সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: বহু প্রতীক্ষিত রাম মন্দির নির্মাণের নেপথ্যের এক কারিগর তিনি। দেশের ইতিহাসে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা আইনি লড়াইয়ের প্রধান মামলাকারী তিনি। ইকবাল আনসারি (Iqbal Ansari) নামেই তাঁর পরিচিতি। গত বছর মামলার নিষ্পত্তি করে সুপ্রিম কোর্ট যখন রাম মন্দির (Ram Temple) নির্মাণের পক্ষে রায় দিয়েছিল, সেই রায়কে অন্তর থেকে স্বাগত জানিয়েছিলেন তিনি। এবার মন্দির নির্মাণের জন্য সেবকদের অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগকেও স্বাগত জানালেন। বললেন, তিনিও তহবিলে দান করবেন। তবে তা নিয়ে প্রচার তাঁর নাপসন্দ।
১৪ মাস আগে যেদিন বিতর্কিত মামলায় রায় দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত, পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই সেদিন অযোধ্যা (Ayodhya) ঘিরে তৈরি হয়েছিল ছোটখাটো এক দুর্গ। প্রত্যেক গলির মুখে ব্যারিকেড, শহরজুড়ে ১৪৪ ধারা। কোথাও কোনও জটলা দেখলেই ভিড় হালকা করে দিচ্ছিলেন উর্দিধারীরা। চাপা টেনশনে এদিক-ওদিক ঘুরছিলেন খবরের সন্ধানে অযোধ্যায় আসা ‘বাইরের’ নাগরিকরা। কিন্তু শহরবাসীর মধ্যে টেনশনের নামগন্ধও ছিল না। দেখে কে বলবে যে, এই শহরকে কেন্দ্র করেই ভারতীয় ইতিহাসে রয়েছে এক কালো অধ্যায়? কে বলবে যে, অযোধ্যা নাম মনে এলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, দাঙ্গার দুঃস্বপ্ন?
সেদিন শহরের অন্যান্য অংশের থেকেও যেন বেশি শান্ত ছিল আনসারির বাড়ির গলি। ঘরের সামনের ছোট্ট অফিসে তিনি বসেছিলেন কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে। রায়কে স্বাগত জানিয়ে সেদিন বলেছিলেন, “আমরা ভারতীয়। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে মান্যতা দেওয়া প্রতিটি দেশবাসীর নৈতিক কর্তব্য। আমিও তাই এই রায় মাথা পেতে নিচ্ছি। সত্যি বলতে কী, আমাদের উপর দায়টা হয়ত একটু বেশিই। বাদী হয়ে এই রায় যদি আমি খোলামনে মেনে নিই, তাহলে দেশের বাকি মুসলমান ভাইরাও তা করবেন।”
প্রায় সওয়া এক বছর বাদেও একই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেল আনসারির গলায়। মন্দির নির্মাণের অর্থ সংগ্রহ প্রসঙ্গে অযোধ্যা থেকে সংবাদ প্রতিদিন-কে জানালেন, “এত বড় একটা কর্মকাণ্ড হচ্ছে, তার জন্য অনুদান তো লাগবেই। এতে তো অন্যায়ের কিছু নেই। এই উদ্যোগকে অনেক আগেই সমর্থন জানিয়েছি।”
এরপরই এল প্রশ্ন – ”আপনিও কি অনুদান দেবেন?” উত্তরে যা বললেন, তা প্রশংসনীয় তো বটেই, উদার এক বার্তাও বটে। আনসারি বললেন, “দেখুন আদালত যেদিন রায় দিয়েছিল, সেদিনই বলেছিলাম যে যদি আমায় যোগ্য মনে করে কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে মন্দির তৈরির জন্য দরকার হলে মাথায় করে ইট বয়ে দেব। রইল বাকি অনুদানের কথা। তা তো নিজের সাধ্যমতো আমি অবশ্যই দেব। কিন্তু তা আমি টেলিভিশন, রেডিওর সামনে প্রচার করে দেব না। দান বা অনুদান মন থেকে করা উচিত। তার জন্য প্রচারের কী প্রয়োজন?” এমন উত্তর দিতে পারেন কেবল ইকবাল আনসারিই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.