সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুবছর আগে গুজরাটের মোরবিতে ঝুলন্ত সেতু ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল ১৩৫ জনের। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শিল্পপতি জয়সুখ প্যাটেল ফের খবরের শিরোনামে। এই কলঙ্কিত ঘটনায় অভিযুক্ত শিল্পপতিকে ঘটা করে সংবর্ধনা জানিয়েছে মোরবি জেলার পতিদার সম্প্রদায়। যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। নিন্দায় ফেটে পড়েছেন ওই ঘটনায় মৃত ব্যক্তিদের পরিজন থেকে শুরু করে নেটনাগরিকরা। এই আবহেও নিজেদের কাজের সাফাই দিয়েছে আয়োজকরা। তাতে বিতর্ক বেড়েছে বই কমেনি।
ঠিক কী ঘটেছিল? আপাতত জামিনে মুক্ত জয়সুখকে শুক্রবার সংবর্ধনা দেয় কাদভা পতিদার কন্যা কেলাবানী মণ্ডল। মোরবি শহরের উপকণ্ঠে অনুষ্ঠান হয়। সেখানে দাঁড়িপাল্লায় চাপিয়ে জয়সুখের সমওজনের ‘মোদক’ পরিমাপ করে বিতরণ করে আয়োজকরা। যদিও তাদের দাবি, নামী দেওয়াল ঘড়ি নির্মাতা সংস্থা অজন্তা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা ‘লোকহিতৈষী’ ও আর প্যাটেলের পুত্র হিসাবে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। উমা সংস্কারধাম মন্দিরে দেবতার প্রাণপ্রতিষ্ঠা উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল।
প্রায় ৬০ হাজার বাক্সে ওই মোদক ভরে পতিদার সম্প্রদায়ের পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়। আর তার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সেতু ভেঙে মৃতদের পরিজনরা। “এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, মোরবি ঝুলন্ত সেতু ভাঙার প্রধান অভিযুক্তকে এভাবে সম্মানিত করা হচ্ছে,” বলেছেন নরেন্দ্র পারমার, ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী সমিতির সদস্য। এর আগে জয়সুখ প্যাটেলের মোরবিতে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। সম্প্রতি সেই শর্ত শিথিল করে আদালত।
মোরবি শহরের মাচ্ছ নদীর উপর ব্রিটিশ আমলের ঝুলন্ত সেতু ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর ভেঙে পড়েছিল। ওই সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল জয়সুখ প্যাটেলের ওরেভা গ্রুপ। ওই ঘটনায় নরেন্দ্র পারমারের দশ বছরের কন্যা মারা যায়। তিনি বলেন, “আমি একটি সংবাদপত্রে প্যাটেলের সংবর্ধনা সম্পর্কে জানতে পেরে দুঃখ পেয়েছি। ওই ঘটনা এবং সন্তান হারানো এমন একটা বিষয় যা কেউ জীবদ্দশায় ভুলতে পারবে না।” আয়োজকদের তরফে এ কে প্যাটেল জানান, অজন্তা গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতাকে সম্মান জানাতেই তাঁর পুত্রদের সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়। আয়োজকদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক ললিত কাগাথারা বলেছেন যে, প্যাটেলকে তার সম্প্রদায় সংবর্ধনা দিয়ে কোনও ভুল করেনি। শিল্পপতির পরিবার সমাজসেবার মাধ্যমে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তাঁর আরও দাবি, জয়সুখ প্যাটেল নির্দোষ। ঘটনার দায় মোরবির তৎকালীন কালেক্টর এবং পুরসভার কর্তাদের। তাঁদের বিরুদ্ধে কেন এফআইআর হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার পর প্যাটেল, তার সংস্থার দুই ম্যানেজার, ব্রিজ মেরামতকারী দুই সাব-কন্ট্রাক্টর, তিনজন নিরাপত্তারক্ষী এবং দুই টিকিট বুকিং ক্লার্ক-সহ মোট দশজনকে অনিচ্ছাকৃত খুন এবং মানবজীবন বিপন্ন করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে চলতি বছরের মার্চে প্যাটেলকে জামিন দেয় সুপ্রিম কোর্ট। তার আগে গুজরাট হাই কোর্ট তাঁর জামিনের আর্জি খারিজ করেছিল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.