ফাইল ছবি
সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: কুম্ভমেলার দুর্ঘটনা নিয়ে উত্তাল হতে চলেছে সংসদ। সেই ঘটনার নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা চেয়ে রাজ্যসভায় জোট বাঁধছে ‘ইন্ডিয়া’। ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, আরজেডি, শিব সেনা (উদ্ধব)-এর মত দলের তরফে জমা দেওয়া হয়েছে নোটিস।
শনিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ যখন লোকসভায় বাজেট বক্তৃতা শুরু করছেন, সেই সময়ই সমাজবাদী পার্টি সুপ্রিমো অখিলেশ যাদব তোলেন কুম্ভের ঘটনার প্রসঙ্গ। প্রথা মেনে বক্তৃতার মাঝে তাঁকে বলার অনুমতি দেননি অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। প্রতিবাদে ওয়াক আউট করেন বেশ কয়েকজন বিরোধী দলের সাংসদ। পরবর্তীতে সংসদের বাইরেও সরব হন অখিলেশ। বলেন, “ওরা মুখে যতই হিন্দুত্বের বুলি আওড়াক, প্রমাণ হল যে বাস্তবে বিজেপি হিন্দু বিরোধী। মহাকুম্ভ আবার ১২ বছর পর হবে। আমাদের কাছে মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মারা যাওয়া মানুষের তথ্য বাজেটের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কতজন মারা গিয়েছেন, কতজন নিখোঁজ হয়েছেন বা কতজন আহত হয়েছে তা সরকার বলতে পারছে না। সরকার যে মৃতের সংখ্যা দিয়েছে তা মিথ্যা।”
কুম্ভের ঘটনা নিয়ে বিরোধী সাংসদদের প্রতিবাদ যে এখনই থামছে না, তার ইঙ্গিত মিলেছে রবিবার রাজ্যসভার ২৬৭ নম্বর বিধি মেনে দেওয়া নোটিসে। এর অর্থ, জিরো আওয়ার, প্রশ্নোত্তর পর্ব-সহ দিনের জন্য নথিবদ্ধ অন্য সব কাজ বাতিল করে নোটিসে উল্লেখ করা বিষয়ে করতে হবে আলোচনা। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বিরোধী দলের সাংসদদের দায়ের করা এই ধরনের কোনও নোটিসেই মান্যতা দেওয়া হয়নি। সোমবারও তার অন্যথা হবে না, এমনটাই ধরে নিচ্ছেন ‘ইন্ডিয়া’ সাংসদরা। সেক্ষেত্রে ওয়াক আউট করে সংসদের বাইরে নিজেদের বক্তব্য ও প্রতিবাদ জানাবেন তাঁরা।
সূত্রের খবর, কোনওভাবে যদি বিরোধীদের দাবি মেনে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে উদারতা দেখাতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। উত্তরপ্রদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টিকে নিজেদের জন্য বরাদ্দ সময়ের একটা বড় অংশ দিয়ে দিতে পারে তারা। তবে যদি আলোচনার অনুমতি দেওয়া না হয়, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রকে চাপে ফেলতে ২৬৭ ধারা নিয়ে আলোচনার সাম্প্রতিক অতীতের উদাহরণও তৈরি রাখা হচ্ছে। গত বছরের ২৭ জুলাই দিল্লির এক কোচিং সেন্টারে জলে ডুবে মৃত্যু হয় তিন পড়ুয়ার। সেদিন ছিল শনিবার। ২৯ জুলাই, সোমবার কয়েকজন বিজেপি সাংসদ ২৬৭ বিধিতে নোটিস দায়ের করলে তার উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা মঞ্জুর করা হয়।
এই ঘটনাকে হাতিয়ার করেই বিরোধীরা দাবি তুলবে, যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। তবে যদি তিনজনের মৃত্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তাহলে এত বড় ঘটনা নিয়ে কেন নয়? তার মানে কি শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা তুলে দিল্লির আম আদমি পার্টি সরকারকে বিব্রত করতেই সেই সময় আলোচনার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল? বর্তমানে উত্তরপ্রদেশে নিজেদের সরকারকে আড়াল করতে বিরোধীদের দাবি দমিয়ে দেওয়া হচ্ছে? প্রকাশ্যে বলতে না চাইলেও, তৃণমূলের রাজ্যসভার এক হেভিওয়েট নেতা এই প্রসঙ্গে বলেন, “কুম্ভের ঘটনা নিয়ে মিথ্যাচার করছে বিজেপি। হতাহতের আসল তথ্য গোপন করা হচ্ছে। দেহগুলির ময়নাতদন্ত না করেই পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন রাজ্যে। বলা হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক করে মৃত্যু হয়েছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.