সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লাদাখের কায়দায় এবার সরাসরি ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে হামলা চালাতে পারে লালফৌজ। এই ভাষাতেই সেনাকে সতর্ক করে দিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো। গোয়েন্দাদের কাছে গোপন খবর রয়েছে, এবার একযোগে হিমাচল প্রদেশ, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে আসতে পারে চিনা সেনা। হিমাচলের লিপুলেখ পাস, বারাহতি ও উত্তরাখণ্ডেও অনুপ্রবেশ করতে পারে লালফৌজ।
ইতিমধ্যেই ভারতীয় সেনাকে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবারের ঘটনার পর চিনা সেনাকে রুখে দিতে দেশের জওয়ানরা আরও তৎপর ও সতর্ক রয়েছেন। তবে কেন্দ্রের তরফে চিনা সেনার প্ররোচনায় পা না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি সামাল দিতে বলছেন সেনাকর্তারাও। বুধবার জম্মু ও কাশ্মীরের লেহ জেলার চুশূল এলাকায় ভারত ও চিনা সেনার কর্তারা পূর্বনির্ধারিত ‘বর্ডার পার্সোনেল মিটিং’-এ বসেন। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের কাছে এরকম আরও বেশ কয়েকটি বৈঠক করবেন দুই দেশের শীর্ষ সামরিক কর্তারা।
ভারতের ৭০তম স্বাধীনতা দিবসে লাদাখের প্যাংগং হ্রদের কাছে টহলরত সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করে লাল ফৌজ। প্রথমে লোহার রড ও পাথর ছুড়তে শুরু করেছিল চিনারা। পাল্টা আক্রমণ হানে ভারতীয় সেনাবাহিনীও। সংঘর্ষে আহত হয়েছে দুই তরফের বেশ কয়েকজন। সেনা সূত্রে খবর, হ্রদের লাগোয়া ফিংগার থ্রি ও ফিঙ্গার ফোর এলাকা দিয়ে ঢুকে পড়েছিল চিনারা। রীতিমতো তাড়া করে তাদের হটাতে হয়েছে ভারতীয় জওয়ানদের। বিষয়টি সামান্য মনে হলেও ভারতীয় সেনাকর্তারা যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে এই অনুপ্রবেশকে। কারণ, ১৯৬২ সালে চিন যুদ্ধে প্রথমে একদল পুতুল পাঠিয়ে ভারতীয় জওয়ানদের ‘বোকা’ বানিয়েছিল বেজিংয়ের সামরিক কর্তারা। বস্তুত এই কারণে লাদাখ থেকে চিনের লাল ফৌজ এভাবে হটিয়ে দেওয়াকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্যতম সাফল্য বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। বুধবার লাদাখের এই ঘটনা নিয়ে দিল্লিতে সামরিক কর্তারা জরুরি বৈঠকে বসেন। সর্বশেষ সীমান্ত পরিস্থিতি এবং সেনা মোতায়েন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণে ব্যস্ত তিন বাহিনীর কর্তারাই।
जननी जन्मभूमिश्च स्वर्गादपि गरीयसी#हिमवीर#Himveers in the #Himalayas pic.twitter.com/XIirMv9uUB
— ITBP (@ITBP_official) August 6, 2017
ডোকলাম ইস্যুতে এমনিতেই ইন্দো-চিন যুদ্ধ পরিস্থিতির আবহ তৈরি হয়েছে গত তিনমাস ধরে। এই অবস্থায় মঙ্গলবারের ঘটনা আগুনে ঘি ঢালল বলে মনে করছেন কূটনীতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে চিনা প্রতিরক্ষা ও বিদেশমন্ত্রকের তরফে এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে মুখ খোলা হয়নি। পূর্ব লাদাখের কোলে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা প্যাংগং হ্রদ। পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। কারণ, এখানেই ‘দিল সে’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘জব তক হ্যায় জান’—এর মতো বিখ্যাত বলিউড ছবিগুলির শুটিং হয়। তবে এই অঞ্চলের আধিপত্য কায়েম করতে বহু দিন ধরেই ঠান্ডাযুদ্ধ জারি ভারত ও চিনের মধ্যে। এই প্যাংগং সংলগ্ন ফিংগার ফোর ও ফিংগার ফাইভ অঞ্চল দিয়েই মঙ্গলবার ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশের চেষ্টা করে লাল ফৌজ। প্রথমবারই তাদের অনুপ্রেবশ রুখে দেয় ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীরা। ব্যর্থ চিনা সেনার দল এরপর ফের সকাল ৯টায় ফের ভারতীয় ভূখণ্ডে পা রাখতে চেষ্টা করে। তাদের আটকাতে এবার মানবপ্রাচীর গড়ে তোলেন ভারতীয় সেনারা। এতে রেগে গিয়ে তাঁদের লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে চিনাবাহিনী। পাল্টা পাথরবর্ষণ শুরু করেন ভারতীয় সেনারাও। প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট ধরে জারি ছিল সেই ‘সংঘর্ষ’। তাতে আহত হন দু’পক্ষের অনেকেই। তবে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আগে দু’পক্ষই নিয়মমাফিক ড্রিল করে নিজেদের অবস্থানে ফিরে যায়।
#Colors of #Ladakh#Photos by #ITBP personnel#Himveer pic.twitter.com/PnMfPXFrmF
— ITBP (@ITBP_official) August 14, 2017
প্যাংগং হ্রদের ৯০ কিলোমিটার চিনের দিকে। আর ৪৫ কিলোমিটার ভারতের দিকে। নয়ের দশকে আলোচনার সময় ভারত এই জায়গার আধিপত্য নিয়ে দাবি করে। তখন চিনের পাল্টা দাবি ছিল, ওই ৪৫ কিলোমিটার বিস্কৃত অংশও আকসাই চিনের অঙ্গ। এমনকী, নিজেদের দখল প্রমাণ করতে এই এলাকায় ফিঙ্গার ফোর পর্যন্ত একটি পাকা রাস্তাও তৈরি করে ফেলে বেজিং। এই ফিঙ্গার ফোর এলাকাটি লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি)-র পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে ভারতের দিকে সিরি জাপ অঞ্চল পর্যন্ত অবস্থিত। তাই প্যাংগং হৃদের উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ে প্রায়ই আসা-যাওয়া লেগে থাকত চিনা টহলদারি সেনা জাহাজের। নিজেদের দাবি জোরাল করতে ২০১৩-র মে মাসে লেহর দৌলত বেগ ওল্ডির জেপসাং উপত্যকায় ভারতীয় সেনার উপর আক্রমণ হানে চিন। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে জারি ছিল দু’দেশের পারস্পরিক সংঘর্ষ। এখনও জুন মাস থেকে ডোকলাম ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতের ঘাড়ে শ্বাস ফেলছে চিনা ড্রাগন।
#Images from the #Himalays#Photos by #ITBP personnel#Himveer#Himachal pic.twitter.com/3Vq6W4yGni
— ITBP (@ITBP_official) August 12, 2017
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.