সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ করল ভারত সরকার। প্রতিরক্ষামন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আসন্ন শীতের আগে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (LAC) বরাবর সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও মজবুত করতে বাড়িত ৩০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হবে। জুলাইয়ের শেষে কয়েকটি রাফাল যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা হবে লাদাখে। একইসঙ্গে মালাবার এক্সারসাইজ নৌমহড়া আরও বড় আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হবে ভারত মহাসাগর জুড়ে। এই পরিকল্পনার মধ্যেই আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছেই দু’দিন ধরে যৌথ নৌমহড়া চালাল ভারত ও আমেরিকার নৌবাহিনী।
নৌবাহিনী সূত্রে খবর, নৌমহড়ায় অংশ নিতে দক্ষিণ চিন সাগর থেকে মালাক্কা প্রণালী হয়ে ভারত মহাসাগরে প্রবেশ করে মার্কিন বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ USS Nimitz। পরমাণু শক্তিচালিত বিশ্বের সবচেয়ে ভারী ও বৃহত্তম বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ নিমিজে থাকা এফ–২২, এফ–১৮ যুদ্ধবিমানগু ও অ্যাপাচে কপ্টারগুলি এবং দুটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ার এই মহড়ায় অংশ নেয়। আন্দামান নিকোবর হল ভারতের একমাত্র থিয়েটার কমান্ড। সেখান থেকে মহড়ায় অংশ নেয় ভারতের কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ, কয়েকটি নজরদার বিমান, অনেকগুলি হেলিকপ্টার, অন্তত পাঁচটি সাবমেরিন। যৌথ নৌমহড়ার সফল ও আকর্ষণীয় হয়েছে বলে জানিয়েছে নৌবাহিনী। বিশাখাপত্তনমে নৌবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড থেকে নৌমহড়ার উপর নজর রেখেছিলেন নৌসেনা কর্তারা। ভারতীয় নৌসেনা রিয়ার অ্যাডমিরাল সঞ্জয় বাৎসায়নের নেতৃত্বে এই মহড়ায় অংশ নেয়। দিল্লির সেনা সদর দফতর থেকেও নজর রাখা হয়েছিল মহড়ার উপর। মহড়ার পর আরব সাগর হয়ে পারস্য উপসাগরের দিকে রওনা হয়ে যাবে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ USS Nimitzজ্ ও মার্কিন সেনাদল।
আমেরিকা আগেই জানিয়েছে, দক্ষিণ চিন সাগরকে চিনের আধিপত্য থেকে মুক্ত রাখতেই তারা এতদিন সেখানে মহড়া চালিয়েছে। এরপর তারা ভারত মহাসাগরে মহড়া চালাল। জোড়া মহড়ায় চিনেক তাদের বার্তা, দক্ষিণ চিন সাগরে আন্তর্জাতিক জলসীমা সংযত হয়ে চলতে হবে চিনকে। ভারত মহাসাগরেও চিনা যুদ্ধজাহাজগুলি কোনও অজুহাতেই ঢুকতে পারবে না। চিন বাড়াবাড়ি করলে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে। ভারত-আমেরিকা যৌথ নৌমহড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পরবর্তী মালাবার নৌমহড়ায় ভারত ছাড়াও আমেরিকা, জাপানের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়াও অংশ নেবে বলে আগেই জানিয়েছিল ভারত সরকার। ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সবক’টি সমুদ্রে চিনা নৌবহরকে কোণঠাসা করতেই জোট বেঁধেছে ভারত–আমেরিকা–অস্ট্রেলিয়া–জাপানের নৌবাহিনী। এই চিন বিরোধী সামরিক গোষ্ঠী চতুঃশক্তি জোট বা কোয়াড নামে পরিচিত।
এদিকে, আসন্ন শীতে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি যাতে এলএসি পেরিয়ে লাদাখের কোথাও অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে আগামী ছ’মাস বাড়তি ৩০ হাজার সেনা মোতায়েন করছে ভারত। সেই লক্ষ্যে তাঁবু, ছাউনি তৈরি, সেনা পাঠানো, যুদ্ধাস্ত্র পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে। সেনা সূত্রে খবর, ওই ছ’মাসের জন্যে লাদাখে এখন থেকেই পাঠানো হবে রসদ বোঝাই ছয় হাজার ট্রাক। তাতে থাকবে জওয়ানদের জন্য শুকনো খাবার, গম, ডাল, ওষুধ, শীতনিরোধী গরম পোশাক, ১৫ হাজার কিলোলিটার কেরাসিন তেল। মোট ২০ হাজার টন রেশন যাবে সেনাবাহিনীর জন্য। শীতকালে লাদাখের ওই এলাকাগুলির তাপমাত্রা মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলিসিয়াসের নিচে। এত ঠাণ্ডায় রক্তও জমে যায়। সূত্রের খবর, এই ভয়ঙ্কর আবহাওয়ায় এবং তুষারপাতে জওয়ানদের জীবনহানি রুখতে এবং তাঁদের জন্য সবসময় গরম খাবারের ব্যবস্থা করতেই পর্যাপ্ত জ্বালানি, জেনারেটর, ওষুধ ও পোশাক পাঠানোর পরিকল্পনা ছকে ফেলেছে সেনাবাহিনী। শীতকালে গালওয়ানের মতো সংঘর্ষের ঘটনা রুখতে সেনাবাহিনী পেট্রলিং পদ্ধতি, নজরদারি পদ্ধতি এবং জওয়ানদের নিরাপত্তা ঢেলে সাজাচ্ছে। অন্যদিকে, জুলাইয়ের শেষেই লাদাখে অন্তত চার থেকে ছ’টি রাফাল যুদ্ধবিমান মোতায়েন করার চেষ্টা চালাচ্ছে বায়ুসেনা। এছাড়াও, ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে আদ্যিকালের নিরপেক্ষ বিদেশনীতি পরিবর্তনের সময় এসেছে। বিশ্বে ভারত এখনও বড় একটি শক্তি। তাই সেকথা মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদক্ষেপ করতে হবে দেশকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.