সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মৌলানা মাসুদ আজহার। ভারত-পাক তিক্ততা জিইয়ে রাখার নেপথ্যে এই ব্যক্তির অবদান অসীম। জইশ প্রধানকে নিয়ে শুধু ভারতই নয়, মাথাব্যথা বিশ্ব সন্ত্রাসে বিধ্বস্ত সব রাষ্ট্রের। আমেরিকা বহুবার মাসুদ আজহারকে নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসলামাবাদকে। চাপ এসেছে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তরফেও। তা সত্ত্বেও পাকিস্তানের মাটিতে একেবারে খুল্লামখুলা ঘুরে বেড়াচ্ছে জইশ প্রধান। তার বিরুদ্ধে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলি যতবারই ব্যবস্থা নিতে চেয়ে রাষ্ট্রসংঘে প্রস্তাব দেয়, ততবারই ভেটোর জোরে তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে উপমহাদেশের আরেক শক্তিশালী রাষ্ট্র চিন। পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বের জোরেই সম্ভবত বারবার এই পদক্ষেপ। পাক-চিনের এই পারস্পরিক ‘মধুর’ সম্পর্কের জন্য মাসুদ আজহারের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের রাস্তা আরও বিস্তৃত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত-চিন সম্পর্ক আরেকবার ঝালিয়ে নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
গত বছর এপ্রিলে চিন সফররত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউহান প্রদেশে দেখা করেছিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে। একান্তই ব্যক্তিগত সেই বৈঠকে নাকি মাসুদ আজহারকে নিয়ে চিনের অবস্থানে মৃদু আপত্তি তুলেছিলেন মোদি। বোঝানো হয়েছিল, জইশ জঙ্গি এই উপমহাদেশের জন্য কতটা বিপজ্জনক। বারবার ভেটো দিয়ে তার গ্রেপ্তারি আটকে দেওয়া চিনের পক্ষে ঠিক হচ্ছে না বলেও ভারতের তরফে জানানো হয়েছিল। মনে করা হয়েছিল, ব্যক্তিগত ওই বৈঠক থেকেই ভারত যা বার্তা দেওয়ার, তা দিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ধারণা ভুল। চিন যেখানে ছিল, সেখানেই রয়ে গিয়েছে। পুলওয়ামা হামলার পরও জিনপিংয়ের চিন মাসুদ আজহারকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’র তকমা দিতে রাজি হয়নি। চিনের এই ভূমিকার তীব্র নিন্দা করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, আর সৌজন্যমূলক বা ব্যক্তিগত স্তরে নয়। পাকিস্তান নিয়ে চিনের পদক্ষেপ যে ভারতের পক্ষে কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠছে, তা বুঝিয়ে দিতে হবে কড়া ভাষায়। ডোকলাম সীমান্তে চিন সেনার বাড়বাড়ন্তের সময় যেভাবে ভারতের তরফে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছিল, সেই রাস্তাই ফের নিতে হবে নয়া দিল্লিকে।
‘দেশরক্ষায় অন্য সন্তানকেও উৎসর্গ করব’, শপথ শহিদের বাবার
কূটনৈতিক প্রয়োজনে নীতিগতভাবে পাকিস্তানের পাশে চিন। সন্ত্রাস ইস্যুতে পাকিস্তানকে সর্বদাই তুলোধনা করে ভারতের পাশে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের দুই শক্তিধর দেশের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা জিইয়ে রাখতে সহজ সমীকরণে চিন থেকেছে পাকিস্তানের সঙ্গে। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে অর্থনৈতিক হোক বা রাজনৈতিক – চিন থেকে প্রচুর সাহায্য পেয়েছেন। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিস্থিতিতে এক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সন্ত্রাস লালন নিয়ে আরেক প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে কড়া বার্তা দিতে নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে ভারতকে। চিনকে কীভাবে নিজেদের পাশে পাবে ভারত, তা আলাদা স্ট্র্যাটেজি হবে। তবে এই মুহূর্তে বিদেশমন্ত্রক আরও এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে ফের নিষিদ্ধ করার দাবি তুলতে চলেছে রাষ্ট্রসংঘে। যার মূল লক্ষ্য আসলে জইশ-ই-মহম্মদকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করানো। সেই লক্ষ্য পূরণে আবার নতুন করে লড়াই শুরু হচ্ছে ভারতের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.