সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়?’ পরাধীনতার গ্লানি থেকে এদেশ মুক্ত হয়েছে বহু বছর আগেই। কিন্তু একাধিক প্রশ্নের মধ্যেই এখনও দেশজুড়ে চর্চা হয় স্বাধীনতার আসল ‘স্বাদ’ নিয়ে! বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়ায় মণিপুরের মতো কোনও রাজ্য। কিছু মানুষের অথবা কয়েকটি জাতির অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াইয়ের কথা প্রকাশ্যে আসে বারবার। যদিও বরাবর ‘অবহেলিত’ উত্তর-পূর্ব দেশের স্বাধীনতা (Independence Day) আন্দোলনে যে খুব কম ভূমিকা পালন করেনি, একথাও অনুরণিত হয় বারবার। সেই সূত্রেই উঠে আসে রানি গাইডিনলিউয়ের (Rani Gaidinliu) কথা।
যে স্বাধীনতা সংগ্রামীর জীবন নিয়ে একাধিক কল্পনা, সত্যের যাপনের অন্দরেও উঠে আসে সেই সময়ের এক প্রতিবাদী ‘পাহাড় কন্যা’র কথা। বাংলার ক্ষুদিরাম বসুর (Kshudiram Bose) বলিদানের মতোই, উত্তর-পূর্বের রানি গাইডিনলিউও নিরন্তর তৈরি করেন ইতিহাস। কেন?
১৯১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি লুয়াঙ্গকাওয়ে জন্ম নেন গাইডিনলিউ। বর্তমানে যে গ্রামটি মণিপুরের (Manipur) টামেংলং জেলায় অবস্থিত। জাতিতে গাইডিনলিউ (Freedom Fighter Rani Gaidinliu) ছিলেন রংমেই উপজাতির। কিন্তু ছোট থেকেই একাধিক বঞ্চনার কবলে নিজেকে বদলে ফেলেন রানি। পরাধীন ভারত, ব্রিটিশ শাসনের ভয়াল থাবার মধ্যেই গাইডিনলিউ সান্নিধ্যে আসেন উত্তর-পূর্বের হাইপোও জাডোনাঙের (Haipou Jadonang)। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন তিনি। ‘হেরাকা আন্দোলনে’র (Heraka Movement) সঙ্গে যোগ দেন তিনিও। স্বাধীনতা পাওয়ার লড়াইয়ে পরোক্ষে, প্রত্যক্ষে জাতি সত্তার, ন্যায্য অধিকারের লড়াইয়ে যোগ দেন তিনি। নাগাদের অধিকারের লড়াইয়ে শামিল হন তিনি।
Paying tribute to a Naga leader & freedom fighter, Rani Gaidinliu. At a very early age, she joined the Heraka movement to establish the self-rule of the Nagas.
She got the title of ‘Rani’ for her courage & is known as ‘daughter of hills’.#AmritMahotsav pic.twitter.com/WS8TsBOzWJ
— Ministry of Education (@EduMinOfIndia) February 17, 2022
হাইপোওয়ের মৃত্যুর পরে ওই আন্দোলনের মুখ হন তিনি। কিন্তু এখানেই নেমে আসে অন্ধকার। ব্রিটিশদের অত্যাচারের কবলে পড়ে গাইডিনলিউ জেলবন্দি হন। যে আবদ্ধ জীবন তাঁর কাটে ১৯৪৭ সালে। ১৯২৭ সাল নাগাদ হেরাকা আন্দোলনে য়োগ দেওয়ার পর, ১৯৩২-এ মাত্র ১৬ বছর বয়সে গ্রেপ্তার হন তিনি। ১৯৩৭ সালে কংগ্রেস নেতা জহরলাল নেহরুর (Jawaharlal Nehru) নজরে আসেন জেলবন্দি রানি গাইডিনলিউ। নাগাদের ন্যায্য অধিকারের লড়াই, স্বাধীনতার জন্য সব ত্যাগ করা এই কন্যাকে নিয়ে ১৯৩৮ সালে নেহরু লেখেন, ‘ভারতের এই সাহসী পাহাড় কন্যার কথা মনে রাখতে হবে। দেশ তাঁর এই ত্যাগ মনে রাখবেই!’ এর ঠিক একবছর আগে ১৯৩৭-এ নেহরু শিলংয়ের একটি জেলে দেখা করেন গাইডিনলিউয়ের সঙ্গে।
দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীই (Prime Minister of India) তাঁর নাম দেন রানি। প্রায় ১৪ বছর দেশের একাধিক জেলে কাটিয়ে অবশেষে মুক্তি পান তিনি। দেশের এই স্বাধীনতা সংগ্রামী পান পদ্মভূষণ পুরস্কার (Padma Bhushan)। ১৯৯৬ সালে তাঁর সম্মানে কেন্দ্রের তরফে চালু হয় ডাক টিকিট। ২০১৫ সালে রানি গাইডিনলিউকে শ্রদ্ধা জানাতে বিশেষ মুদ্রা প্রকাশ পায়।
মণিপুরের ট্রাইবাল মিউজিয়ামের (Rani Gaidinliu Tribal Freedom Fighters Museum) নাম রাখা হয় তাঁর নামেই। ১৯৯৩ এর ১৭ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন রানি গাইডিনলিউ। কিন্তু সমসাময়িক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তাঁরন সাহসী পদক্ষেপ, লড়াইয়ের কথা আরও উচ্চারিত হয় বারবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.