সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বাংলাদেশের (Bangladesh) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গত বছরের ২৬ মার্চ ঢাকা সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (PM Modi) দাবি করেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ‘সত্যাগ্রহ’ করে জেল খেটেছিলেন তিনি। কিন্তু তথ্যের অধিকার আইনে করা এক প্রশ্নের জবাবে তাঁরই দপ্তর অর্থাৎ পিএমও সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তঁাদের কাছে মোদির গ্রেপ্তারি, জেলে থাকা এবং মুক্তির বিষয়ে কোনও তথ্যই নেই। আরটিআই-এর জবাব উদ্ধৃত করে এমনই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম। এর ফলে আন্তর্জাতিক মহলে প্রধানমন্ত্রী তথা দেশের সম্মান ক্ষুণ্ণ হল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
তিন বছর পর আগামী ৫ সেপ্টেম্বর ভারত সফরে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা। তার আগেই প্রধানমন্ত্রী মোদির দাবি ঘিরে প্রশ্ন ওঠায় অস্বস্তিতে নয়াদিল্লি। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর কথায় বিড়ম্বনা বেড়েছে ঢাকারও।
উল্লেখ্য, মোদির ওই বাংলাদেশ সফর ছিল মূলত প্রতিবেশী দেশটির স্বাধীনতা ও মুক্তির স্মৃতিচারণ। সেইসঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী (মুজিব বর্ষ), ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছরের উদযাপনও ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ওই সফরের অঙ্গ। সেই কারণে মোদির সফরকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল নানা মহলে। কারণ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত তথা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদান ছিল অনস্বীকার্য।
ঢাকা পৌঁছে মোদি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি বলেন, “আমার বয়স তখন ২০-২২ হবে। আমি ও আমার বহু সহকর্মী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সত্যাগ্রহে শামিল হয়েছিলাম। সে জন্য আমায় জেলে যেতে হয়েছিল।’’
মোদির ওই দাবি ঘিরে তখন থেকেই বিতর্ক দানা বাঁধে। অনেকেই তাঁর দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। মোদির ওই দাবির পরেই জয়েশ গুরনানি নামে এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আরটিআই করেন। গুরনানি পাঁচটি বিষয়ে তথ্য চেয়েছিলেন। সংশ্লিষ্ট থানায় দায়ের করা এফআইআর, গ্রেফতার কী অভিযোগে, গ্রেফতারের মেমো বা প্রাসঙ্গিক নথি, জেল থেকে তাঁর মুক্তির নথি এবং যেখানে তাঁকে রাখা হয়েছিল, সেই জেলের নাম। সরাসরি জবাব এড়িয়ে পিএমও জানিয়েছে, ‘রেকর্ডে পাওয়া তথ্যগুলি হাইপারলিংক ‘পিএম’স স্পিচেস-এর অধীনে পিএমও-র ওয়েবসাইটে পাওয়া যেতে পারে।’ তারা আরও জানায়, ২০১৪-য় দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তারা প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করে। জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে গুরনানি মুখ্য তথ্য কমিশনার ওয়াই কে সিনহার কাছে আবেদন করেন। ২০২২-এর ১৮ আগস্ট শুনানি করেও লাভ হয়নি।
তবে এই আবহেই একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ১৯৭১-এর ১ থেকে ১১ আগস্ট একটি সত্যাগ্রহের ডাক দিয়েছিল জনসংঘ। কিন্তু তা ভারত-রাশিয়া বন্ধুত্ব চুক্তির বিরোধিতায় পর্যবসিত হয়। ১২ আগস্ট দিল্লিতে জনসভায় ভাষণ দেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। এই চুক্তি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দিল্লি-মস্কোর চক্রান্ত বলে অভিযোগ করেন তিনি। যুদ্ধের জন্য ভারতের প্রস্তুতি ছিল না, এটাই প্রমাণ করে জনমত গঠন করতে চেয়েছিল জনসংঘ। অসুস্থ বাজপেয়ীর হয়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসরকারি সম্মান গ্রহণ করতে গিয়েও এই সত্যাগ্রহের কথা উল্লেখ করেছিলেন মোদি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.