সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বিহারের মারণ জ্বর ক্রমশ ভায়াবহ পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে। অজানা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে একের পর এক শিশু। শুক্রবার পর্যন্ত এই রোগে মৃত শিশুর সংখ্যা ৬৭। স্থানীয়দের কাছে ‘চামকি বুখার’ বলে পরিচিত এই রোগের উপসর্গ অ্যাকিউট এনসেফেলাইটিসের মতো। এই রোগে আক্রান্তদের তীব্র জ্বর হয়। তার সঙ্গে বমি, খিঁচুনি এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণও দেখা যায়। এখনও পর্যন্ত এই রোগে মৃতরা সকলেই মুজফফপুর শ্রীকৃষ্ণ মেডিক্যাল কলেজ ও কেজরিওয়াল হাসপাতালে ভরতি।
এই মারণ রোগের প্রকৃত কারণ কী, তা অবশ্য এখনও বুঝে উঠতে পারেননি চিকিৎসকরা। তবে তাঁদের বেশির ভাগের মত, এই রোগের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে মুজফফপুরের বিখ্যাত লিচুর। বুধবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার শিশুদের খালি পেটে লিচু খাওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানান অভিভাবকদের। কাঁচা ও আধ পাকা লিচু খাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিহারের স্বাস্থ্য দপ্তরও।
লিচু চাষের জন্য বিখ্যাত বিহারের মুজফফপুর। কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রকের মতে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর লিচুর বাগান আছে এই অঞ্চলে। সেখান থেকে বছরে প্রায় ৩ লক্ষ মেট্রিক টন লিচু উৎপন্ন হয়। প্রতি বছর এই সময়েই গাছ থেকে লিচু পেড়ে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় বাজারে। ডাক্তারদের বক্তব্য, মুজফফপুরে মৃত শিশুদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে কমে গিয়েছে। একে বলা হয়, হাইপোগ্লাইসেমিয়া। ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, এর মূলে মাত্রাতিরিক্ত লিচু খাওয়া। মুজফফপুরের দরিদ্র শিশুরা দিনের একটা বড় অংশ পড়ে থাকে লিচু বাগানে। পাকা লিচুর পাশাপাশি কাঁচা বা আধ পাকা লিচু খাওয়া তাদের কাছে খুব স্বাভাবিক ঘটনা।
দরিদ্র পরিবারে শিশুরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপুষ্টিতে শিকার। তার উপর সারাদিন লিচু খেয়ে অনেক সময়েই রাতের খাবার খায় না তারা। ফলে রাতে ঘুমোনোর সময় হাইপোগ্লাইসেমিয়াতে ভোগে এরা। ডাক্তারদের মতে, লিচুর মধ্যে থাকা বিষাক্ত টক্সিন এবং রাতে খাবার না খাওয়ার ফলেই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। এমনিতে মানুষের শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ লিভারে জমা হয়। শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে লিভার থেকে সেই অতিরিক্ত গ্লুকোজের নিঃসরণ হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। কিন্তু অপুষ্টিতে ভোগা মুজফফরপুরের শিশুদের লিভার থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজের বদলে বিষাক্ত টক্সিনের ক্ষরণ হয়। ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, অনেক সময়েই এই শিশুদের হাসপাতালে নিয়ে যেতেও দেরি করে ফেলেন অভিভাবকরা। অনুমান, শিশু মৃত্যুর কারণ এটাই।
তবে, এই অজানা জ্বরের সঙ্গে লিচুর সম্পর্ক মেনে নিতে রাজি নন স্থানীয় শ্রী কৃষ্ণ মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার গোপাল শংকর সাহনি। তাঁর বক্তব্য, এই অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রির উপরে উঠে গেলে, এবং বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা ৬৫ থেকে ৮৫ শতাংশ হলেই বাড়ে এই জ্বরের প্রকোপ। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য জানাচ্ছেন, বাংলাদেশে এবং ভিয়েতনামের লিচু চাষের এলাকাতেও এমন রোগের প্রকোপ দেখা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.