সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চিনের চোখরাঙানিকে ভারত যে আর ভয় করে না, হাবেভাবে সে কথা বুঝিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ জাপানের সঙ্গে ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তিতে সই করলেন প্রধানমন্ত্রী৷ পাশাপাশি, বিতর্কিত দক্ষিণ চিন সাগরে যে কোনও আগ্রাসী শক্তিকে রুখে দিতে ভারত ও জাপান ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে বলেও প্রতিশ্রুতি আদায় তিনি করে নিলেন জাপ প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের কাছ থেকে৷
শুধু তাই নয়, চিনের মাথাব্যথা বাড়িয়ে ইরানে চাবাহার বন্দর নির্মাণেও ভারতকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে জাপান৷ যা বাস্তবায়িত হলে পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান-সহ মধ্য এশিয়ায় নয়াদিল্লির প্রভাব আরও জোরদার হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা৷ পাকিস্তানের বালোচিস্তানে চিনের গ্বদর বন্দরের পাল্টা ইরানে চাবাহার বন্দর গড়ে বেজিংয়ের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিচ্ছে নয়াদিল্লি৷
Taking forward the #IndiaJapan partnership to new https://t.co/KsD0DVC9Pr‘s link to #IndiaJapan joint statementhttps://t.co/DNVA9dV0nf pic.twitter.com/oAFSEa7Ubk
— Vikas Swarup (@MEAIndia) November 11, 2016
এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদি এশিয়ার ভবিষ্যত্ নিয়ে কৌশলগত আলোচনা সেরেছেন জাপ সম্রাট আকিহিতোর সঙ্গে৷ বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ জানিয়েছেন, “হিজ হাইনেস জাপ সম্রাট আকিহিতোর সঙ্গে দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ বিশ্ব রাজনীতি, এশিয়া মহাদেশ, ভারত-জাপান কৌশলগত সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে৷ ভারত-জাপ ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তির ফাঁকে ৮২ বছর বয়সী জাপ সম্রাটের সঙ্গে কথা হয় মোদির৷ সম্রাট আকিহিতো প্রধানমন্ত্রীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন৷ নানা ইস্যুতে তাঁদের মধ্যে অনেকক্ষণ কথা হয়৷ ভারতীয় সভ্যতার ক্রমবিকাশ, ভারতীয় সংস্কৃতি, দুই দেশের মধ্যে বিষয় ও সংস্কৃতিগত মিলগুলি আলোচনায় উঠে আসে৷ আকিহিতোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এই সাক্ষাত্ ছিল বিরল মূহূর্ত৷ এরপর মোদিজি দেখা করেন জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরি এবং বর্তমান বিদেশমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে৷” এদিন জাপান পৌঁছে জাপানি ভাষায় টুইট করেন মোদি৷ বলেন, “জাপানে পৌঁছলাম৷ আশা করি আমাদের আলোচনার ফলে ভারত-জাপান অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে৷”
শুক্রবার সম্রাট আকিহিতোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর জাপ প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদি স্বাক্ষর করেন ভারত-জাপান অসামরিক পরমাণু চুক্তিতে৷ সই করে প্রধানমন্ত্রীর গর্বিত ঘোষণা, আজ থেকে এশিয়ায় নতুন দিগন্ত সূচিত হল৷ এশিয়ার রাজনীতিতে ‘নতুন সূর্যোদয়’ হল৷ এই ভারত-জাপান অংশীদারিত্ব আগামি দিনে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও পরমাণু কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার সুনিশ্চিত করবে৷ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং ভারতের আর্থিক বিকাশে অসামান্য অবদানের জন্য জাপানের মানুষের কাছে ভারতীয়রা কৃতজ্ঞ৷ কৃতজ্ঞতা জানাই জাপ প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে৷ তিনি উদ্যোগ না নিলে এই পরমাণু চুক্তি হত না৷ এনএসজি-র সদস্য পদ পেতে এবং নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্য হতে ভারতে সব সময় সমর্থন করেছে জাপান৷ তাই ভারত জাপানের বিশ্বস্ত বন্ধু হয়েই থাকতে চায়৷
জাপ প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এও ঘোষণা করেন, মুম্বই-আহমেদাবাদ হাইস্পিড ট্রেন করিডোর তৈরির কাজ ২০১৮ সালে শুরু হবে৷ ২০২৩ থেকে ট্রেন পরিষেবা কার্যকর হবে৷ জাপান এই রেল নেটওয়ার্ক তৈরি করবে৷
Firmly in the driver’s seat! PM @narendramodi takes a look inside the driver’s cabin of the bullet train pic.twitter.com/VFN77cOrIa
— Vikas Swarup (@MEAIndia) November 12, 2016
মোদি বলেন, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুক্ত অর্থনীতি হয়ে উঠতে চায়৷ জাপানের পুঁজি ও বিনিয়োগ ভারতে সবসময় স্বাগত৷ ভারত ও জাপান, এশিয়ার এই দুই প্রবল শক্তিশালী অর্থনীতি একসঙ্গে হাত ধরে চললে আগামি দিনে বিশ্বকে শাসন করার ক্ষমতা রাখে৷ শুধু তাই নয়, জাপানের হার্ডওয়্যারের সঙ্গে ভারতের সফটওয়্যার মিললে তা হয়ে উঠবে দুর্দান্ত ও অপ্রতিরোধ্য সৃষ্টি৷ এতে মানব সভ্যতার সামগ্রিক কল্যাণ হবে৷ তাছাড়া দুই দেশই গণতন্ত্র, মুক্ত অর্থনীতি, স্বচ্ছতা এবং আইনের শাসনে বিশ্বাস করে৷ অষ্টাদশ শতকের দখলদারি নীতি, নাগরিক রক্ষণশীলতা, সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে ভারত ও জাপান৷ এই সব নীতিই দুই দেশকে কাছাকাছি এনেছে৷ বলাবাহুল্য, মোদির সমালোচনার তীর ছিল চিন ও পাকিস্তনের দিকে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.