Advertisement
Advertisement
আমেরিকা

ট্রাম্পের নয়া ভিসা নির্দেশিকায় ফাঁপড়ে মার্কিন মুলুকের ভারতীয় পরিবারগুলি

এইচ-ওয়ানবি ভিসা বন্ধ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

Indians working in US faces trouble over Donald Trump's visa rule
Published by: Monishankar Choudhury
  • Posted:June 25, 2020 7:53 pm
  • Updated:June 25, 2020 8:04 pm  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মার্চের গোড়ায় আমেরিকা থেকে ভারতে আসার জন্য মরিয়া হয়ে টিকিটের খোঁজ করেছিলেন পূর্বা দীক্ষিত। এক দশক পর এই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের ভারতে ফেরার কারণ? তাঁর ৭২ বছরের বৃদ্ধা মা বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায়। এদিকে, করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় স্বামী কৌস্তভ এবং ছয় ও তিন বছরের দুই সন্তানকে ক্যালিফোর্নিয়ায় রেখেই বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। পূর্বা এবং তাঁর স্বামী দু’জনেই ভারতীয় নাগরিক। যদিও তাঁদের সন্তানরা জন্মসূত্রে মার্কিন। ১৪ বছর ধরে পূর্বারা আমেরিকার বাসিন্দা। এখানে আসার পর মায়ের মৃত্যু ও কড়া লকডাউনের জেরে ভিসা পুনর্নবীকরণ করাতে পারেননি।

[আরও পড়ুন: ‘পাকিস্তানের ৪০ শতাংশ পাইলট বিমান চালাতেই জানেন না’, দাবি সে দেশের মন্ত্রীর]

সোমবার মহারাষ্ট্র থেকে ডিজিটাল হেলথ কেয়ার সংস্থার সহকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে একযোগে কাজ করার সময়েই যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। একাধিক কাজের ভিসা এ বছরের জন্য স্থগিত করে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। খবর শুনে তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েন যে, অন্য এক সহকর্মীকে তাঁর শুশ্রুষা করতে হয়। সেই ধাক্কা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি। “কী করব, বুঝেই উঠতে পারছি না,” বলছেন পূর্বা। এই সফটওয়্যার ডেভেলপারের আশঙ্কা, জীবিকা তো গেলই, তাঁর পরিবারও না বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

Advertisement

শুধু পূর্বা নন, অন্তত হাজার খানেক ভারতীয় তাঁর মতোই অসহায় অবস্থায়। যাঁরা বহু বছর ধরেই আইনসঙ্গতভাবে আমেরিকায় কাজ করছিলেন। নানা কারণে দেশে এসে আটকে পড়েছিলেন। চলতি বছরে তাঁরা আর আমেরিকায় ফিরতে পারবেন কিনা, তা নিয়েই সংশয়ে। সোমবার চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত আপাতত এইচ-ওয়ানবি এবং এইচ ৪, এল ১ এবং জে ১-এর মতো কাজের ভিসা দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। পূর্বা ও তাঁর স্বামী এইচ-ওয়ানবি ভিসাতেই আমেরিকা গিয়েছিলেন। সেখানে থাকলে পূর্বার আপাতত কোনও সমস্যা হত না। কিন্তু ওই ধরনের ভিসায় আমেরিকা ছেড়ে অন্য কোনও দেশে গেলে ফেরার সময় মার্কিন দূতাবাস থেকে ফের পাশপোর্টে স্ট্যাম্প মারতে হয়। কিন্তু ট্রাম্পের নয়া নির্দেশে তা আর আপাতত সম্ভব নয়। ট্রাম্পের ঘোষণায় মার্কিন নাগরিকদের বিদেশি স্ত্রী-সন্তানের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হলেও আমেরিকায় জন্মানো শিশুদের বাবা-মা সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। মহারাষ্ট্র থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলেন পূর্বা, গান শোনান, বই পড়ে শোনান। কিন্তু তাঁর আশঙ্কা, এই বিচ্ছেদ সন্তানদের মানসিকভাবে ধাক্কা দেবে। ছোট মেয়ে ইতিমধ্যেই আর তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না। আর ফ্রিজের গায়ে লাগানো পরিবারের ছবিতে বড় মেয়ে লিখে দিয়েছে, ‘লিভিং স্যাডলি এভার আফটার’।

হোয়াইট হাউসের দাবি, করোনা মহামারীর জেরে বহু আমেরিকান কাজ হারিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তে তাঁদের অনেকের সুবিধা হবে। ৫ লক্ষ ২৫ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু পূর্বা-সহ বেশ কয়েকজনের দাবি, করোনা আবহেও তাঁদের কাজে কোপ পড়েনি। যেমন, বিনোদ আলবুকার্ক। জরুরি কাজে মেঙ্গালুরু ফিরতে হলেও আটলান্টায় যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, তাদের সঙ্গে অনলাইনে কাজ করেছেন তিনি। আমেরিকায় রয়েছেন তাঁর ছ’বছরের ছেলে, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী। যাঁর সেপ্টেম্বরে সন্তান হওয়ার কথা। তাঁর কথায়, “নতুন এইচ-ওয়ানবি ভিসা মঞ্জুর না করার মানে বোঝা যায়। কিন্তু আমরা কী দোষ করেছি? আমেরিকার অর্থনীতিতে আমার ভূমিকা রয়েছে, কর কাটে। তাহলে আমরা কেন ফিরতে পারব না?”

২০০৭-এ পড়াশুনা করতে প্রথম দফায় আমেরিকা গিয়েছিলেন প্রমোদ আলাগান্ধুলা। পরে সেখানেই চাকরি পেয়ে যান। বিয়ে করেন। স্ত্রীকে নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন জরুরি কাজে। এখান থেকে কাজও করছিলেন। কিন্তু দ্রুত আমেরিকা ফিরতে না পারলে সেই চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন প্রমোদ। এইচ-১বি ভিসা নিয়ে আমেরিকায় কাজ করতে যাওয়া বিদেশি কর্মীদের মধ্যে ভারতীয় ও চিনের বাসিন্দাই সবচেয়ে বেশি। ফলে এই বিধিনিষেধে সমস্যায় পড়েছেন বহু ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী। পাশাপাশি, ফাইনান্স এবং হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিতেও যুক্ত ভারতীয়রা সমস্যায় পড়েছেন। হতাশার জেরে মার্কিন সেনেটর, কংগ্রেস সদস্যদের চিঠি পর্যন্ত লিখে ফেলেছেন পূর্বা। মার্কিন দূতাবাসে জরুরি অ্যাপয়েনমেন্ট চেয়ে তাঁর দাবি, “আমি কোনও আইন ভাঙিনি। কোনও অন্যায় করিনি। তাহলে আমরা শাস্তি পাচ্ছি কেন?”

[আরও পড়ুন: প্রকাশ্যে পাকিস্তানের স্বরূপ, লাদেনকে ‘শহিদ’ আখ্যা ইমরান খানের]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement