সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্বাধীনতার পর থেকে বরাবর ভারতের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে কাশ্মীর। ঘরে-বাইরে কাশ্মীর নিয়ে জেরবার হয়েছে ভারত। কখনও কাশ্মীরের মতো করে বিশেষ মর্যাদা পেতে সরব হয়েছে অন্য রাজ্যগুলো, আবার কখনও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে বিঁধেছে ‘শত্রু’ দেশগুলো। তবে ৭৬ বছর পর অবশেষে মিটল সেই সমস্যা। সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) ঐতিহাসিক রায়ে স্বস্তি ফিরল। গোটা ভারত জুড়ে স্থাপিত হল একই আইন, একই বিচার। বিশ্বমঞ্চে ভারতকে বিঁধতেও আর কাশ্মীর অস্ত্রের ব্যবহার চলবে না।
সোমবারই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সংবিধানের ৩৭০ ধারা অস্থায়ী ব্যবস্থা ছিল। এই ধারা বিলোপের অধিকারও ছিল রাষ্ট্রপতির হাতে। ফলে ২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র, সেখানে কোনও ভুল নেই। আগামী দিনে দেশের আর পাঁচটা অঙ্গরাজ্যের মতোই মর্যাদা পেতে চলেছে কাশ্মীর। বিশেষ সংবিধান বা বিশেষ পতাকা, কোনওটাই আর থাকবে না ভারতের সীমান্তবর্তী উপত্যকায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপ্রিম কোর্টের এই ঐতিহাসিক রায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। ভারতের নানা সমস্যা সমাধানে উল্লেখ্য ভূমিকা নেবে এই রায়।
এই ক্ষেত্রে প্রথমেই উঠে আসে সন্ত্রাস প্রসঙ্গ। কাশ্মীরের বিশেষ সংবিধানকে হাতিয়ার করে উপত্যকার জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রতিবেশী পাকিস্তান ও চিনের বিরুদ্ধে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ফাঁকফোকরকে কাজে লাগিয়ে অবাধে নাশকতা চলেছে কাশ্মীরে। কিন্তু সোমবারের রায়ের পর বিশেষ সংবিধান পাকাপাকিভাবে বন্ধ হল উপত্যকায়। ফলে লাগাতার সন্ত্রাসের হাত থেকে মুক্তি পেতে চলেছে ভারত। অন্যদিকে, কাশ্মীরের মতো বিশেষ মর্যাদার দাবিতে বারবার সরব হয়েছে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো। কিন্তু ৩৭০ ধারা বিলোপের পর আর যুক্তিগ্রাহ্য হবে না তাদের দাবি।
কেবল সন্ত্রাস দমন নয়, আরও নানা ক্ষেত্রেই নতুন দিগন্ত খুলে দেবে সুপ্রিম কোর্টের রায়। ৩৭০ ধারা (Article 370) বিলোপের ফলে দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আরও সুদৃঢ হবে। কাশ্মীরের মহিলারা দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকেই নিজের পছন্দের জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পারবেন, পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার না হারিয়েই। অন্যান্য রাজ্যের মতো কাশ্মীরেও সম্পত্তি রাখতে পারবেন আমজনতা। অন্যান্য রাজ্যের মতোই চলবে কাশ্মীরের প্রশাসন। ফলে সাম্য বজায় থাকবে দেশের সমস্ত প্রান্তেই।
শুধু দেশের অন্দরেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে থাকবে নয়াদিল্লি। রাষ্ট্রসংঘের মতো বিশ্বমঞ্চে কাশ্মীর নিয়ে কোনও জবাবদিহি করতে হবে না ভারতকে। পাকিস্তান বা চিন বা তাদের মদতপুষ্ট দেশগুলো মানবাধিকারের প্রসঙ্গ তুলে বিঁধতে পারবে না। কাশ্মীরের হাতিয়ার হাতছাড়া হওয়াতে অবশ্য অন্যান্য বিষয়গুলোতে সরব হতে পারে আন্তর্জাতিক মহল। তার মধ্যে অন্যতম খলিস্তানি প্রসঙ্গ। ইতিমধ্যেই হরদীপ সিং নিজ্জর খুনে ভারতের দিকে আঙুল তুলেছে কানাডা। কাশ্মীর না থাকায় আগামী দিনে এই ইস্যুতে আরও সুর চড়াতে পারে পশ্চিমি দুনিয়া। তবে কাশ্মীর সংক্রান্ত যাবতীয় সমালোচনা বন্ধ করে দিতে পেরেছে নয়াদিল্লি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.