সুব্রত বিশ্বাস: প্রথম দফা শেষ। দেশবাসী এখন দ্বিতীয় দফার লকডাউনে ঘরবন্দি। গত ২৬ দিন ধরে বন্ধ সমস্ত গণপরিবহণ। কারশেডে থেকে ধুলো জমেছে ট্রেনগুলোর গায়ে। এতটা সময় ধরে ট্রেনের শব্দবিহীন আবহ বোধহয় এই প্রথম দেখছে ভারত। এই প্রথম ঘটছে আরও অনেক কিছুই। তার মধ্যে আজকের জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে জন্মদিনে থমকে রইল দেশের রেল পরিষেবা। ১৬৭ বছর আগে আজকের দিনেই দেশে প্রথম রেলের পথচলা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই প্রথম, জন্মদিনে চলল না কোনও ট্রেন।
১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল ভারতে প্রথম রেল চলাচল শুরু হয়েছিল। আজকের দিনে মুম্বই থেকে থানে পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার ট্র্যাকে প্রথম রেলের চাকা গড়ায়। ১৪টি ক্যারেজে চারশো জন অতিথি প্রথম যাত্রার সুযোগ পেয়েছিলেন। ১২ টি বন্দুকের গান স্যালুট দিয়ে যাত্রার সূচনা হয়েছিল বিকেল সাড়ে তিনটের সময়।
করোনা আতঙ্কে আজ স্তব্ধ সেই সুর। থমকে গিয়েছে চলার গান। দেড় শতকের বেশি সময় পেরিয়ে এসে ট্রেনহীন দেশের সাক্ষী রইলেন সকলে। টের পেলেন, কানে ট্রেনের হুইসল শুনতে না পাওয়ার যন্ত্রণার। আজ মুম্বইয়ের চিত্রটা এতটাই এতটাই বেসামাল যে ১৬৭ বছর আগের সেই সূচনার সময়টাকেও স্মরণ করতে চাইছে না। ওয়েস্টার্ন রেলের এক কর্তার কথায়, ‘পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না, তখন আর কি গুনগান গাইব?’
রেলের ১৬৭ তম জন্মদিনের দু’দিন আগে এই ঐতিহাসিক মুম্বইয়ে করুণ ছবি দেখেছে গোটা বিশ্ব। মানুষ ঘরে ফেরার জন্য একটা ট্রেনের দাবিতে মুম্বইয়ের বান্দ্রা ও সুরাট স্টেশনে বিক্ষোভ দেখিয়ে মার খেয়ে ফিরে গেলেন। ট্রেন চলাচলের সূচনার দেড় শতকেরও বেশি সময় পেরিয়ে রেল প্রশাসনের হাল দেখে বিমর্ষ বোধ করেছেন অনেকেই। এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছে রেলকে। যখন বিশ্বজুড়ে এই পরিস্থিতি, রাজ্যে লকডাউনের সময় বাড়ানো হচ্ছে। তখন IRCTC বহাল তবিয়াতে ই-টিকিট বিক্রি করে চলেছে।
পরিযায়ী শ্রমিকরা ভেবেছিলেন, ট্রেন চলবে। জড়ো হয়েছিলেন স্টেশনে। রেলের যে কর্তাদের নির্দেশে টিকিট বিক্রি হয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে নানা জায়গা থেকে। অভিযোগ উঠছে, স্টেশন চত্বরে এত মানুষ জড়ো হয়েছেন দেখেও পুলিশ নিষেধ করেনি। এই উদাসীনতার জন্য পুলিশ কর্তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে। যে রাজ্যে প্রথম ট্রেন চলে ছিল, সেই রাজ্য থেকেই ট্রেনে ফেরার দাবিতে সরব হওয়ায় এমন পরিস্থিতি। আজ, জন্মদিনে সেসবের জন্য ক্ষোভ উগরে দিলেন অনেকেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.