সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘রাইসিনা বার্তালাপ-২০২০’ শীর্ষক সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি এসেছেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী জাভেদ জরিফ। এর ফাঁকেই প্রধানমন্ত্রী মোদি ও জয়শংকরের সঙ্গে ইরান-মার্কিন সংঘাত নিয়ে কথা বলেছেন জরিফ বলে জানা গিয়েছে। তার আগে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ বৈঠক করেন তিনি।
জরিফ রাইসিনা বার্তালাপ আলোচনাচক্রে তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আপনারাও তো সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছেন। আমরাও লড়ছি ইসলামিক স্টেট ও আল কায়দার বিরুদ্ধে। সেই লড়াইয়ের প্রধান নেতা ছিলেন জেনারেল কাসেম সোলেমানি। তাঁকেই হত্যা করল আমেরিকা। তাহলে বুঝুন আমাদের লড়াই সাচ্চা নাকি আমেরিকার লড়াই সাচ্চা? সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা প্রধান সেনাপতিকেই মেরে আমেরিকা কি বার্তা দিল গোটা পশ্চিম এশিয়ার মানুষকে? সোলেমানির মৃত্যুর পর ভারতের ৪৩০টা শহরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে। ভারতের মানুষও এর প্রতিবাদ করেছেন। তাহলে আমাদের ভুলটা কোথায়? আমেরিকা ইরান বা ইরাকের মানুষের চোখ দিয়ে পশ্চিম এশিয়ার সমস্যা দেখছে না। দেখছে নিজের মতো করে। আর আমাদের সমস্যাটা এখান থেকেই শুরু। কারণ আমেরিকা ইসলামিক স্টেটের বদলে আমাদের সন্ত্রাসবাদী মনে করছে।’
উল্লেখ্য, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যুযুধান দুই দেশ ইরান ও আমেরিকা ভারতের বন্ধু। চিন-পাকিস্তান যুগলবন্দিকে রুখতে নিজের স্বার্থে ভারতের দরকার ইরানকে। দরকার আমেরিকাকেও। তাই ইরান-আমেরিকা সংঘাতে আখেরে ক্ষতি ভারতেরও। কারণ কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে হলে বালুচিস্তানের স্বাধীনতা নিয়ে ভারতের কৌশলগত অবস্থান মজবুত করতে হলে সারা বছর পাশে দরকার ইরানকে। সস্তায় তেল, চাবাহার সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা দিতে ইরানকে দরকার। অন্যদিকে, চিনের আধিপত্যবাদ এবং পাকিস্তানকে সামনে রেখে চিনের ভারত বিরোধী অবস্থানকে প্রতিহত করতে দরকার আমেরিকাকেও। তাই ইরান-আমেরিকার সংঘাত দূর করতে, দুই দেশকেই আলোচনার টেবিলে বসাতে ভারত অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ইরানও ভারতের শান্তি প্রস্তাব লুফে নেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ভারতের এই মধ্যস্থতা ও শান্তির উদ্যোগে নারাজ হননি। এই পরিস্থিতিতে বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমাতে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানান ইরানের বিদেশমন্ত্রীকে।
ইরানের বিদেশমন্ত্রী জাভেদ জরিফ বুধবার নয়াদিল্লি পৌঁছেই দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। মোদি তাঁকে জানান, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পেরাতে ভারত বদ্ধপরিকর। ভারত চায় ইরান এবং আমেরিকা দুই দেশই একে অপরের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করুক। দুই দেশই নিজেদের বিরত রাখুক। তারপর শুরু হবে শান্তিপ্রক্রিয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.