সুব্রত বিশ্বাস: অফিস আসার পথে উত্তরপাড়া বুকিং কাউন্টারে যে মহিলা রেলকর্মীকে টিকিট বিক্রি করতে দেখলেন, রাতে বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে ট্রেনে টিকিট পরীক্ষা করতে দেখলে ঘাবড়ে যাওয়ারই কথা। চরম বেআইনি বলে মনে হতে পারে। বা ভুয়ো চেকিং করে কামাইয়ের ধান্দাও ভাবতে পারেন যাত্রীরা। তবে তাঁদের ধারণা মোটেই ঠিক নয়, কারণ রেল এমনই যুগপৎ আইন চালু করতে চলেছে। বুকিং ক্লার্ককে দিয়ে এবার টিটিই-র কাজ করাবে রেল। গত ডিসেম্বর মাসে রেলমন্ত্রক এনিয়ে ছাড়পত্র দিলেও আইন এখনও কার্যকর হয়নি। তবে দক্ষিণ ভারতে ২৫ হাজার টিটিই-র সংখ্যা এভাবেই বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এখন ই-বুকিং অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রায় সত্তর শতাংশ টিকিট আইআরসিটিসির মাধ্যমে কাটছেন যাত্রীরা। কাগজের টিকিট বিক্রি এখন পঞ্চাশ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে। আনরিজার্ভড টিকিট মোবাইলে বুকিং হচ্ছে। এজন্য বুকিং ক্লার্কদের প্রত্যক্ষ প্রয়োজনীয়তা কমছে দ্রুত হারে।
অন্যদিকে বেশ কিছু টিটিই পদ শূন্য রয়েছে। বুকিং ক্লার্ক উদ্বৃত্ত হওয়ায় তাঁদের দিয়ে টিটিইর কাজ করানোর সিদ্ধান্ত রেলের। এক ক্যাডার থেকে অন্য ক্যাডারে স্থানান্তরিত করতে নতুন এই ‘ইউনিফাইড ক্যাডার সিস্টেম’ চালু করছে রেল। সাধারণ বুকিং ক্লার্কের সঙ্গে এনকোয়ারি কাম রিজার্ভেশন ক্লার্কদেরও এই পদে পাঠানো হবে। আঞ্চলিক রেল কার্যালয়গুলি এই ইউনিফায়েড ক্যাডারদের প্রশিক্ষণ দেবে। এজন্য তাদের সিলেবাস তৈরি করতে বলা হয়েছে। জোনগুলিকে এই ট্রেন মডিউল বানিয়ে রেল বোর্ড পাঠাতে বলা হয়েছে। যা বোর্ড অনুমোদন করে সম্মতি দেবে। বুকিং ক্লার্কদের থেকে টিটিইদের বেতন কাঠামো ও অ্যালওয়েন্স বেশি। ফলে এই আলাদা দুই ক্যাডারের সমন্বয় কীভাবে হবে, তাও ঠিক করে নিয়েছে বোর্ড।
শিয়ালদহ ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, শিয়ালদহে গার্ড অনুপস্থিত হলে বা কোনওরকম অসুবিধা হলে গার্ডের কামরায় তুলে দেওয়া হয় টিসিকে। তিনিই ট্রেন নিয়ে রওনা হন। এটা সম্পূর্ণ আইনগত এবং বহুদিন ধরে চলে আসছে। রেলকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ না জানলেও এটা সত্যি যে, প্রায়ই এমনটা হয়। এজন্য বেশ কিছু টিসিকে গার্ডের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতি তিন মাস অন্তর তা ঝালিয়ে নেওয়া হয়। এজন্য সেই টিসিরা টিএ-ও পান। এমনই কোনও পন্থা নেওয়া হবে এই ক্যাটাগরি পরিবর্তনে। দেশে রোজ ১৫.৩৫ লক্ষ বার্থে যাত্রী যাতায়াত করেন। যার মধ্যে ৩.৩২ লক্ষ তৎকাল। এই পরিস্থিতিতে প্রতিটি স্টেশনে টিটিইর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। হাওড়ার সিনিয়র ডিসিএম রাজীব রঞ্জন বলেন, ‘‘টিটিইতে প্রচুর শূন্যপদ রয়েছে। পাশাপাশি কর্মীর অভাবে অনেক স্টেশনে একাধিক কাউন্টার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে বুকিং ক্লার্করা উদ্বৃত্ত হবেন না। তাঁদের টিটিইতে নিয়ে যাওয়া হবে। টিকিট ভেন্ডিং মেশিনগুলি অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী না হলে তাঁদের পরিবারের হাতে কমিশন ভিত্তিতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.