও করলেন ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির গোয়েন্দারা৷ ওই ১১ জন দেশের বিভিন্ন শহরে নাশকতা চালানোর ছক কষছিল৷ ‘খিলাফত’ (ইসলামিক সাম্রাজ্য) গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে অসংখ্য নাগরিক ও ভিভিআইপি-কে হত্যার ছক কষছিল জঙ্গিরা৷ পাশাপাশি হায়দরাবাদে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করারও ছক কষছিল ওই জঙ্গিরা৷ চারমিনার চত্বরে ভাগ্যলক্ষ্মী মন্দিরে গোমাংস ফেলে রেখে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানো ছিল জঙ্গিদের টার্গেট৷ পবিত্র রমজান মাসেই এই দাঙ্গা বাধানোর ছক কষেছিল জঙ্গিরা৷
সিরিয়া থেকে আসা নির্দেশের ভিত্তিতে নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ করত এই জঙ্গিরা৷ এরা সবাই নিজেদেরকে দায়েশ প্রধান আবুবকর আল বাগদাদির অনুগামী বলে মনে করে৷ এরা আদতে জুনুদ-আল-খলিফা-এ-হিন্দের সদস্য৷ এই সংগঠন হল ইসলামিক স্টেটের ভারতীয় শাখা৷ সিরিয়ার শীর্ষস্তরের আইএস নেতারাই হায়দরাবাদের এই গোষ্ঠীকে পরিচালনা করে৷ গোয়েন্দাদের. সন্দেহ, শফি আরমার নামে এক শীর্ষ আইএস জঙ্গি জুনুদ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে৷ এরা ভারতে বসে ‘মাল-ই-গানিমত’ তোলা আদায়, মুক্তিপণ আদায়-সহ নানাভাবে তহবিল সংগ্রহ করত৷ তার জন্য তারা কয়েকজন সেলেব্রিটিকেও অপহরণের ছক কষেছিল৷ কারণ আইএস নেটওয়ার্ক বাড়াতে গেলে দরকার বিপুল অর্থের৷ সেই অর্থের জোগান বাডা়তেই এই গানিমত আদায় করার কথা ভেবেছিল তারা৷
এনআইএ-র দাবি, মঙ্গলবার রাতে তুরস্ক বিমানবন্দরে আত্মঘাতী হামলা চালানোর পরেই জঙ্গিদের টার্গেট ছিল ভারতে নাশকতা করার৷ আইএস ঘাঁটিতে অভিযান চালাতে আর দিনকয়েক দেরি হয়ে গেলেই ঘটে যেত অঘটন৷ তুরস্ক ও ব্রাসেলসের ছকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরে আইএস হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ কারণ হায়দরাবাদের মডিউল ধরা পড়লেও বিপদ এখনও কাটেনি৷ সূত্রের খবর, সোশ্যাল সাইটগুলির উপর নজরদারি চালিয়েই এই সাফল্য পেল এনআইএ৷ এনআইএ-এর আইজি এস কে সিং স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হায়দরাবাদ শহরের ১০টি জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালান৷
সূত্রের খবর, ওই গোপন ডেরাগুলি থেকে বিস্ফোরক, বিস্ফোরক তৈরির মালমশলা, প্রচুর পরিমাণ তরল ও গুঁড়ো রাসায়ানিক, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে৷ মিলেছে ল্যাপটপ, ধর্মীয় পুস্তিকা, নগদ ১৫ লাখ টাকা৷ আয়োজন দেখে গোয়েন্দারা নিশ্চিত, এরপর ঠিক কী কী হতে যাচ্ছিল৷ এই ঘটনায় তেলেঙ্গনা সরকারের উপর আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধী বিজেপি৷ সংখ্যালঘু তোষণ, প্রশাসনিক গাফিলতি ও জঙ্গিদের নিরাপদ ঘাঁটি গড়ে তোলার জন্য তারা মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও-এর সরকারকেই দুষেছে৷ “কী করে আইএস জঙ্গিদের মুক্ত স্বর্গ হয়ে উঠল হায়দরাবাদ? মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী কী জবাব দেবেন? প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি মুখপাত্র কৃষ্ণসাগর রাও৷
পুলিশ জানিয়েছে, যারা ধরা পড়েছে তারা হল, মহম্মদ ইলিয়াস ইয়াজদানি, মহম্মদ ইব্রাহিম ইয়াজদানি, হাবিব মহম্মদ, মহম্মদ ইরফান, আবদুল্লা বিন আহমেদ আল আমুদি, সৈয়দ নিয়ামতুল্লা হুসেইনি, মুজফ্ফর হুসেন রিজওয়ান, মহম্মদ আতাউল্লা রহমান, আবদুল কাদের মহসিন মেহমুদ, এ এম আজহার, মহম্মদ আরবাজ আহমেদ৷ এদের প্রত্যেকের বয়স ২৪ থেকে ৩৫ -এর মধ্যে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.