নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের মধ্যেই অনুপ্রবেশকারী ইস্যুতে সুর চড়ালেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর কথায়, ভারতের শান্তি বিঘ্নিত করতে একটি অংশের লোক সবসময়ই সচেষ্ট। অনুপ্রবেশকারীদের মদত দিচ্ছে তারাই। তিনি বলেন, নেপাল ও ভুটান সীমান্তকে ব্যবহার করেই অনুপ্রবেশকারীরা এদেশে ঢুকছে।
বৃহস্পতিবার দিল্লিতে সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-র ৫৬তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শাহ বলেন, “নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। তবে কিছু কিছু লোক রয়েছে, যারা ভারতে শান্তি দেখতে চায় না এবং ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য এই দু’টি সীমান্তকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে। সারা পৃথিবীতে ভ্রমণ সহজ হয়ে যাওয়ার পর কিছু লোক ওই সব দেশে প্রবেশ করে, যারা ভারতে শান্তি চায় না।” দুই দেশের কথা উল্লেখ করলেও মূলত নেপালের খোলা সীমান্ত দিয়েই যে অনুপ্রবেশকারীরা ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে এমনটাই জানিয়েছেন শাহ। রাজনৈতিক মহলের মতে, শাহ সরাসরি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রসঙ্গ উত্থাপন না করলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এই ‘অনুপ্রবেশ’ নিয়ে তাঁর মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি অনুপ্রবেশের সঙ্গে দেশের জাতীয় সুরক্ষার বিষয়টিকে সম্পর্কিত করছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গত এক বছরে নেপালের সীমান্তরেখায় ৫৪ জন অনুপ্রবেশকারী গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জন পাকিস্তানের বাসিন্দা। পাকিস্তান ছাড়াও আরও ২৪টি দেশের অনুপ্রবেশকারীরা এদেশে ঢুকতে চেষ্টা করেছিল।” তিনি আরও বলেন, “গত এক বছরে ৩৮০ কোটি টাকার সামগ্রী আটক হয়েছে এই সব সীমান্ত থেকে। এর মধ্যে ১৬৬ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য রয়েছে।” কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার প্রথম থেকেই বলে এসেছে যে, নাগরিকত্ব আইনে সংশোধন, কিংবা এনআরসি-র মূল লক্ষ্যই হল অনুপ্রবেশ ঠেকানো।
সিএএ নিয়ে দেশের বিভিন্ন অংশে যে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তর প্রতিনিয়ত সেই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে। খুব শীঘ্রই এনিয়ে শাহ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করতে চলেছেন বলেই সূত্রের খবর। এদিনই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, স্বরাষ্ট্র দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয়কুমার ভাল্লা উপস্থিত থাকতে পারেন বলেই জানা গিয়েছে। সিএএ নিয়ে দেশজুড়ে যেভাবে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে তাতে আাগমিদিনে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে, এমন আশঙ্কা খারিজ করে দেওয়া যায় না। তা সামলাতে সরকারের তরফ থেকে কী কী পদক্ষেপ করা যায় তা নিয়েই সেই বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা। যেসমস্ত রাজ্যে সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে, সেখানকার প্রশাসনিক মহলের সঙ্গে শাহর দফতরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হতে পারে। প্রয়োজনে শাহ নিজেই ফোন করতে পারেন রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে। মানুষের সামনে সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে বিশদ তথ্য তুলে ধরার উপরও জোর দিচ্ছে তারা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.