Advertisement
Advertisement

Breaking News

Dibrugarh Express

লাইন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা, বিস্ফোরক দাবি রেলের রিপোর্টেই

এই দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ও ৩০ জনের বেশি আহত হন।

Indian Railways filed the report on Dibrugarh Express accident

ফাইল ছবি

Published by: Suchinta Pal Chowdhury
  • Posted:July 22, 2024 10:09 am
  • Updated:July 22, 2024 10:15 am  

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এক ঘণ্টা আগেই রেললাইনে ধরা পড়েছিল ত্রুটি! আর তার পরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উত্তরপ্রদেশের গোন্ডা জেলায় ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় প্রকাশ্যে এসেছে রেলের বিস্ফোরক রিপোর্ট। লাইন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই উত্তরপ্রদেশে ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা ঘটেছে। এমনটাই জানিয়েছে রেলের তদন্তকারী দল। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ভয়াবহ দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের ঘটনা। কাঞ্চনজঙ্ঘা দুর্ঘটনাতেও প্রকাশ্যে এসেছিল রেলের গাফিলতির বিষয়।

ফলে রেলযাত্রা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। রেল যখন তার সাধের বন্দেভারত নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত, তখন এই ধরণের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর , রিপোর্টে বলা হয়েছে যে রেললাইন দুর্বল থাকা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসকে পূর্ণ গতিতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এই রিপোর্ট প্রসঙ্গে উত্তর-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক পঙ্কজ সিং বলেছেন, কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছেন। ওই তদন্তে দুর্ঘটনার প্রতিটি সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখা হবে।

Advertisement

১৮ জুলাই বাকলিংয়ের কারণে ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার গতিতে চলছিল চণ্ডীগড়-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস। মোট ১৬টি বগির তিনটি এসি কোচ ট্র্যাকে উলটে যায়। এই দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ও ৩০ জনের বেশি আহত হন। এর পরই দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ অনুসন্ধানে ছয় সদস্যের তদন্তকারী দল গঠন করেছিল রেল। তদন্তকারী দলের রিপোর্ট অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার আগেই রেলের লখনউ ডিভিশনের এক বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার রেললাইনে ত্রুটি লক্ষ্য করেন। ওই ইঞ্জিনিয়ার লক্ষ্য করেছিলেন যে, রেললাইনের ওই অংশের বাঁধন তেমন পোক্ত নয়। তাই সেটি যথাযথ ভাবে কাজ করছিল না। এই পর্যবেক্ষণের পরেই রেলের বিভাগীয় ওই ইঞ্জিনিয়ার এক জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারকে রেললাইনে দুর্বলতার বিষয়টি জানান। তদন্তকারী দলের দাবি, আগে থেকে সতর্ক করা হলেও আলাদা করে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।

[আরও পড়ুন: ফের উরির ধাঁচে হামলা! কাশ্মীরের সেনাঘাঁটিতে হানা জঙ্গিদের, আহত জওয়ান

রেল দপ্তর সূত্রের খবর, ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার আগে ঝিলাহির কীম্যান ফোনে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারকে রেলপথ দুর্বল হওয়ার আশঙ্কার কথা বলেছিলেন। সেকশন অফিসাররা ট্র্যাকে কোনও সতর্কতা বার্তা পোস্ট করেননি, যে কারণে ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। রেলওয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্টে লখনউ রেলওয়ে বিভাগের অধীন ঝিলাহি সেকশনের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, রেললাইনের ফাস্টেনিং ঠিক ছিল না। মানে,উত্তাপের কারণে প্রসারণ ঘটে ট্র্যাকের। তা আলগা হয়ে গিয়েছিল। রেললাইন সঠিকভাবে পাতা না থাকায় ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের ওই ট্র্যাকে ত্রুটি তৈরি হয়। প্রাথমিক তদন্তের এই বিষয়টিকেই কি ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হওয়ার মূল কারণ ধরা হবে? এ প্রসঙ্গে উত্তর পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বলেন, “রেলওয়ে সেফটি কমিশনারের নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। শুক্রবার এই নিয়ে প্রথম রিপোর্ট সামনে এসেছে। যান্ত্রিক ত্রুটি থেকে শুরু করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সহ দুর্ঘটনার যাবতীয় বিষয় নিয়ে তথ্য প্রকাশ্যে আনা হবে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে যা যৌথ তদন্তে উঠে আসে না। ফলে এখনই ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস কীভাবে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল তা নিয়ে স্পষ্টভাবে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো সম্ভব নয়।”

দুর্ঘটনার প্রায় এক ঘণ্টা আগে মতিগঞ্জ-ঝিলাহির ট্র্যাকে ত্রুটি ধরা পড়লেও চালককে তা জানানো হয়নি। জানানো হলে, ৭০ কিলোমিটারের বদলে তিনি গতি ৩০ কিলোমিটারে নামিয়ে আনতেন। দুর্ঘটনাটি ঘটে ১৯ জুলাই দুপুর ২টো ২৮ মিনিটে। মিনিট দুয়েক পর মতিগঞ্জের স্টেশন মাস্টারকে খবর দেওয়া হয়েছিল। ট্র্যাকের ত্রুটি সনাক্ত করার পরে আধিকারিকরা যথাযথ ব্যবস্থা নেননি। উলটে ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসকে একই ট্র্যাকে পূর্ণ গতিতে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। যার ফলে এই দুর্ঘটনা। সূত্রের খবর, ইস্টার্ন রেলওয়ের ৬ জন অফিসারের একটি দল চণ্ডীগড়-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকো পাইলট, ম্যানেজার, ঝিলাহি ও মতিগঞ্জের স্টেশন মাস্টার-সহ একাধিক কর্মচারীর বয়ান নেওয়ার পর রিপোর্ট তৈরি করেছেন। ওই রিপোর্টে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে।

এদিকে, ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরের পক্ষ থেকেও কেবলমাত্র রেল ট্র্যাকের ত্রুটিকেই এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মানা হচ্ছে না। এই দপ্তরের এই আধিকারিক যৌথ তদন্তে প্রাথমিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন। সূত্রের খবর, চাকার পরিমাপ, বাফারের উচ্চতা, পার্সেল ভ্যানের কাপলিংয়ের মতো বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করা হয়। লোকো পাইলটের দ্বারা ভুল সময়ে ব্রেক কষার মতো বিষয়গুলোও উঠে এসেছে আলোচনায়। যৌথ তদন্তে উঠে এসেছে, রেল ট্র্যাকে ত্রুটি থাকার পর সেই লাইনে সতর্কবার্তা জারি করা প্রয়োজন ছিল। তবে তা হয়নি। সে কারণেই রেল লাইনচ্যুত হয়ে থাকতে পারে। ইঞ্জিনিয়ারিং দপ্তরের পক্ষ থেকেই এই বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত ছিল।

জানা যাচ্ছে, চণ্ডীগড়-ডিব্রুগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের লোকো পাইলট মোতিগঞ্জ স্টেশন থেকে ২টো বেজে ২৮ মিনিটে ২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা স্পিডে ট্রেন চালাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনাস্থলে যে মুহূর্তে ট্রেন এসে পৌঁছয়, সে সময় গতিবেগ ছিল ৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। লোকো পাইলটের অভিযোগ, দুর্ঘটনার মুহূর্তে তিনি বিকট একটি শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। সে কারণেই এমারজেন্সি ব্রেক কষেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement