সোমনাথ রায়, পহেলগাঁও: পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার (Pahalgam Attack) পর টনক নড়ল প্রশাসনের। তবে ২৬ জন নিরীহ মানুষের মৃত্যুর পর। যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলির কাছে জঙ্গি হামলার কোনও আগাম খবর ছিল না, তারাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চার সন্দেহভাজন জঙ্গির স্কেচ, নাম-পরিচয় প্রকাশ করল। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ওই চার জঙ্গিই ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)-এর সদস্য। জঙ্গিদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করলেও তাদের টিকি ছুঁতে পারেনি নিরাপত্তা বাহিনী। মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তান থেকে এসে হামলা চালিয়ে তারা আবার সীমান্ত পেরিয়ে ওপারে পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তার চাদরে মোড়া জম্মু-কাশ্মীরে তারা কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকল, সেনা-পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পহেলগাঁওয়ের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে পৌঁছে গেল, বৈসরনের মতো নামী পর্যটনকেন্দ্রে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না কেন, নির্বিচারে গুলি চালিয়ে এতজনকে খুন করে তারা আবার নির্বিঘ্নে কীভাবে পালিয়ে গেল, এমন বহু প্রশ্নের এখনও কোনও উত্তর নেই। কারও ধারণা, ওরা এখনও এপারেই গা-ঢাকা দিয়ে আছে।
ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি কথা বলেছেন তাঁদের পরিজনদের সঙ্গে। তাঁকে প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়। এদিন জম্মু ও কাশ্মীর সরকার নিহতদের পরিবারপিছু ১০ লক্ষ টাকা করে সাহায্যের ঘোষণা করেছে। গুরুতর জখম ব্যক্তিদের দু’লক্ষ, কম গুরুতর আহতদের এক লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। জঙ্গিদের সম্পর্কে তথ্য দিলে ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে কাশ্মীর পুলিশ। ১,৫০০ জনকে আটক করা হয়েছে।
পহেলগাঁওয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত চার জঙ্গিকে শনাক্ত করেছে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। চারজনের ছবি প্রকাশ করে পরিচয় জানানো হয়েছে। হামলায় যুক্ত চার জঙ্গি হল- আদিল, আসিফ ফুজি, সুলেমান শাহ এবং আবু তালহা! এরা সকলেই টিআরএফ-এর সদস্য। মূলচক্রী সইফুল্লা খালিদ ওরফে সইফুল্লা কাসুরি এই জঙ্গিগোষ্ঠীর অন্যতম মাথা। ভারতের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা হাফিজ সইদের ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত সইফুল্লা। কয়েকদিন আগে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে লস্কর কমান্ডার আবু মুসা ও আইএসআই কর্তাদের উপস্থিতিতে হামলার পরিকল্পনা হয়। জঙ্গিরা ট্রেকিং করে সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশ করেছিল বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীদের ধারণা, ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবিত কাশ্মীর সফরে হামলার ছক ছিল। কিন্তু সেই সফর বাতিল হওয়ায় এই পর্যটনকেন্দ্রকে নিশানা করে জঙ্গিরা। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোল এবং মাটির নমুনা সংগ্রহ করেছে।
যদিও প্রশ্ন উঠছে, পর্যটনের মরশুমে হাজার হাজার মানুষ যেখানে ভিড় করেন, সেখানে কেন পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছিল না। তবে এতদিন ধরে স্থানীয়রা যে দাবি করতেন, এখনও সেই কথা বলছেন। কাশ্মীরে যাই ঘটুক না কেন, পর্যটকদের উপর আক্রমণ হয় না। সেই মিথও মুছে গেল। এদিন বেশ কিছু এমন হিন্দুকেও পাওয়া গেল, যাঁরা দাবি করলেন, এই নাশকতার সঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক নেই। গোটা ঘটনার পিছনে রয়েছে অন্য কোনও বড় পরিকল্পনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.