ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে নিয়ে সোমবার দিল্লিতে বৈঠকে বসছে কংগ্রেস হাইকমান্ড। মূলত বঙ্গে কংগ্রেস কোন পথে চলবে, তৃণমূল নাকি বাম, আগামিদিনে জোটসঙ্গী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিলমোহর কোন পক্ষে পড়বে, সব নিয়ে সোমবার বিকেল ৫টায় প্রদেশ কংগ্রেসের নেতৃত্বের সঙ্গে একটা চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরির প্রাথমিক আলোচনা হতে পারে। ইতিপূর্বে প্রদেশ কংগ্রেসের আপাদমস্তক কাঠামোগত বদলের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। তার সঙ্গে বদল হওয়ার কথা প্রদেশ সভাপতি পদেও। তা নিয়ে নিজেদের মতামত আগেই দিয়ে দিয়েছেন বঙ্গ নেতৃত্ব। তা নিয়ে হাইকমান্ড কিছু ভেবে থাকলে আলোচনা থেকে তারও ইঙ্গিত মিলতে পারে বলে মনে করছে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব।
এই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল গত ৯ জুলাই। লোকসভা ভোটের ফলের পর্যালোচনা রিপোর্ট তার অনেক আগেই জমা পড়ে গিয়েছে এআইসিসি দপ্তরে। এআইসিসি সূত্রে খবর, ফলাফলের পর্যালোচনা করতে গিয়ে নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণের নানা দিক উঠে এসেছে। বাংলায় অত্যন্ত খারাপ ফল শুধু না, প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীও হেরেছেন। জানা যাচ্ছে, এর কারণ হিসাবে নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়ে এআইসিসির একটা অংশের চর্চায় উঠে এসেছে বাম-কংগ্রেস জোট প্রসঙ্গ, এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও। এবং আশ্চর্যের বিষয় এখানেই। একটি সূত্রের দাবি, দিল্লির সেই চর্চায় সরাসরি উঠেছে তৃণমূলের শক্তির কথা। বিজেপিকে যে তৃণমূলই বঙ্গে রুখে দিয়েছে সে কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “কংগ্রেসের মূল শত্রু কে সেটা রাজ্যের নেতৃত্ব বুঝতে পারেনি। লড়াই কাদের বিরুদ্ধে সেটাই বুঝতে পারেনি।” এমনকী, বুঝতে পারেনি নাকি বুঝতে চায়নি তা নিয়েও চর্চায় প্রশ্ন উঠেছে। সেই সূত্রেই এসেছে তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গ। এআইসিসির একটি সূত্র জানাচ্ছে, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে বাংলায় বিজেপিকে রুখে দিয়েছে সেটা তো মানতে হবে। আর বারবার বঙ্গ নেতৃত্ব বামেদের হাত ধরছে। যার জেরে অধীর চৌধুরীর মতো নেতাকেও হারতে হয়েছে। ফলে বঙ্গে কোন পথে গেলে কাদের সঙ্গে হাত মেলালে নির্বাচনী সমীকরণ সহজ হবে, সেটা বুঝতে প্রদেশ নেতৃত্বের সমস্যা হচ্ছে।” প্রশ্ন উঠেছে, “বারবার হারের পরও কেন বারবার প্রদেশ নেতৃত্বের দাবি মেনে নেওয়া হচ্ছে?”
চর্চায় এসেছে দুর্নীতির প্রসঙ্গও। সেই সূত্রেই একযোগে রাহুল গান্ধীর নামের পরই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও এসেছে। একটি সূত্রের বক্তব্য, বিজেপি যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে অভিযোগ করে সেসবের তো কোনও প্রমাণ নেই। উলটে অভিষেক যা অভিযোগ করছেন সেগুলোই সত্য প্রমাণিত হচ্ছে। সেই উদাহরণ সব থেকে বেশি দেখা গিয়েছে রাহুল গান্ধীকে নানাভাবে দুর্নীতির প্রশ্নে কোণঠাসা করার অভিযোগে। এমনকী, ভোটের আগে কৌশলে কংগ্রেসের অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপি সরকার। ফলে তৃণমূল নেতৃত্ব যা বলছে করে দেখাচ্ছে আর তাদের অভিযোগই সত্য প্রমাণিত হচ্ছে, এই বিষয়টি উঠে এসেছে বঙ্গে প্রদেশ নেতৃত্বে বদলের আগে সার্বিক চর্চায়। যদিও প্রদেশের এক নেতার বক্তব্য, “রাহুল গান্ধী বা সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বৈঠকে এইসব আলোচনা উঠলে তখন হাইকমান্ডের মনোভাব বোঝা যাবে। তার আগে চর্চায় অনেক কিছুই ওঠে।”
আলোচনায় আরও দুটি বিষয় উঠেছে, যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এক, বঙ্গের পর্যবেক্ষক বদলের ভাবনাও থাকতে পারে এআইসিসির। বর্তমানে সেই পদে আপাতত দায়িত্বে আছেন গুলাম মীর। সেই জায়গায় বাংলা, বিহার, ওড়িশা মিলিয়ে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতেও পারে। আর দুই, অধীর চৌধুরী এবং তাঁর রাজনৈতিক বিচারবুদ্ধিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় হাইকমান্ড। সেখানে দাঁড়িয়ে বিগত কয়েক বছরে কীভাবে তাঁর দায়িত্বে থাকা প্রদেশ নেতৃত্বের এই হাল কেন? যার পর্যালোচনায় এআইসিসি মনে করছে, অধীর ঘনিষ্ঠ দু-একজন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ছড়ি ঘোরানোর কাজ করেন। এমনকী, লোকসভা ভোটের মুখে অধীর চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাঁকে টপকে অধীর ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ দলের প্রার্থী, প্রদেশের কৌশল, বামেদের সঙ্গে দলের যোগাযোগ নিয়ে বাড়তি আগ্রহ দেখিয়ে ক্ষমতা হস্তগত করার চেষ্টা করেছেন। যার প্রভাব ভোটের ফলে, দলের সংগঠনে এবং এআইসিসির সঙ্গে প্রদেশের যোগাযোগে সরাসরি পড়েছে। যার জেরে প্রদেশ নেতৃত্বের সংগঠন এবং ভোটে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। এর সবটাই রিপোর্ট আকারে জমা পড়েছে এআইসিসি সদর দপ্তরে।
এদিনের হাইকমান্ডের সঙ্গে বৈঠকে থাকার কথা প্রদেশ সভাপতি-সহ দলের একাধিক নেতার। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রদীপ ভট্টাচার্য, শংকর মালাকার, নেপাল মাহাতো, শুভঙ্কর সরকার, দীপা দাশমুন্সি, অমিতাভ চক্রবর্তী-সহ আরও একাধিক নেতার। আমন্ত্রণের তালিকায় প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানের নাম থাকলেও এবং শেষ মুহূর্তে কোনও বদল না হলে তিনি যাচ্ছেন না বলেই খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.