সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বৃহস্পতিবার সকাল এগারোটা নাগাদ অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ (Nirmala Sitharaman)। চলতি বছরই লোকসভা ভোট (Lok Sabha Elections 2024)। তাই এবারে পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশের সুযোগ পায়নি কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। এবারে ৩ মাসের জন্য ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ হয়েছে। কার্যত চমকহীন বাজেটে প্রধান দ্রষ্টব্য ৬টি বিষয়। দেখে নেওয়া যাক-
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যায় সংকোচন
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট (Union Budget 2024) বরাদ্দ প্রয়োজনীয়তার চেয়ে অনেকটাই কম থাকে। কিন্তু চলতি আর্থিক বছরে সেই টার্গেটও পূরণ হয়নি। মনে করা হয়েছিল ১,১৬, ৪১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে শিক্ষা খাতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বরাদ্দ হয়েছে ১,০৮,৮৭৮ কোটি টাকা। একই ভাবে স্বাস্থ্য খাতে আশা ছিল ৮৮ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু শেষপর্যন্ত বরাদ্দ হয়েছে ৭৯ হাজার ২২১ কোটি টাকা।
প্রান্তিক ক্ষেত্রগুলোর প্রধান প্রকল্পেও ব্যয় সংকোচন
স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো তফসিলি জাতি, উপজাতি ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় সংকোচন করা হয়েছে। মনে করা হচ্ছিল তফসিলিদের জন্য ‘আমব্রেলা’ প্রকল্পে বরাদ্দ করা হবে ৯ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। কিন্তু করা হয়েছে ৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। একই ভাবে তফসিলি উপজাতিদের জন্য ৪,২৯৫ কোটির জায়গায় বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৩,২৮৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের জন্য ৬১০ কোটির জায়গায় মাত্র ৫৫৫ কোটি বরাদ্দ হয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রে ১ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে প্রত্যাশিত ২,১৯৪ কোটি টাকার জায়গায়।
আয়কর এখন সরকারের সবচেয়ে বড় আয়ের উৎস
অধিকাংশ সরকারি আর্থিক সংস্থান আসে ঋণ থেকে। কিন্তু দ্বিতীয় বৃহত্তম অবদানকারী বা শীর্ষ আয়ের উৎপাদক আয়কর থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব। এবারের বাজেটে পরবর্তী অর্থবর্ষের জন্য সমস্ত সরকারি সম্পদের উপর ১৯ শতাংশ করা ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া কর্পোরেট ট্যাক্স ১৭ শতাংশ, জিএসটি ১৮ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে।
নামমাত্র জিডিপি বৃদ্ধি থেকে নীরব প্রত্যাশা
জিডিপি বৃদ্ধি বলতে বাস্তবে যা বোঝায়, তা নামমাত্র ডিজিপির অঙ্কের থেকে আলাদা। তা পেতে মূল্যবৃদ্ধির পরিমাণ বাদ দিতে হয়। অর্থাৎ নামমাত্র জিডিপি বৃদ্ধি ১২ শতাংশ হলে মূল্যবৃদ্ধি যদি ৪ শতাংশ হয়, সেক্ষেত্রে আসল জিডিপি দাঁড়াবে ৮ শতাংশে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে সরকারের প্রত্যাশা জিডিপি বাড়বে ১০.৫ শতাংশ। গত ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মূদ্রাস্ফীতির হার ৫.৬৯। বাজেটের নথি থেকে দেখা যাচ্ছে দেশের নামমাত্র জিডিপি ৩,২৭,৭১,৮০৮ কোটি টাকা। যা ২০২৩-২৪ সালে অর্থাৎ বর্তমান অর্থবর্ষে ছিল ২,৯৬,৫৭,৭৪৫ কোটি টাকা।
মূলধন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি
গত বছরের বাজেট উপস্থাপনের মূল ভিত্তি ছিল সরকারের মূলধন ব্যয় বৃদ্ধি। মূলধনের লক্ষ্যমাত্রা ১০ লক্ষ কোটি টাকায় উন্নীত করার জন্য সরকার প্রচুর প্রশংসা পেয়েছিল। কিন্তু বাজেটে পেশ করা তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে,তা পূরণ হয়নি। এটা দাঁড়িয়েছে ৯.৫ লক্ষ কোটি টাকা।
রাজস্ব ঘাটতিতে উল্লেখযোগ্য হ্রাস
রাজস্ব ঘাটতি মূলত সরকার বাজার থেকে যে পরিমাণ অর্থ ধার করে তা দেখায়। ব্যয় ও আয়ের মধ্যে তফাত বোঝা যায় এর থেকে। জিডিপির নিরিখে এবারের বাজেট থেকে প্রত্যাশা ছিল রাজস্ব ঘাটতি কমে দাঁড়াবে ৫.৯ শতাংশে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় পরিমাণটা দাঁড়াল ৫.৮ শতাংশ। এর পর তিনি রীতিমতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী ঘোষণা করেছেন পরবর্তী দুই অর্থবর্ষের জন্য। আগামী অর্থবর্ষে তা হবে ৫.১ শতাংশ। তার পরের অর্থবর্ষে তা ৪.৫ শতাংশে নেমে আসবে বলেই দাবি নির্মলার। তবে বিশ্লেষকদের মতে, মূলধন ব্যয় সংকোচনের ফলেই এই পরিসংখ্যান। খাতায়-কলমে তা সদর্থক হলেও, খরচ কমিয়ে রাজস্ব ঘাটতিতে লাগাম টানার পন্থা দীর্ঘমেয়াদে ভারতের মতো বৃহৎ অর্থনীতির পক্ষে লাভজনক নয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.