অর্ণব আইচ: সীমান্তের ওপারে অন্ধকারে ফিসফিসিয়ে কথা বলে কারা? কান পাতলেও তারা কী বলছে, গোপনে অনুপ্রবেশ করতে চাইছে কি না, বোঝা মুশকিল। আবার দিনের বেলায় অকারণ চিৎকার চেঁচামেচির মধ্যেও মিশে যায় প্রয়োজনীয় কথাগুলো।
এবার থেকে সীমান্তের ওপারে প্রয়োজনীয় ফিসফিসানির শব্দ শুনতে পাবে যন্ত্রের ‘কান’। কেউ গুপ্তচরবৃত্তি করতে চাইলেও পালটা দাওয়াই দিয়ে পাকিস্তানের (Pakistan) ‘আইএসআই’ বা চিনের ‘গুয়াংবু’র মোকাবিলা করবে ভারতীয় সেনা। চিনা হোক বা বিদেশি যে কোনও ভাষা, মুহূর্তের মধ্যে তা হিন্দি বা ইংরেজিতে অনুবাদ হয়ে সেনাদের হাতে এসে যাবে। যন্ত্র এই ‘খেল’ দেখালে সীমান্তে নজরদারিও হয়ে যাবে জলের মতো সোজা।
এই সফ্টওয়্যার তৈরি হচ্ছে কলকাতায়। সোমবার কলকাতায় একটি সেমিনারে এই প্রসঙ্গ উঠে আসে। কলকাতারই একটি সাইবার প্রশিক্ষণ সংস্থা তৈরি করছে এই সফ্টওয়্যার। সূত্রের খবর অনুযায়ী, মাস দুই আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কলকাতার ওই সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। চিন এবং পাকিস্তান সীমান্তে টহল দিতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যার সামনে পড়েন সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ান ও আধিকারিকরা। বিশেষ করে চিন বা পাকিস্তানের সীমান্তের কিছুটা দূর থেকে কেউ চরবৃত্তি করলেও অনেক সময় তা বোঝা সহজ হয় না। কোনও চর লুকিয়ে নজরদারি করার সময় নিজেদের মধ্যে অথবা মোবাইলে কথা বললেও তা বোঝা সম্ভব হয় না। ফলে কেউ চরবৃত্তি করার জন্য গোপনে কোনওভাবে সীমান্ত পার হওয়ার ছক কষলেও তার হদিশ পাওয়া শক্ত হয়ে দাঁড়ায়। আবার অনেক সময় বিদেশি সেনাবাহিনী কী কথা বলছে, তা জানতে পারলে যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজি তৈরি সহজ হয়।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা সেনাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, এই সমস্যার মূলে রয়েছে বাইরের চেঁচামেচি বা শব্দ। সেই শব্দ ঝরণা বা প্রাকৃতিক কোনও কারণে হতে পারে। আবার কোথাও জন সমাগম বেশি হলে সেই চিৎকার বা চেঁচামেচির কারণে প্রয়োজনীয় গলার স্বর মিশে যায়, যা সহজে বোঝা যায় না। একই সঙ্গে বিদেশি ভাষায় কী কথা হচ্ছে, তা বুঝতেও সময় লাগে। সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথমেই সীমান্ত এলাকার বা তার ওপারের অপ্রয়োজনীয় শব্দ বা চেঁচামেচি কমিয়ে দেবে ওই সফ্টওয়্যার। এতটাই কমানো হবে যে আশপাশে যে কোনও কথা এই সফ্টওয়্যার ধরে ফেলতে পারবে। এর পর চিনা বা যে কোনও ভাষা, যা অত্যন্ত প্রাদেশিক হলেও শনাক্ত করতে পারবে সফ্টওয়্যারটি। শনাক্ত করতে পারলেই সঙ্গে সঙ্গে তা হিন্দি বা ইংরেজিতে অনুবাদ করে দেবে যন্ত্রটি। ফলে অত্যন্ত সহজেই সেনা আধিকারিকরা বুঝতে পারবেন, কেউ দেশবিরোধী কোনও আলোচনা করছে কি না।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নজরদারির জন্য সফ্টওয়্যারের সঙ্গে সঙ্গে বসাতে হবে শক্তিশালী রাডার বা হার্ডওয়্যার। ওই হার্ডওয়্যারটি যাতে ৫০ থেকে ২০০ মিটার পর্যন্ত যে কোনও শব্দ ধরে তা সফ্টওয়্যারকে দেয়, সেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেই শব্দগুলিকেই সফ্টওয়্যার শনাক্ত করবে। সূত্রের খবর, একদিকে, অরুণাচল, সিকিম, লাদাখ, অন্যদিকে, জম্মু ও কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) কিছু জায়গাকে শনাক্ত করে প্রাথমিকভাবে ওই যন্ত্রগুলি বসানো হবে। এতে ফল মিললে যন্ত্রের সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.