সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিন দশক আগে গুজরাটের জামনগর জেলায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হল প্রাক্তন আইপিএস অফিসার সঞ্জীব ভাট এবং পুলিশ কনস্টেবল প্রবীণ সিং জালার। একই সঙ্গে দোষী সাব্যস্ত আরও পাঁচ পুলিশকর্মীকে দু’ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। ২০১৫ সালে চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন ১৯৮৮-র ব্যাচের এই আইপিএস অফিসার। পুলিশ হেফাজতে এই মৃতু্যর ঘটনায় সঞ্জীব ভাট ও ছয় পুলিশকর্মীকে বুধবার দোষী সাব্যস্ত করেন গুজরাতের জামনগর আদালতের দায়রা বিচারক ডি এন ব্যাস।
[আরও পড়ুন: মুম্বইয়ের ধাঁচে হামলার ছক কষছে আইএস, কেরলে জারি চূড়ান্ত সতর্কতা]
চাকরি জীবনের শুরু থেকেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সঞ্জীবের নাম। ১৯৯০ সালে জামনগর জেলায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে ছিলেন সঞ্জীব। ১৯৯০ সালে বিহারে বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবানীর রথ আটকে দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল লালুপ্রসাদ যাদব সরকার। আডবানী গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশের নানা জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে ছিল। জামনগর জেলার যোধপুর শহরে দাঙ্গাহাঙ্গামার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছিলেন সঞ্জীব। ধৃতদের মধ্যে প্রভুদাস বৈষ্ণানি নামে এক ব্যক্তি ছিলেন। ছাড়া পাওয়ার পরদিনই হাসপাতালে মারা যান ওই ব্যক্তি। প্রভুদাসের ভাই অভিযোগ করেন, পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন সঞ্জীব ও অপর ছয় পুলিশকর্মী তাঁর দাদাকে প্রচণ্ড মারধর করেছেন। শারীরিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই প্রভুদাস মারা গিয়েছেন। যদিও সঞ্জীব ও অপর ছয় অভিযুক্ত পুলিশকর্মী আদালতে বলেন, তাঁরা নিজেদের ডিউটি করছিলেন মাত্র। পুলিশ হেফাজতে কারও ওপরেই অত্যাচার করা হয়নি। প্রভুদাসের ভাইয়ের দায়ের করা ওই মামলার রায় ঘোষণা হল বৃহস্পতিবার। পুলিশি হেফাজতে প্রভুদাসের মৃত্যুর ঘটনায় প্রায় তিন দশক ধরে সঞ্জীবের বিরুদ্ধে মামলা চলেছে। দীর্ঘ দিন ধরে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় প্রভুদাসের পরিবার শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সুপ্রিম কোর্ট জামনগর দায়রা আদালতকে তার নির্দেশে জানায়, ২০১৯-এর ২০ জুনের মধ্যে এই মামলার রায় দিতে হবে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনেই এদিন রায় ঘোষণা করল জামনগর দায়রা আদালত।
এর আগেও বিভিন্ন কারণে সংবাদের শিরোনামে এসেছে এই প্রাক্তন আইপিএস অফিসার। এক সময় সঞ্জীব সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেছিলেন, ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার সময় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, দাঙ্গার ঘটনায় জড়িত হিন্দুদের যেন শাস্তি দেওয়া না হয়। ওই দাঙ্গায় গুজরাতে প্রায় ১২০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন। যদিও সঞ্জীব তাঁর অভিযোগের প্রেক্ষিতে কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারেননি। স্বাভাবিকভাবেই কিছুদিনের মধ্যেই তিনি সাসপেন্ড হন। ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সঞ্জীব গুজরাট পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ডেপুটি কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। মোদির বিরুদ্ধে সঞ্জীবের করা অভিযোগে নিয়ে সে সময় দেশ জুড়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। বিজেপি অবশ্য প্রথম থেকেই সঞ্জীবের সমালোচনা করে এসেছে। বিজেপির অভিযোগ, সঞ্জীব বিরোধী রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করছেন। বিরোধীদের খুশি করতেই তিনি বিজেপি ও মোদি সম্পর্কে কুৎসা করছেন। ২০১২-য় গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর স্ত্রী কংগ্রেসের টিকিটে মোদির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।
[আরও পড়ুন: সংসদে আর ধর্মীয় স্লোগান বরদাস্ত নয়, সাফ জানালেন স্পিকার]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.