নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করুন। INDIA জোটের মহিলা প্রতিনিধিদের কাছে কাতর আর্জি মণিপুরের ২১ বছরের নির্যাতিতার।
মণিপুরের রাস্তায় দুই উপজাতি মহিলাকে নগ্ন করে হাঁটানোর বীভৎস ভিডিও দেখে সারা দেশের মানুষের হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠেছিল। তাঁদের মধ্যে ২১ বছরের তরুণী, যাঁকে পরে গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল, তিনি এখনও সেই ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। শারীরিক অসুস্থতা খানিক কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন মাত্র। পুলিশের নাম শুনলেই ভেঙে পড়ছেন কান্নায়।
মণিপুরে (Manipur) সফররত ইন্ডিয়া জোটের দুই মহিলা প্রতিনিধি–তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সদস্য সুস্মিতা দেব এবং ডিএমকে-র লোকসভার সদস্য কানিমোঝিকে তিনি জানান, হাজার খানেক মানুষের মধ্যে নগ্ন করে হাঁটানো থেকে শুরু করে গণধর্ষণ–সবটাই সেদিন ঘটেছিল পুলিশের সামনেই। তিনি তাঁদের অনুরোধ করেছেন, “আপনারা তো সাংসদ, দয়া করে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইবেন, ওই পুলিশগুলির কী হবে!”
শনিবার মণিপুর থেকে টেলিফোনে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে তাঁর সারাদিনের অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন সুস্মিতা (Susmita Deb)। এদিন তাঁরা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে দুই নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করতে পেরেছিলেন। সুস্মিতা জানিয়েছেন, “দুই নির্যাতিতাকে আলাদাভাবে গোপন জায়গায় রাখা হয়েছে। সেখানে তাদের শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি কাউন্সেলিংও চলছে। বন্ধ ঘরে প্রায় কুড়ি মিনিট আমাদের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। ৪২ বছরের মহিলা নিজেকে অনেকটা সামলে ফেললেও, ২১ বছরের তরুণী সারাটা সময় কেঁদে গিয়েছেন। আইনজীবীর উপস্থিতিতে দোভাষীর মাধ্যমে কথা বলার সময়ে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, পুলিশ দেখলে তো বটেই, নাম শুনলেও তাঁর ভয় লাগছে বলে কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছেন।”
নির্যাতিতার কথাগুলো এই প্রতিবদককে বলার সময়ে সুস্মিতারও গলা ভারী হয়ে আসছিল। তিনি কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “ভাবতে পারছেন, মেয়েটির মনের অবস্থা কী! মাত্র ২১ বছর বয়েসে চোখের সামনে ভাইকে খুন হতে দেখেছেন। আর তাঁর নিজের সঙ্গে কী অমানবিক নির্যাতন ঘটেছে তা তো সারা দেশই দেখেছে। ভাবলে অবাক লাগছে আমরা এখন মোরাং এ রয়েছি, এখানেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। আর তার আশপাশে এমন দুরবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। কেন্দ্র সরকার, এখানকার বিজেপি সরকার চোখে ঠুলি এঁটে বসে রয়েছে।”
শনিবার সকালে দিল্লি থেকে ইন্ডিয়া জোটের প্রতিনিধিদল মণিপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। তাঁরা বেলা বারোটা নাগাদ ইম্ফলে পৌঁছেই দু’ ভাগ হয়ে গিয়েছিলেন। এক এলাকার গাড়ি অন্য এলাকাতে ঢুকতে পারছে না। সে কারণে ভরসা কেবল হেলিকপ্টার। কিন্তু কপ্টার মিলেছে একটাই মাত্র। একদল পাহাড়ি অঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ কুকিদের সঙ্গে দেখা করে। অন্যদলটি উপত্যকায় মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে দেখা করে। উপত্যকার ইম্ফল থেকে পাহাড়ের চূড়াচাঁদপুর– দুই প্রতিনিধিদল সর্বত্র গিয়েছে। ত্রাণ শিবিরগুলিতে মহিলা ও শিশুদের করুণ পরিস্থিতি দেখে স্তম্ভিত তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.